গরমের দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে সবে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন হাওড়ার চ্যাটার্জিহাটের কেটারিংয়ের ব্যবসায়ী সমীরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। হঠাৎ শুনলেন সিঁড়িতে কয়েক জনের পায়ের আওয়াজ। পরমুহূর্তে দেখলেন, ঘরের পর্দা সরিয়ে ঢুকে পড়ল সশস্ত্র ডাকাতের একটি দল। কারও হাতে রিভলভার, কারও হাতে ভোজালি। কয়েক জনের মুখ রুমাল দিয়ে বাঁধা। সমীরণবাবুর মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ডাকাতি করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। হাওড়ায় পুলিশ কমিশনারেট হওয়ার পরেও দিনেদুপুরে এ রকম ঘটনা ঘটায় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ও শহরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যে ভাবে দিনের বেলায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ঘণ্টাখানেক ধরে ডাকাতি হয়েছে, তাতে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশি টহলদারি নিয়েও।
পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার শিবপুর থানা এলাকার চ্যাটার্জিহাটের বিনোদবিহারী হালদার লেনের ওই ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ডাকাতেরা নগদ আড়াই লক্ষ টাকা ও প্রায় তিন লক্ষ টাকার সোনার গয়না লুঠ করে পালায়। এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। হাওড়ার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার নিশাদ পারভেজ বলেন, “কিছু সূত্র মিলেছে। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। কমিশনারেট হওয়ার পরে গোটা হাওড়ায় পুলিশি টহলদারি বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলারও উন্নতি হয়েছে। আশা করছি, শীঘ্রই এই ডাকাতির ঘটনার কিনারা হবে।” |
সমীরণবাবুর বাড়িটি তিনতলা। একতলায় কেটারিংয়ের অফিস। ঘটনার সময়ে সেখানে চার জন কর্মী ছিলেন। পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীরা দুই জনকে বন্দুক দেখিয়ে অফিসঘরে আটকে রাখে। বাকি দু’জনকে নিয়ে যায় দোতলায়। দোতলায় তখন খাওয়া দাওয়া সেরে শুয়ে ছিলেন সমীরণবাবু। তিনি বলেন, “আমি একটা ঘরে মেঝেতে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি জনা পাঁচেক যুবক এসে ঢুকল। এক জন মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে আলমারির চাবি চায়।” চাবি না পেলে সমীরণবাবুকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। সমীরণবাবু জানান, যুবকেরা হিন্দিতে কথা বলছিল।
এর মধ্যে কয়েক জন ডাকাত উঠে যায় তিনতলায়। সেখানে ছিলেন সমীরণবাবুর স্ত্রী স্বাগতাদেবী। তাঁর কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে তাঁকে ঘরে আটকে রাখে ডাকাতদল। পুলিশ জানিয়েছে, আলমারি খুলে দুষ্কৃতীরা আড়াই লক্ষ টাকা ও কয়েক ভরি সোনার গয়না লুঠ করে। আংটি, ঘড়ি ও মোবাইলও ছিনিয়ে নেয়। এর পরে ঠাকুর ঘরে গিয়ে ক্যাশবাক্স ভেঙে আরও কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সমীরণবাবু, স্বাগতাদেবী ও তাঁদের কর্মচারীদের শৌচাগারে আটকে বাড়ির সামনের দরজা দিয়েই পালিয়ে যায় তারা। পুলিশের অনুমান, ডাকাতদল মোটরবাইকে চেপে এসেছিল।
এ দিকে, ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দুষ্কৃতী-তাণ্ডব চললেও সমীরণবাবুর প্রতিবেশীরা কেউ কিছু টের পাননি বলে জানিয়েছেন। পুলিশের অনুমান, এই ঘটনায় সমীরণবাবুর পরিবারের পরিচিত কেউ জড়িত। ডাকাতদের মধ্যে চার জনের মুখ ছিল রুমাল দিয়ে বাঁধা, এক জন হেলমেট পরে ছিল। বাকিদের মুখ খোলা ছিল। পুলিশের অনুমান, এই দুষ্কৃতীদলটি টিকিয়াপাড়া বা বাঁকড়া এলাকা থেকে এসেছিল। দলের প্রত্যেকেরই বয়স কুড়ি থেকে পঁচিশের মধ্যে। |