তারকেশ্বর-আরামবাগ ট্রেন চালু হচ্ছে আজ
বশেষে আজ, সোমবার ভারতীয় রেলের মানচিত্রে ঢুকে পড়ছে আরামবাগ।
তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেল সংযোগ প্রকল্পেই সংযুক্ত হচ্ছে আরামবাগ। আজ বিকেলে তারকেশ্বর-আরামবাগের (২৪.৫ কিলোমিটার) মধ্যে রেল যোগাযোগের উদ্বোধন করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, বিদ্যুদয়নের কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় এখনই এক ট্রেনে হাওড়া-আরামবাগের মধ্যে যাতায়াত করা যাবে না। হাওড়া-তারকেশ্বরের মধ্যে এখন ইএমইউ ট্রেন চলে। কিন্তু তারকেশ্বর-আরামবাগের মধ্যে বিদ্যুদয়নের কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় ওই পথে ডিজেল ইঞ্জিন চালিত ট্রেন চলবে বলে পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। অর্থাৎ, হাওড়া-আরামবাগের মধ্যে যাতায়াত করতে হলে তারকেশ্বরে ট্রেন বদলাতে হবে।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “আপাতত তারকেশ্বর-আরামবাগের মধ্যে চলাচলের জন্য আমরা দু’জোড়া ডিজেল-ইঞ্জিন চালিত ট্রেন রাখছি। আশা করছি, চলতি বছরের অগস্ট মাসের মধ্যে বিদ্যুদয়নের কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন ওই পথে ইএমইউ ট্রেন চালানো যাবে।”
হাওড়ার সঙ্গে রেল সংযোগের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় এখন খুশিতে ভাসছেন আরামবাগের বহু মানুষ। রবিবার বিকেল থেকেই বহু মানুষ ভিড় করছেন আরামবাগ স্টেশনে। ২০০১ সালে এনডিএ সরকারের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তারকেশ্বর থেকে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর এই ৮২.৫ কিলোমিটার রেল প্রকল্পের শিল্যন্যাস করেন। কিন্তু তার পরে তিনি ওই পদ থেকে সরে গেলে প্রকল্প গতি হারায়। ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের এই প্রকল্পে গুরুত্ব দেন। অর্থ বরাদ্দও বাড়ানো হয়। তার পরেই প্রকল্পের কাজে গতি আসে।
তারকেশ্বর এবং বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর পূর্ব রেল দু’প্রান্ত থেকেই রেলপথ তৈরির কাজ শুরু করে। বছর খানেক আগে একই দিনে তারকেশ্বর-তালপুর এবং বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর-গোকুলনগরের মধ্যে ১৭ কিলোমিটার পথে ট্রেন চলাচলের সূচনা করেছিলেন মমতা। এ বার তারকেশ্বর-আরামবাগের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। তারকেশ্বর থেকে আরামবাগের মধ্যে পড়ছে তিনটি স্টেশন তালপুর, তকিপুর এবং মায়াপুর। পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে গোটা প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৪৭৯.২০ কোটি টাকা। পরে তার পরিমাণ বেড়ে হয় ৫৫০ কোটি। তালপুর-আরামবাগ পথে কাজের জন্য ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই ২০ কিলোমিটার পথে দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী এবং কানা নদীর উপর সেতু নির্মাণও হয়। আপাতত, তারকেশ্বর-আরামবাগ এই পথে ‘সিঙ্গল লাইন’-এ ট্রেন চলাচল করবে। পরে ‘ডাবল লাইন’ করা হবে।
প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে তৃণমূল নেতারা। নিজস্ব চিত্র।
আজ, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও রেলমন্ত্রী মুকুল রায়-সহ দলের বেশ কয়েক জন মন্ত্রী-বিধায়ক থাকছেন। তবে, গোটা প্রকল্পে গোঘাটের কামারপুকুর সংলগ্ন এলাকা এবং বাঁকুড়ার জয়রামবাটি ও আশপাশের এলাকার জমি অধিগ্রহণের সমস্যা চিন্তায় রেখেছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। দিন কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডানকুনিতে রেলের একটি কারখানা উদ্বোধন করতে গিয়ে সেই সমস্যার কথা উল্লেখ করে তা মেটানোর দায়িত্ব দেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়কে।
আরামবাগ থেকে গোঘাটের কামারপুকুর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পথের জমি অধিগ্রহণ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। নির্মাণকাজও চলছে। অন্য প্রান্তে রেললাইন পাতা হয়ে গিয়েছে গোকুলনগর থেকে বাঁকুড়ার ময়নাপুর পর্যন্ত। সমস্য দেখা দিয়েছে মাঝের জায়গাটিকে ঘিরে। কামারপুকুর সংলগ্ন গোঘাট-২ ব্লকের অমরপুর মৌজায় ইতিমধ্যে জমির ‘ন্যায্য’ দামের দাবিতে তৃণমূলের নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছে ‘রেল চালাও, গ্রাম বাঁচাও কমিটি’। কমিটির পক্ষ থেকে সম্প্রতি দাবিপত্র জমা দেওয়া হয় বিডিওকে। তবে, ‘ন্যায্য’ দাম না পেলেও কোনও আন্দোলন বা রেলপথ নির্মাণে বাধা দেওয়া হবে না জানিয়ে ওই কমিটির সম্পাদক তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা ফটিক কাইতি বলেন, “কামারপুকুর মৌজার বাসিন্দারা কাঠাপ্রতি ৯৬ হাজার টাকা দাম পেয়েছেন। আমাদের কাঠাপ্রতি প্রায় ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। সেই কারণেই আমরা ন্যায্য দাম চাইছি। রেলমন্ত্রীকেও সে কথা জানিয়েছি।” গোঘাটের তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন পাল কমিটির সদস্যদের দলীয় কর্মী-সমর্থক মেনে নিয়ে বলেন, “অমরপুরের মানুষদের দাবি একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার নয়। বিষয়টি বিবেচনার জন্য দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানিয়েছি।” অন্য দিকে, বাঁকুড়ার জয়পুরে বন দফতরের জমি নিয়ে সমস্যা মিটলেও গোপীনাথপুর এবং জয়রামবাটি এলাকার কিছু কিছু জায়গায় বাসিন্দারা জমির বদলে পরিবারের এক জনের রেলের চাকরির দাবি তুলছেন।
রেলকর্তারা অবশ্য জরুরি ভিত্তিতে সমস্যা মেটাতে চাইছেন। পূর্ব রেলের এক কর্তা বলেন, “হুগলিতে এই প্রকল্পে ৪৪৫.৬৭ একর জমি লাগবে। অর্ধেক জমিই আমাদের হাতে চলে এসেছে। একই সঙ্গে বাঁকুড়ায় ২৮৬.০৭ একর জমি লাগবে। ইতিমধ্যেই ১৪৫.৫৭ একর জমি রেলের হাতে এসেছে। গোঘাট-২ ব্লকের সমস্যা নিয়ে রেল ওয়াকিবহাল। এলাকা অনুযায়ী, শুনানি করেই জমির দাম স্থির করেছে রেল। আমাদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের কথা চলছে। আশা করি বিষয়টি মিটে যাবে।” আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ গোটা প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা বলে পূর্ব রেল জানিয়েছে। এখন দেখার, জমি-সমস্যা মিটিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে সেই কাজ পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ করতে পারেন কিনা!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.