২০১৪ সালের লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পদ্ধতিতে বদলের দাবি তুলল বিজেপি। প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী আজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে চিঠি লিখে যুক্তি দিয়েছেন, এখন যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়, তাতে ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছাই প্রাধান্য পায়। তার বদলে সরকার, প্রধান বিচারপতি ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের তৈরি ‘কলেজিয়ামে’র মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের দাবি করা হোক বলে দাবি জানিয়েছেন তিনি।
 চলতি মাসেই বর্তমান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি অবসর নিচ্ছেন। তাঁর বদলে নতুন যিনি ওই পদে আসবেন, তিনিই পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন পরিচালনা করবেন। সাংবিধানিক এই পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘স্বচ্ছতা’ আনার দাবি তুলে আজ সরকারকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেছেন আডবাণী। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বামেরাও এ বিষয়ে বিজেপির সঙ্গে এক মত। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে একই দাবি জানান সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত। আডবাণী-সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। এ বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীন পট্টনায়েক এবং জয়ললিতাকেও চিঠি লিখবেন বলে জানিয়েছেন গুরুদাস। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উপরে চাপ তৈরির জন্য সংসদের আগামী অধিবেশনের আগে সব দলকে এককাট্টা করাই বাম-বিজেপি নেতাদের উদ্দেশ্য। যদিও কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, বিজেপি নেতৃত্বের অন্তর্কলহ থেকে নজর ঘোরাতেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন আডবাণী। সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত বলেন, “উনি নিজের সাম্প্রতিক ব্লগ থেকে নজর ঘোরাতে চাইছেন। উনি খুব ভাল করেই জানেন যে, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবেই চলছে।”
শুধু নির্বাচন কমিশনার নয়, সিএজি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই ভাবে স্বচ্ছতা আনার দাবি তুলেছেন আডবাণী। তাঁর বক্তব্য, বর্তমান সিএজি বিনোদ রাই ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে অবসর নেবেন। সেই পদে নির্বাচনের জন্যও একটি কলেজিয়াম আগে থেকেই তৈরি করে রাখা হোক। এ প্রসঙ্গে গুরুদাসের বক্তব্য, “টু-জি স্পেকট্রাম থেকে কয়লার ব্লক বণ্টন সিএজি-র একের পর এক রিপোর্ট মনমোহন-সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। কাজেই এই পদে নিরপেক্ষ ব্যক্তির নির্বাচন যথেষ্ট স্পর্শকাতর বিষয়।”
সাংবিধানিক পদগুলির মধ্যে সিভিসি (মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার) পদে নিয়োগের জন্য তিন সদস্যের কমিটি রয়েছে। এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বিরোধী দলনেত্রী রয়েছেন। কিন্তু মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বা সিএজি নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের সুপারিশের ভিত্তিতেই তা করা হয়। আডবাণীর যুক্তি, “এর ফলে ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছার উপরেই এই সাংবিধানিক পদে নিয়োগ নির্ভর করছে। কিন্তু দেশের মানুষ চান, এই ধরনের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা যাতে বজায় থাকে।” এর আগে সুষমা স্বরাজের আপত্তি সত্ত্বেও সিভিসি পদে পি জে টমাসকে নিয়োগ করা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত টমাসকে সরে দাঁড়াতে হয়। আডবাণীর যুক্তি, কয়েক বছর আগে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পদে একটি ‘সন্দেহজনক’ নিয়োগের সময়ও গোটা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তাই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কলেজিয়াম গঠন করার দাবি তুলেছেন আডবাণী। সেখানে প্রধানমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী ছাড়াও লোকসভা ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা-নেত্রীকে রাখা হোক। এ জন্য সংবিধানের ৩২৪ নম্বর অনুচ্ছেদও প্রয়োজন মতো সংশোধন করার দাবি জানান তিনি। কংগ্রেস অবশ্য কোনও ভাবেই আডবাণীর যুক্তি মানতে নারাজ। হরিশ রাওয়াতের বক্তব্য, “আমাদের নির্বাচন কমিশন গোটা বিশ্বে প্রশংসিত। যে ভাবে কমিশন সমস্ত ভোট পরিচালনা করেছে, তাকে আমাদের কুর্নিশ করা উচিত।” |