কার্যকরী লোকপাল বিল পাশ এবং বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধারের দাবি নিয়ে ফের এক মঞ্চে এলেন অণ্ণা হজারে ও রামদেব। সেই মঞ্চ থেকেই অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে কেন্দ্র করে মতপার্থক্যেও জড়িয়ে পড়ল দুই শিবির। পরে দু’পক্ষই ‘তুচ্ছ ঘটনা’ বলে বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও লড়াইয়ের শুরুতে এই বাদানুবাদে নেতিবাচক বার্তা গেল বলেই মনে করা হচ্ছে।
দিল্লির রামলীলা ময়দানে রামদেবের অনশন-সত্যাগ্রহের এক বছর পূর্তি আগামিকাল। তারই প্রাক্কালে আজ দিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানার সামনে এক দিনের প্রতীকী অনশনে বসেছিলেন রামদেব। দিন সাতেক আগে প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ১৫ জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা টিম অণ্ণাও এই অনশনের সমর্থনে এগিয়ে আসে। আজ প্রায় গোটা দিনই অনশনস্থলে উপস্থিত ছিলেন অণ্ণা নিজে। দিল্লির তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে অনশনস্থলে ভিড়ও কিছু কম ছিল না। অনশন মঞ্চ থেকে রামদেব-অণ্ণা দু’জনেই অবিলম্বে এক কার্যকরী লোকপাল বিল পাশ করানো এবং কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি তোলেন। সুর কাটল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বক্তৃতাকে ঘিরে। |
একতার আলিঙ্গন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনশন কমর্সূচিতে একসঙ্গে
রামদেব এবং অণ্ণা হজারে। রবিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই |
রামদেব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিতর্ক এড়াতে মঞ্চ থেকে কোনও রাজনৈতিক নেতার নামে অভিযোগ করা হবে না। কিন্তু কার্যত তা উপেক্ষা করেই কেজরিওয়াল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য-সহ মায়াবতী, লালুপ্রসাদ বা মুলায়ম সিংহের মতো নেতাদের নামে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তা ইচ্ছাকৃত ভাবে উপেক্ষা
করে কেজরিওয়াল দুই শিবিরের বিভেদকে কার্যত স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকেই। নিজের বক্তব্য শেষ করেই মঞ্চ থেকে চলে যান কেজরিওয়াল।
পরে অবশ্য রামদেব বলেন, “অরবিন্দের শরীর খারাপ ছিল তাই তিনি অণ্ণা ও আমার অনুমতি নিয়ে মঞ্চ থেকে চলে যান।” আর রাজনৈতিক নেতাদের নামোল্লেখ? “বিতর্ক চাই না বলে কোনও নেতার নাম নেব না বলে ঠিক করেছিলাম। বক্তব্যের প্রাসঙ্গিকতা বোঝাতে কেজরিওয়াল কিছু নেতার নাম করেছেন। এই নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই।” রামদেব ও অণ্ণা দু’জনেই দাবি করেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা একসঙ্গে রয়েছেন। অণ্ণা শিবিরের আর এক সদস্য কিরণ বেদিও দাবি করেন, বিতর্ক অর্থহীন। তাঁদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই।
গত কয়েক মাস ধরে অভ্যন্তরীণ কলহে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিল টিম অণ্ণা। মাঝখানে বেশ কিছুদিন চুপ থাকার পরে যে ভাবে দুই শিবির আবার হাত মিলিয়েছে, তাতে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে কংগ্রেস শিবির। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে যে ভাবে টিম অণ্ণাকে ফের প্রাসঙ্গিক করে দিয়েছে, তাতে কংগ্রেসের একাংশই এখন ক্ষুব্ধ। আজ অণ্ণার আন্দোলন নিয়ে সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত বলেন, “আন্দোলনের নামে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করার চেষ্টা করা হলে দেশ তা মেনে নেবে না।”
রামদেব অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলির মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই এগোতে চাইছেন। যাতে সংসদীয় ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করার অভিযোগ কংগ্রেস তুলতে না পারে। গত কাল তিনি কথা বলেছেন বিজেপির সভাপতি নিতিন গডকড়ী ও জেডিইউ নেতা শরদ যাদবের সঙ্গে। রামদেব আজ বলেন, “আগামী কাল গডকড়ীর সঙ্গে আমার বৈঠক রয়েছে। চন্দ্রবাবু নায়ডুও এই লড়াইকে সমর্থন জানিয়েছেন।” তিনি দাবি করেন, কালো টাকা ও লোকপালের প্রশ্নে তিনি লালুপ্রসাদ-সহ অন্য দলের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলবেন। |