পুরনো বাড়ির উঠোন খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া গিয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রাচীন মুদ্রা। পুলিশ উদ্ধার করার পরে ২০০৭ সাল থেকে সেগুলি পড়ে ছিল বুদবুদ থানার মালখানায়। জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের উদ্যোগে সংরক্ষিত হতে চলেছে সেই মুদ্রাগুলি।
বুদবুদ থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি স্থানীয় দেবশালা গ্রামের একটি পুরনো বাড়ির উঠোনে খোঁড়াখুড়ির সময়ে তামার পাত্রে ২২৯টি এক টাকার রূপোর মুদ্রা পাওয়া যায়। খবর পেয়ে বুদবুদ থানার পুলিশ গিয়ে সেগুলিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তারপর থেকে মুদ্রাগুলির ঠাঁই হয় থানার মালখানায়। মে মাসের গোড়ায় বুদবুদ থানা পরিদর্শনের সময় এই তথ্য জানার পরেই গত ৫ মে পুলিশ সুপার মুদ্রাগুলিকে সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগী হতে জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনাকে চিঠি লেখেন। জেলাশাসক জানান পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের কলকাতা শাখাকে। |
বুধবার দুপুরের দিকে সর্বেক্ষণ দফতরের তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল বুদবুদ থানায় পৌঁছয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ওই দফতরের ডেপুটি সুপার শান্তনু মাইতি। অপর দুই সদস্যেরা হলেন সুকান্তি রায় ও কমলেশ শ্রীমানী। থানায় তাঁদের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন সেকেন্ড অফিসার সুনীলবরণ মুখোপাধ্যায় ও মালখানার এএসআই হেফাজুর রহমান। সিল করা ওই তামার পাত্রটি খুলে মুদ্রাগুলির মাপ নেন ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা। মুদ্রাগুলি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন তাঁরা। শান্তনুবাবু বলেন, “মুদ্রাগুলিকে পরীক্ষা করে আমাদের দফতরে একটি রিপোর্ট দেব। রিপোর্টটি বিবেচনা করে কবে মুদ্রাগুলিকে দফতরের হেফাজতে নেওয়া হবে, তা ঠিক করা হবে। আশা করি, দ্রুত এই মুদ্রাগুলির সংরক্ষণের ব্যবস্থা হবে।”
১৮৩৫ ও ১৮৪০ সালের ওই মুদ্রাগুলি পর্যবেক্ষণ করে শান্তনুবাবু জানান, মুদ্রাগুলির প্রায় সব ক’টিই ৩ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট। তিনি বলেন, “১৮৩৫ সালের মুদ্রায় রাজা চতুর্থ উইলিয়ামের প্রতিকৃতি ও ১৮৪০ সালের মুদ্রাগুলিতে রানি ভিক্টোরিয়ার প্রতিকৃতি রয়েছে। সাল, তারিখের হিসেবে এগুলি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের মুদ্রা। প্রতিটিই এক টাকার।” শান্তনুবাবুর কথায়, “সিপাহি বিদ্রোহের সময়ে ওই মুদ্রাগুলি ব্যবহার করা হত। শুধু তাই নয়, সিপাহি বিদ্রোহের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ভারতের শাসনভার রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে হস্তান্তরিত হওয়ার পরেও ওই মুদ্রা চালু ছিল।”
প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেলেও মুদ্রাগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব যে যথেষ্ট, তা জানান এএসআইয়ের বিশেষজ্ঞেরা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালার কিউরেটর রঙ্গনকান্তি জানাও বলেন, “মুদ্রার ইতিহাস-গবেষকদের কাছে এগুলির প্রচুর ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে।” শান্তনুবাবুও জানান, প্রায় দেড়শো বছর ধরে এই মুদ্রাগুলি হাতবদল হয়েছে। তারপরে দীর্ঘ দিন সেগুলি মাটির নিচে পোঁতা ছিল। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এগুলিকে পরিষ্কার করা হবে। তারপর ভারতের কোনও না কোনও জাদুঘরের মুদ্রার গ্যালারিতে পাঠানো হবে এই মুদ্রাগুলি।
এ দিনের পর পুলিশ সুপার বলছেন, “জেলার অন্য কোনও থানায় এই ধরনের মূল্যবান কিছু পড়ে রয়েছে কি না, তার খোঁজ নিচ্ছি। সেগুলিকেও সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগী হব।” |