কেরলে বাম রাজনীতির দ্বন্দ্বে এ বার জড়িয়ে গেল এ রাজ্যের ‘পরিবর্তনপন্থী’ বিশিষ্ট লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর নাম। তাঁর উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখে সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানালেন কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন। কমিউনিস্ট-বিরোধী ‘অপপ্রচারে’ কান না-দেওয়ার জন্য বর্ষীয়ান লেখিকাকে আহ্বান জানিয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বিজয়ন।
প্রাক্তন সিপিএম এবং অধুনা আরএমপি নেতা টি পি চন্দ্রশেখরন খুন হওয়ার পর থেকে গত এক মাস যাবৎ প্রবল আলোড়ন চলছে কেরলের বাম রাজনীতিতে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজয়ন এবং বিরোধী দলনেতা ভি এস অচ্যুতানন্দনের বিরোধ চরমে উঠেছে। ভি এস রাজ্যের সিপিএম নেতৃত্বকে ঢেলে সাজার আর্জি জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটকে চিঠি দিয়েছেন, বিজয়নের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় বসার পরেও শনিবার নিহত টি পি-র বাড়িতে ঘুরে এসে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছেন। সিপিএমের ইদুক্কি জেলা সম্পাদক এম এম মনি এই তপ্ত আবহে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছেন তাঁর ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যে, যেখানে তিনি বলেছেন ভিন্নমতাবলম্বীদের ‘নিকেশ’ করে দেওয়ার রেওয়াজ কমিউনিস্ট পার্টিতে আছে। ওই মন্তব্যের জন্য মনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে সিপিএম পলিটব্যুরো। এরই মধ্যে কেরল গিয়ে এবং মনির কিছু মন্তব্যের সমালোচনা করে বিজয়নের ‘ক্ষোভে’র কারণ হয়েছেন মহাশ্বেতা।
সিপিএম সূত্রের খবর, কেরলে শোরগোল চলাকালীনই নিহত টি পি-র বাড়িতে গিয়েছিলেন মহাশ্বেতা। খুনোখুনির তত্ত্ব থেকে কমিউনিস্টদের সরে আসার আহ্বান জানান তিনি। যার জন্য মনি আবার তাঁকে কটাক্ষ করেন। সিপিএম সূত্রের দাবি, এর জেরেই মহাশ্বেতা দলের রাজ্য সম্পাদক বিজয়নকে খোলা চিঠি লিখে আর্জি জানান, তাঁর ‘প্রাসাদ’ থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণ মানুষ এবং কর্মীদের কথা শুনুন। যদিও মহাশ্বেতা এমন কোনও খোলা চিঠির কথা স্বীকার করেননি। বিজয়ন তাঁর খোলা চিঠিতে বলেছেন, তিনি কোনও ‘প্রাসাদে’ বাস করেন না! দলের অনুমতি নিয়েই তিনি তাঁর বাড়ি ‘সংস্কার’ করেছেন। তবে সেই বাড়ি কোনও ‘দ্বীপে’ অবস্থিত নয়! দলের অগণিত কর্মী বা যে কোনও মানুষের মতো মহাশ্বেতার জন্যও তাঁর বাড়ির দরজা খোলা আছে। বর্ষীয়ান লেখিকা সেখানে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বললে অনেক ‘ভ্রান্ত ধারণা’র অবসান ঘটতে পারে। কমিউনিস্ট-বিরোধী ‘অপপ্রচারে’ একতরফা ভাবে বিশ্বাস না-করে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের খুন হওয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখতে মহাশ্বেতাকে অনুরোধ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা থেকে বাম-বিদায়ের পরে এই রাজ্যে ৬৫ জন বামপন্থী কর্মী-সমর্থকের নিহত হওয়ার কথাও কৌশলে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, ‘পরিবর্তনপন্থী’ হলেও সাম্প্রতিক কালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বেশ কিছু কাজ কর্মের সমালোচক মহাশ্বেতা। তাঁর সুপারিশ-করা এক জনকে বিদ্যাসাগর পুরস্কার না-দেওয়ায় বাংলা আকাদেমির চেয়ারপার্সনের পদ ছাড়তে চেয়েছিলেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে রবিবার মহাশ্বেতা বলেন, “চন্দ্রশেখরন খুন হওয়ার পরে কেরল গিয়েছিলাম। তখন যিনি আমার সঙ্গে ছিলেন, তিনি এবং স্থানীয় বাসিন্দারা আমাকে গোটা ঘটনার কথা বলেন। কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগও তাঁদের মুখেই শুনতে পাই।” তার ভিত্তিতেই তাঁর মতামত প্রকাশ করেছিলেন বলে জানিয়ে মহাশ্বেতার বক্তব্য, “বিজয়নের চিঠির কথা জেনেছি। এর পরে আমার যা করার করব।” |