কেউ দু’মাস, কেউ পাঁচ মাস, কেউ বা ন’মাস হয়ে গেল কোনও বেতন পাননি। সেই ২০১১ সালের জানুয়ারিতে দফতর থেকে শেষ বেতন পেয়েছেন তাঁরা। মাঝে অবশ্য সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতি নিজস্ব তহবিল থেকে কয়েক মাস টাকা দিয়েছে তবে তাও ধার হিসাবে। এই দশা জনস্বাস্থ্য দফতরের (পিএইচই) অস্থায়ী কর্মীদের। বর্ধমানের ১৪টি জল প্রকল্প যেমন, কাটোয়া-১ ব্লকের শ্রীখণ্ড, কাটোয়া-২ ব্লকের অগ্রদ্বীপ, কেতুগ্রাম-১ ব্লকের কাচরা, মঙ্গলকোটের মাজিগ্রাম ও মঙ্গলকোট, মন্তেশ্বরের কাইগ্রাম, বর্ধমানের বড়শূল-সহ বিভিন্ন এলাকায় ওই কর্মীদের এইরকম অভাবের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় ১৯৮৭ সালে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ওই জলপ্রকল্পগুলি তৈরি করে। নব্বই দশকের গোড়া থেকে ওখানে জল সরবরাহের কাজ করছেন ওই অস্থায়ী কর্মীরা। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ঠিকাদার গোষ্ঠীর হাতে দায়িত্ব থাকলেও পরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর অস্থায়ী কর্মীদের বেতন দিত। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে তাও অনিয়মিত হয়ে পড়ে বলে জানা গিয়েছে।
পঞ্চায়েত সমিতি থেকে পিএইচই-র ওই কর্মীরা পান ১৫০০ থেকে ৩৭০০ টাকা। তাও প্রতিমাসে নয়, চার-পাঁচ মাস অন্তর। মঙ্গলকোট জলপ্রকল্পের অস্থায়ী কর্মী ধনঞ্জয় দত্ত কিংবা মাজিগ্রামের বলরাম মিত্রদের অভিযোগ, “ভেবেছিলাম জলপ্রকল্পে কাজ করলে এক সময়ে সরকারের স্থায়ী কর্মী হব। কিন্তু কোথায় কী! বেতনই মিলছে না।” মঙ্গলকোট ও মাজিগ্রাম জলপ্রকল্পে ১০ জন কর্মী ১৪ মাস ধরে বেতন পাননি। কাটোয়ার শ্রীখণ্ড গ্রামের জলপ্রকল্পের তিন কর্মী তিন মাস ধরে, মন্তেশ্বরের কাইগ্রামের তিন কর্মী পাঁচ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। এখানকার এক কর্মী অমল মিত্র জানান, দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় মানকরের জলপ্রকল্পের কর্মীরা কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে ওই এলাকায় জল সরবরাহও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
২০১১ সালের জানুয়ারি মাসের পর জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর অস্থায়ী কর্মীদের কোনও বেতনই দেয়নি। কিন্তু এই সমস্যা নিয়ে কী বলছে প্রশাসন? কাটোয়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএমের সভাপতি বংশীধর ঘোষ বলেন, “আমরা দু’তিন মাস অন্তর নিজস্ব তহবিল থেকে ওই টাকা ঋণ বাবদ অস্থায়ী কর্মীদের দিচ্ছি।” মঙ্গলকোটের বিডিও প্রদীপ মজুমদারও সাফ জানান, “আমরাও বেশ কয়েক বার বেতন বাবদ টাকা দিয়েছি। এখন আর দিতে পারছি না।” একই কথা বলছেন মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চাঁদু দাস। তিনি বলেন, “ওই জলপ্রকল্প নিয়ে প্রচুর সমস্যা রয়েছে।” কাটোয়া-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হরিনারায়ণ সামন্ত বলছিলেন, “আমরা কর্মীদের বেতন বাবদ ২ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা দিয়েছি। দফতর থেকে ওদের জন্য টাকা এলে সেখান থেকে নিয়ে নেব।”
শুধু বেতন নয়, বেশ কয়েক লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিলও বাকি রয়েছে জলপ্রকল্পগুলির। ফলে যে কোনও দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে জল সরবরাহও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। বর্ধমান জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সব কর্মীদের সম্পূর্ণ তথ্য রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। যাতে তাঁরা অন্তত প্রাপ্য বেতনটুকু পান। পিএইচই-র এক কর্তার আশ্বাস, “আমরা বিষয়টি রাজ্য সরকারকে জানিয়েছি। চিন্তাভাবনা করছে সরকার।” |