আকাশে ওড়ার সামান্য পরেই একটি দোতলা বাড়ির গায়ে ভেঙে পড়ল যাত্রিবাহী বিমান। সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে গেল সেটিতে। রবিবার সন্ধ্যায় নাইজিরিয়ার এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বিমানের ১৫৩ জন যাত্রীই মারা গিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নাইজিরিয়ার বাণিজ্য-নগর লাগোসে প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের বাস। শহরের ঘনবসতিপূর্ণ ইজু এলাকায় ভেঙে পড়ে বিমানটি। শহরের ব্যস্ত এলাকায় হঠাৎ এমন ঘটনায় আতঙ্কিত মানুষ রাস্তায় ছোটাছুটি শুরু করেন। বিমান দুর্ঘটনার খবর রটে যাওয়ার পর ভিড় করেন কয়েকশো মানুুষ। হাত বাড়িয়ে দেন উদ্ধারকাজে। শুধু বিমানের যাত্রীই নয়, যে বাড়িতে বিমানটি ধাক্কা মারে তার কয়েক জন বাসিন্দারও প্রাণ গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাড়ির কাছেই একটি ব্যস্ত বাসস্টপ রয়েছে। কয়েক জন পথচারীর মৃত্যুর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিমানের ডানা, যন্ত্রাংশ এবং বাড়ির দেওয়ালের মধ্যে মৃতদেহগুলি চাপা পড়ে রয়েছে। সেগুলি বের করে আনতে অসুবিধার মধ্যে পড়ছেন উদ্ধারকারীরা। |
ভেঙে পড়া বিমানের ধ্বংসাবশেষ। রবিবার লাগোসে দুর্ঘটনার পর। ছবি—এসটিআর |
নাইজিরিয়ার বিমান পরিচালন সংস্থারসূত্রে জানা গিয়েছে, দানা এয়ার সংস্থার বিমানটি লাগোস থেকে আবুজায় যাচ্ছিল। বিমানবন্দর ছেড়ে বেরনোর সামান্য পরেই কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে বিমানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (নিমা)-র কর্তারা। পৌঁছে গিয়েছেন দানা এয়ারের অফিসাররাও।
লাগোস রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র যোসেফ জাইইওবা বলেন, “ইজু এলাকাটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। শহরের একটা বড় অংশের মানুষের বাস এখানে। কি হয়েছে দেখতে দলে দলে মানুষ ভিড় করছেন।” মানুষের ভিড়ের কারণে উদ্ধারকারীদের কাজের অসুবিধা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ঘটনারা প্রত্যক্ষদর্শী এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “বিমানটি খুব নীচ দিয়ে যাচ্ছিল। ভেঙে পড়ার খানিক আগে থেকেই প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছিল ইঞ্জিনের। তারপরই মুখ থুবড়ে পড়ে একটা বাড়ির গায়ে। সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায়।”
নাইজিরিয়ার বিমান দুর্ঘটনা আগে বহুবার ঘটেছে। যাত্রী নিরাপত্তার ব্যাপারে সেখানে যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখা হয় না এমন অভিযোগও বহু দিনের। কিন্তু, দানা এয়ার তুলনামূলকভাবে এত দিন কলঙ্কমুক্ত ছিল। ২০০৮ সাল থেকে বিমান চালানো শুরু করে সংস্থাটি। এখন তারা দিনে ২৭টি উড়ান চালায়। কেন দুর্ঘটনা ঘটল সে সম্পর্কে এখনও কিছু জানাতে পারেননি সংস্থার কর্তারা।
এ দিকে, রবিবারই ঘানার রাজধানী আক্রার বিমানবন্দরে একটি পণ্যবাহী বিমান রানওয়ে পেরিয়ে গিয়ে বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় জরুরি অবতরণ করে। বিমানবন্দর সংলগ্ন একটি স্টেডিয়ামের কাছে অবতরণের সময় সেটি একটি বাসে ধাক্কা মারে। এর ফলে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে ওই বিমানটির কর্মীরা নিরাপদেই রয়েছেন।
ঘানার বিমান পরিচালন সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, নাইজিরিয়ার বাণিজ্য-রাজধানী লাগোস থেকে আক্রায় ওই বিমানটি আসছিল। কিন্তু লাগোস থেকে ওড়ার পরেই মধ্যেই অ্যালায়েড এয়ারের বোয়িং ৭২৭ বিমানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধে ৭ টা ১০ মিনিট নাগাদ বিমানটি বিমানবন্দরের কাছে একটি স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় জরুরি অবতরণ করে। সেই সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ওই বাসে ধাক্কা মারে বিমানটি। ঘানা সরকার এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
|