হলদিয়া-পাঁশকুড়ায় পুরভোট
তৃণমূলের ‘জনপ্রিয়তা’র
পরীক্ষা দাসপুরের ভোটে
ড়শি-জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের দুই পুরসভায় ভোট মিটতেই এ বার নজর পশ্চিমের দাসপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে। আর মাত্র ক’দিন পরেই, আগামী ১২ জুন ভোটগ্রহণ দাসপুরে। গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন তৃণমূলের অজিত ভুঁইয়া। তাঁর আকস্মিক প্রয়াণেই উপ-নির্বাচন। লড়াই মূলত অজিতবাবুর বিধবা স্ত্রী তৃণমূল প্রার্থী মমতা ভুঁইয়ার সঙ্গে সিপিএমের যুব-প্রার্থী সমর মুখোপাধ্যায়ের। তবে, বিজেপি ও এক নির্দল প্রার্থীও রয়েছেন আসরে। গত বছর ৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী।
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া ও হলদিয়ার পুরভোটে সেই মনোনয়ন-পর্ব থেকেই যে ভাবে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছেবিরোধীদের মনোনয়নে বাধা, প্রার্থী ও তাঁর সঙ্গীদের মারধর-হুমকি-অপহরণ, প্রচারে বাধা, ফ্লেক্স-ফেস্টুন ছেঁড়াদাসপুরে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও অভিযোগ করেনি বিরোধী সিপিএম। সেখানে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন সিপিএম প্রার্থী। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর চার-চার জন সদস্য দাসপুরের উপ-নির্বাচনে বিশেষ দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা সম্পাদক দীপক সরকার নিজে একাধিক কর্মিসভা করেছেন। বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে এই উপ-নির্বাচন থেকেই জেলায় ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া সিপিএম নেতৃত্ব। বাড়ি-বাড়ি প্রচারও সিপিএম প্রার্থীই সবার আগে শুরু করেছিলেন। খানিক দেরিতে প্রচার শুরু করেছেন বরং তৃণমূল প্রার্থীই। বস্তুত, জেলা ও স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক তৃণমূল নেতা উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তৃণমূল-সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অজিতবাবুর স্ত্রীকেই মনোনীত করেন। যেটা স্থানীয়স্তরের নেতা-কর্মীদের একাংশকে কিছুটা ক্ষুণ্ণ করেছে। তাঁরা প্রচারে তেমন গা লাগাননি বলে দলের ভিতরেই অভিযোগ। প্রকাশ্যে অবশ্য কেউ মুখ খুলছেন না। জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায়ও দলে দ্বন্দ্ব-মনোমালিন্যের কথা মানছেন না।
পাঁশকুড়ায় ইভিএম পরীক্ষা। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
কোনও পক্ষই অবশ্য বড় কোনও সভা এখনও করেনি। তবে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রাজ্যস্তরের একাধিক নেতানেত্রী দাসপুরে প্রচারে আসবেন। সভাও করবেন। এ ক্ষেত্রে সিপিএম আবার ‘ধীরে চলো’ নীতিই নিয়েছে। একেবারে শেষ মুহূর্তে বড় পদযাত্রা বা সভা করতে পারে তারা। তাদের জোর বরং বাড়ি-বাড়ি জনসংযোগেই। সিপিএম নেতারা জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে তাঁরা বাছবিছার করছেন না। তৃণমূল সমর্থকের বাড়ি গিয়েও নিজেদের দলের নীতি-কর্মসূচির কথা বলছেন। কেন এমন সিদ্ধান্ত? জেলা সিপিএমের এক নেতার বক্তব্য, “পরিস্থিতি এখনও প্রতিকূল। বড় সভা হলে সেখানে হয়তো অনেক কর্মী-সমর্থকই আসবেন। সভা সফল হবে। কিন্তু পরে সভায় আসা দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা হবে না, সে গ্যারান্টি তো নেই। পরিবেশ অযথা উত্তপ্ত হোক, চাই না আমরা।”
তবে চলতি সপ্তাহে প্রচার তুঙ্গে উঠলে কী হবেএখনই বলা চলে না। সিপিএমের আশঙ্কা, অন্তত ২০-২৫টি বুথে ‘একতরফা’ ভোট করতে পারে তৃণমূল। এর মধ্যে কামালপুরের ৩টি বুথ, সাহাচকের একটি বুথ এবং দাসপুর ১ ও ২ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি বুথ রয়েছে। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, হার নিশ্চিত জেনেই অজুহাত গেয়ে রাখতে চাইছে সিপিএম। তবে নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনিক প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। ৮ জুনের মধ্যে ৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে আসবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে অতিরিক্ত এক হাজার পুলিশকর্মীও থাকবেন। প্রসঙ্গত, এই বিধানসভা কেন্দ্রে এ বার মোট ভোটার ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩৮৭ জন। মোট বুথ থাকছে ৩০৩টি। থাকবেন ১৪৫৬ জন ভোটকর্মী। ভোটের দিন পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি ও হাওড়া সীমানা লাগোয়া এলাকায় বাড়তি নজরদারিরও বন্দোবস্ত থাকবে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে খবর।
