যে দিকে চোখ যায় কাতারে কাতারে লোক। হাতে ইউনিয়ন জ্যাক। মুখে হাসি। ইউরোপের অধিকাংশ দেশ থেকে সুদূর নিউজিল্যান্ড, এমনকী আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকেও টেমসের ধারে হাজির পর্যটকেরা। টেমসের বুকে ভেসে চলা এক হাজার নৌকা ‘ফ্লোটিলা’ সঙ্গে রাজকীয় বজরায় পরিবারের সবার সঙ্গে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ-এমন দৃশ্য দেখার সুযোগ তো আর হবে না। পিছিয়ে নেই ভারতও। ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রী, কর্মসূত্রে ওখানে থাকা ভারতীয়রা তো বটেই, ইংল্যান্ডে বেড়াতে আসা পর্যটকরা অন্য ট্যুর কাটছাঁট করে হাজির হয়েছেন টেমসের পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শুধু টেমসের দু’পাড়েই ১০ লক্ষের বেশি লোকের সমাগম হয়েছে। |
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেকের হীরক-জয়ন্তী উৎসবে রবিবার টেমসে
ভাসল হাজার নৌকা। বিশেষ বজরায় ছিলেন রানি এবং তাঁর পরিবারও । ছবি: রয়টার্স |
আকাশ মেঘলা। সকালে তুমুল বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তাতে অবশ্য কিছু এসে যায় না উৎসাহী দর্শকদের। ভোর থেকেই টেমসের দু’ধারে হাজির দর্শকরা। কোনও কোনও অত্যুৎসাহীরা তো সারা রাত টেমসের দু’ধারে তাঁবু খাটিয়ে ছিলেন। যদি ঠিক সময়ে না পৌঁছতে পারেন। যদি ভিড়ের জন্য সামনে থেকে রানিকে না দেখতে পাওয়া যায়।
পিকাডিলি সার্কাসের সামনের রাস্তায় ‘জুবিলি লাঞ্চ’ উপলক্ষে এত ভিড় হয়েছিল যে বেশ কিছু ক্ষণ রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় সময় দুপুর ২টো বেজে ৪০ মিনিটে বিশেষ ঘণ্টা বাজিয়ে, ব্রিটিশ রয়্যাল গার্ডের তোপধ্বনির সঙ্গে সূচনা হল বহুপ্রতীক্ষিত সেই যাত্রা। আইভরি রঙের কোট আর সঙ্গে মিলিয়ে সামান্য ডান দিকে বেঁকানো টুপি। ডিজাইনার অ্যাঞ্জেলা কেলি তৈরি করেছেন এটি। প্রায় এক বছর ধরে গোপনে বাকিংহাম প্যালেসে তৈরি হয়েছে এই পোশাক। তাতে বসানো দামি পাথর। সময়ের মধ্যেই বজরার সামনে ৮৬ বছরের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। পাশে স্বামী ডিউক অফ এডিনবরা ফিলিপ। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকারে মুখরিত হল জনতা। কে নেই সেই জনজোয়ারে। হুইল চেয়ারে বর্ষাতি পরা বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সদ্যোজাত শিশু কোলে মা। ‘লং লিভ দ্য কুইন’ গানে মুখরিত চার দিক। টেমসের ধারে রীতিমতো মেলা বসে গিয়েছে। ইউনিয়ন জ্যাকের রঙের ব্রাউনি, কাপ কেক, মুখোশ দেদারে বিকোচ্ছে।
|
রাজকীয় বজরায় সপরিবার রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রবিবার টেমসে। ছবি: এএফপি |
সিংহাসনে বসার হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে রানির বজরা সাজানো হয়েছে রানির বাগানের ফুল দিয়েই। সে বাগানের লাল, সোনালি আর বেগুনি রঙের ১০ হাজার ফুল এসেছে। ২০ জন মালি ৭ মাস ধরে সেই সব ফুল ফোটানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ৬৪ মিটার দীর্ঘ সুসজ্জিত যে বজরায় রানি উঠলেন, সেটির নাম ‘দ্য স্পিরিট অফ চার্টওয়েল।’ বজরাটি দেখলে মনে হবে ফুলের বাগান ভাসছে। সামনে এলিজাবেথের শুধু ‘ই’ বর্ণ লেখা লাল গোলাপ দিয়ে। একই রকম দেখতে দু’টি লাল ভেলভেটের সিংহাসনে পাশাপাশি বসলেন রানি আর ফিলিপ। সোনালি পাতায় সাজানো হয়েছে সিংহাসন দু’টি। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে উপরে থাকছে চাঁদোয়ার মতো আবরণ। রানির সঙ্গে বজরায় ছিলেন পরবর্তী দুই প্রজন্ম। যুবরাজ চার্লস এবং ডাচেস অফ কর্নওয়াল রাজকুমার উইলিয়াম আর তাঁর স্ত্রী কেট। চেরি লাল রঙের কোট আর টুপি, সঙ্গে উঁচু হিলে সব সময় পাশেই ছিলেন দিদিশাশুড়ির। ছিলেন রাজকুমার হ্যারিও। ফ্লোটিলার একটি নৌকোয় কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশের পতাকা লাগানো ছিল। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার ঠিক পাশেই ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ছে ভারতের পতাকা। লন্ডন বন্দরের চিফ এগজিকিউটিভ রিচার্ড এভরিট জানালেন, উৎসব উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পৌছে যেতে পারে ওই বাহিনী। তবে সব আশঙ্কা উড়িয়ে অগণিত দর্শকদের উচ্ছ্বাসকে সঙ্গী করেই বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময়ে টাওয়ার ব্রিজের সামনে শেষ হল সাত মাইল লম্বা এই ঐতিহাসিক যাত্রা। |