নাওয়া-খাওয়া ভুলে কেউ দৌড়ে বেড়ালেন নানা ওয়ার্ডে। কেউ আবার দলীয় কার্যালয়ে বসেই দিনভর নির্দেশ দিয়ে গেলেন শহরের নানা এলাকায় ছড়িয়ে থাকা কর্মীদের। কাউকে দেখা গেল নিজের ওয়ার্ডের পাশাপাশি স্ত্রী যেখানে প্রার্থী হয়েছেন, সেখানে গিয়েও ভোটের হালচাল বুঝে নিতে। রবিবার পুরভোটের দিন এ ভাবেই কাটল নানা দলের নানা নেতার।
|
রথীন রায় |
|
সুদেব রায় |
তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় প্রার্থী হয়েছেন ২২ নম্বর ওয়ার্ডে। তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতাদেবী আবার দাঁড়িয়েছেন ২০ ওয়ার্ডে। সেই এলাকারই বাসিন্দা এই দম্পতি। রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ সস্ত্রীক ভিড়িঙ্গি টিএন স্কুলে গিয়ে ভোট দেন অপূর্ববাবু। তার পরে চলে যান ভিড়িঙ্গিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেখান থেকেই সারা দিন ভোটের খুঁটিনাটির খোঁজ নিয়েছেন। সিপিএমের তোলা সন্ত্রাসের নানা অভিযোগ কানে এসেছে। ফোনে দলীয় কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন, কী ভাবে পরিস্থিতি সামলাতে হবে।
২১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী তথা প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী অবশ্য অফিসে বসে থাকার ফুরসত পাননি। সকাল থেকেই তাঁর ওয়ার্ডে তৃণমূলের লোকজন সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনী এজেন্টদের বাধা, বহিরাগতদের ঘোরাফেরা, এ সব অভিযোগ নিয়ে অশান্ত ওয়ার্ড সামলে তিনি ভোট দিতে গেলেন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ। তিনি নিজে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ভোট দেওয়ার পরে ঘুরে বেড়ালেন নানা ওয়ার্ডে। বিকেলে হাজির হলেন বামফ্রন্টের ডাকা সাংবাদিক বৈঠকেও। |
কংগ্রেসের বংশীবদন কর্মকার দাঁড়িয়েছেন ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে। তাঁর স্ত্রী শাশ্বতীদেবী পাশের ২৬ নম্বরের প্রার্থী। দু’টি ওয়ার্ডেই এ দিন দৌড়াদৌড়ি করলেন প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতা। স্ত্রীর ওয়ার্ডে ভোট মোটামুটি নির্বিঘ্নে হলেও তাঁর নিজের ওয়ার্ডে গোলমাল বাধে। দুপুর ১২টা নাগাদ বংশীবাবুর নির্বাচনী এজেন্ট গৌতম অধিকারীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে মহকুমা নির্বাচনী আধিকারিক ও পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান বংশীবাবু।
এই শিল্পশহরে বিজেপি-র তেমন শক্তি না থাকলেও পরিশ্রমে কোনও ঘাটতি রাখেননি দলের নেতা কল্যাণ দুবে। ভোটের আগে নাওয়া-খাওয়া ভুলে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার চালিয়েছিলেন, সে ভাবেই ভোটের দিন সকাল থেকে চষে বেড়ালেন নানা ওয়ার্ড।
গত দেড় দশক এই শহরের মেয়র তিনি। এ বার আর প্রার্থী হননি। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য রথীন রায় সারা দিনই কাটালেন দলের সিটি সেন্টার কার্যালয়ে। মাঝে এক বার ভোট দিতে বেরোলেন। বাকি সময় নানা বিষয়ে তদারক করলেন। সকালে বেনাচিতি এলাকার বিভিন্ন বুথে তৃণমূলের লোকজন সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলে অভিযোগপত্র পাঠালেন মহকুমা রিটার্নিং অফিসারকে। বিকেলে ভোট শেষে তাঁকে কার্যালয়েই বসে থাকতে দেখা গেল। এ দিন বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। রথীনবাবু সেখানে বললেন, “শিল্পশহরে এমন নির্বাচন আগে কখনও হয়নি। আমি হতাশ।”
|
গৌরী বিশ্বাস |
|
বিশ্বনাথ পাড়িয়াল |
হতাশ কংগ্রেসের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি সুদেববাবুও। সকাল ৭টায় ভোট শুরু হতেই পৌঁছে গিয়েছিলেন ভোটকেন্দ্র ভিড়িঙ্গি প্রাথমিক স্কুলে। মিনিট পনেরোর মধ্যে ভোটদান শেষ। এর পরে বেনাচিতি থেকে বিধাননগর, সিটি সেন্টার থেকে ডিপিএল, সর্বত্র ঘুরে বেড়ালেন সুদেববাবু। মাঝে অল্প সময়ের জন্য এক বার গেলেন নিকট আত্মীয়ের ক্ষৌরকর্মে যোগ দিতে। সুদেববাবুর দাবি, তৃণমূলের সন্ত্রাস নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন। তাঁর ক্ষোভ, “৫, ১৪ ও ২৭ নম্বরে তৃণমূল হয় ছাপ্পা ভোট দিয়েছে, নয়তো ভোটারদের হুমকি দিয়েছে।”
গত বার স্ত্রী-র ওয়ার্ডের চাপ ছিল। এ বার স্ত্রীকে দল প্রার্থী করেনি। শেষ মুহূর্তে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নিজে প্রার্থী হন বর্তমান তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। নিজের ওয়ার্ড সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় এ বার দাঁড়িয়েছেন ৪২ নম্বর থেকে। ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনুগামীদের নিয়ে সারাদিন ওয়ার্ডেই কাটান তিনি।
বাসিন্দাদের নজর ছিল আরেক জনের উপরেও। তিনি এ বার সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী গৌরী বিশ্বাসও প্রথম বার প্রার্থী হয়ে বেশ উত্তেজিত। ওয়ার্ডের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত দৌড়ে বেড়ালেন। দলের নেতা ও দাদাদের সঙ্গে নানা বিষয়ে বারবার আলোচনাও করতে দেখা গেল তাঁকে।
দৌড় কতটা কাজে এল, জানা যাবে রাত পোহালেই। সব পরিশ্রমের ফল যে এখন ইভিএমে বন্দি।
|