কেমন ফলের আশা করছে দু’পক্ষ? সিপিএম জেলা সম্পাদক দীপক সরকার এই প্রশ্নে সরাসরি কোনও জবাব দেননি। তাঁর বক্তব্য, “প্রচারে সাড়া মিলছে। রাজ্য সরকারের নানা পদক্ষেপের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ-যন্ত্রণা রয়েছে। জনগণই শেষ কথা বলবেন।” জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায়ের অবশ্য দাবি, “দাসপুরের সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। আমাদের প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে কোনও সংশয় নেই।”
হলদিয়ায় ভোটের লাইন। ছবি: আরিফ ইকবাল খান।
গত বার তৃণমূল প্রার্থী অজিত ভুঁইয়া ভোট পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ৯ হাজার ৪৮ (৫৪ ৭৬% ভোট)। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের সুনীল অধিকারী পেয়েছিলেন ৮৪ হাজার ১২১ ভোট (৪২.২৪ % ভোট)। তৃণমূল প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান ছিল ২৪ হাজার ৯২৭ ভোটের। ২০০৬-এর বিধানসভা ভোটেও এই দু’জনই প্রার্থী ছিলেন। সে বার জিতেছিলেন কিন্তু সিপিএমের সুনীলবাবুই। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬১ হাজার ২৯৮ (৪৯.৩ % ভোট)। অজিতবাবুর প্রাপ্তি ছিল ৫৮ হাজার ১২১ ভোট (৪৬.৮ % ভোট)। তৃণমূল প্রার্থী হেরেছিলেন মাত্রই ৩ হাজার ১৭৭ ভোটের ব্যবধানে। সে বার কংগ্রেস আলাদা ভাবে লড়েছিল। কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩.৯ শতাংশ ভোট। জোট হলে এবং কংগ্রেসের ভোট যোগ হলে হয়তো জিততেন অজিতবাবুই। ২০০১-এও তিনিই জিতেছিলেন। পেয়েছিলেন ৫৮ হাজার ২০২ ভোট। সে বারের সিপিএম প্রার্থী চিত্তরঞ্জন মুখোপাধ্যায় ৫৩ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়ে হেরে গিয়েছিলেন মাত্র ৪ হাজার ৩১৯ ভোটের ব্যবধানে। ২০০৯-এর সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনেও দাসপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ‘লিড’ ছিল ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থীরই। তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৮৮ হাজার ৫১৮ ভোট। বাম-প্রার্থী পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ২৯০ ভোট। তৃণমূলের ‘লিড’ ছিল ১০ হাজার ভোটেরও বেশি। ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের অনুকূলে ব্যবধানটা বেড়ে ২৪ হাজার ৯২৭ ভোটের হয়ে যায়। এর মধ্যে ২০০৮-এর ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মধ্যে দাসপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতিই একমাত্র, যেখানে জিতেছিল তৃণমূল।
—নিজস্ব চিত্র
সব মিলিয়ে তাই বেশি আশাবাদী তৃণমূলই। তবে, সিপিএম তথা বামফ্রন্ট এ বার ব্যবধান কমিয়ে আনতে মরিয়া। এমনিতে সীমানা পুনর্বিন্যাসে পূর্বতন নন্দনপুর বিধানসভা কেন্দ্রটি অবলুপ্ত হওয়ায় তার একাংশ এলাকা দাসপুরে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে (দাসপুর-২ ব্লক ও দাসপুর-১ ব্লকের বাসুদেবপুর, দাসপুর-১, দাসপুর-২, নন্দনপুর-১, নন্দনপুর-২, পাঁচবেড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে এখন এই বিধানসভা)। ফলে, ২০০৯-এর লোকসভা ভোটের সময় থেকেই ভোটার বেড়েছে। ২০০১ বা ২০০৬-এর বিধানসভা ভোটে তিন-চার হাজার ভোটের ব্যবধান ২০১১-য় এসে অনেক বেশি হওয়ার সেটাও কারণ বলে ধরছেন সিপিএম নেতারা। ব্যবধান কমিয়ে ফেলাটাই তাঁদের আশু লক্ষ্য। সেই সঙ্গে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ‘জনতার ক্ষোভ’ কতটা তৈরি হয়েছে, সিপিএমের কাছে সেটা মেপে নেওয়ারও সুযোগ এই উপ-নির্বাচন। আর তাদের ‘জনপ্রিয়তা’ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার এক বছর পরেও কতটা অটুটতার পরীক্ষা তৃণমূলের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.