পুরভোট মিটল শান্তিতেই। কোথাও হিংসা নেই। রক্তঝরা নেই।
কিন্তু, দিনের শেষে সন্ত্রাসের অভিযোগকে ঘিরেই সরগরম রইল নলহাটি। অভিযোগের কাঠগড়ায় মূলত তৃণমূল। অভিযোগকারী বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সমাজবাদী পার্টি সুব্রত দত্তের গ্রেফতারিকে ঘিরেই এ দিন আবর্তিত হল বামেদের অভিযোগ। আর কংগ্রেস নেতৃত্ব সামগ্রিক ভাবেই শরিক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ তুলেছে।
এ দিন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, কংগ্রেস, ফরওয়ার্ড ব্লক, বিজেপিসব দলের কর্মী-সমর্থকেরা এক দিকে। অন্য দিকে তৃণমূলের লোকজন। প্রতীকী? হতে পারে। যদিও নলহাটির বর্তমান পুরপ্রধান, তৃণমূলের বিপ্লব ওঝার (৮ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছেন) দাবি, “আমাদের আশা মতো ফল হবে। বোর্ড আমরাই দখল করব।” ১৫টি ওয়ার্ডেই তাঁরা জিতবেন বলে দাবি করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও। ভোটের হার (৮৭ শতাংশ) দেখে অবশ্য বাম-শিবির কিঞ্চিৎ খুশি। তাদের দাবি, এই ভোট প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেও নলহাটির কংগ্রেস বিধায়ক অভিজিৎবাবুর দাবি, “যাই হোক কংগ্রেসের ভাল ফল হবে।”
সন্ত্রাস নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর যতই থাক, ঘটনা হল এ দিন ভোট নির্বিঘ্নেই হয়েছে নলহাটিতে। রোদ উপেক্ষা করেই সকাল থেকে ভোট দিয়েছেন এই পুর-শহরের বাসিন্দারা। অনেক কেন্দ্রে তো দুপুরেই ভোট শেষ হয়ে যায়। তবে ১, ৫, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিকেল ৩টে পরেও ভোট পড়েছে। বীরভূমের পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়েছে। কোথাও গণ্ডগোলের খবর নেই।” |
গণ্ডগোল হয়েছে। তবে, ভোটের আগের রাতে। যার জেরে গ্রেফতার হতে হয়েছে খোদ প্রার্থীকেই। বর্তমান পুরপ্রধান যে দু’টি ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছেন, সেখানে শুক্রবার রাতে ভোটারদের টাকা দিয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে তৃণমূল এবং ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এই মর্মে শুক্রবার রাতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নলহাটি থানায় অভিযোগও দায়ের করেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাম প্রার্থী, সমাজবাদী পার্টির সুব্রত দত্ত। শনিবার রাতে ফের তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় সমাজবাদী দলের কর্মীদের। সুব্রতবাবুর সঙ্গে তৃণমূলের বচসাও বাধে। সুব্রতবাবু তৃণমূলের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের পার্টি অফিস পোড়ানো এবং মারধরের পাল্টা অভিযোগ থানায় করে তৃণমূল। গভীর রাত পর্যন্ত করিমপুর রেললাইনের ধারে বোমার ঝোলা হাতে অচেনা লোকেদের আনাগোনাও দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুলিশ ওই রাতেই গত দু’বারের জয়ী কাউন্সিলর (২০০২ ও ২০০৭) সুব্রতবাবুকে গ্রেফতার করে। ধরা হয় তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট-সহ সমাজবাদী পার্টির পাঁচ কর্মীকে। তৃণমূলের কেউ অবশ্য ধরা পড়েনি। রবিবার ভোটের দিন সুব্রতবাবু জামিন পান। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নিজের বুথে গিয়ে ভোটও দেন। এই সূত্রেই জেলা বাম নেতৃত্ব তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস এবং পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন।
ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এমন সন্ত্রাস নলহাটিবাসীর এই প্রথম প্রত্যক্ষ করলেন। তার পরেও মানুষ যে ভাবে স্বতঃস্ফূর্ত ভোটদান করেছেন, তাতে আমরা ভাল ফলের ব্যাপারে আশাবাদী।”
বামেদের সুরেই সন্ত্রাস নিয়ে সরব কংগ্রেস নেতৃত্বও। জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মির অভিযোগ, “রামপুরহাট মহকুমা এলাকার মধ্যে নলহাটিতে গত কাল রাতে তৃণমূল যে ভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে, তা অত্যন্ত নক্কারজনক। নলহাটিবাসীর কাছে এটা নতুন অভিজ্ঞতা। লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভোট কেনা যায় না তার জবাব আগামী মঙ্গলবার তৃণমূল নেত্রী জানতে পারবেন।” জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল অবশ্য সন্ত্রাসের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পুরভোটকে ঘিরে কংগ্রেস-তৃণমূল তিক্ততা চরমে পৌঁছেছে। রেলের রোড-ওভারব্রিজের শিলান্যাসে অভিজিৎবাবুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে অভিজিৎবাবুকে কটাক্ষ করেছেন জেলার একাধিক তৃণমূল নেতা ও বিধায়ক। এ দিন সেই প্রেক্ষিতেই অভিজিৎবাবুর পাল্টা কটাক্ষ, “আমার লড়াই মুকুল রায়ের সঙ্গে। আমি একটি সর্বভারতীয় দলের রাজ্য সম্পাদক। আর অনুব্রত মণ্ডল তো জেলা সম্পাদক। আমি তাঁর সঙ্গে কী লড়াই করব!” |