বলছেন বুথফেরত মানুষ
জোর যার ভোট তার, বদল নেই এ নিয়মে
রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ এসেছে। কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে পরিবর্তন নেই। জোর যার ভোট তার, এ ‘নিয়মেই’ মিটল পুরভোট। রবিবার দুর্গাপুরে এমনটা দাবি করলেন বুথফেরত বহু ভোটারই।
ভোট শুরুর আগে থেকেই ঘটনার ঘনঘটা শুরু। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু বাসিন্দার দাবি, এ দিন সাতসকালে এলাকায় হাজির হন কিছু বহিরাগত। বাসিন্দাদের কাছে তাঁদের ‘বিনীত’ নিবেদন, ‘ভোটটা তৃণমূলকেই দেবেন’। এই ওয়ার্ডে বামফ্রন্টের প্রার্থী বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী। স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামলী মণ্ডল বলেন, “এ সব কাণ্ড দেখে আর বুথমুখো হইনি।”
সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা হল সুকুমারনগর এলাকার বাসিন্দা সঞ্জু বসুর সঙ্গে। একাধিক বুথ শাসক দল ‘দখল’ নিয়েছে দাবি করে তিনি সহাস্য মন্তব্য, “এ আর নতুন কী? সব ভোটেই তো এমন হয়।” মিনিট পনেরো পরে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিধাননগর এলাকার বাসিন্দা পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “এলাকায় যে ভাবে বাইক বাহিনী দাপিয়ে গেল, তার পরে আর কে ঝুঁকি নেবে?” ওই ওয়ার্ডেরই আর এক বাসিন্দা সমীর ঘোষের অভিযোগ, “কংগ্রেসের নির্বাচনী এজেন্টকে হেনস্থা করা হল। সাধারণ ভোটারদের কী হাল, তা নিশ্চয় বুঝছেন!”
অশান্তির চিহ্ন। রবিবার দুর্গাপুরের ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তোলা নিজস্ব চিত্র।
একই সুর ডিএসপি টাউনশিপের বাসিন্দাদের গলাতেও। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তানসেন অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা সুখময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বাইকে করে এক দল দুষ্কৃতী এসে যে ভাবে সিপিএমের ক্যাম্প অফিসে ভাঙচুর করল, তা আর বলার নয়। আগে দু’এক বার সিপিএম বিরোধীদের ক্যাম্পে এমন হামলা হতে দেখেছি।” ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহিস্কাপুর গার্লস স্কুল থেকে ভোট দিয়ে বেরিয়ে এক ভোটার যেন সুখময়বাবুর কথার রেশ ধরেই বললেন, “আগে যেমন হত, এখনও দেখছি তেমনই হচ্ছে। ভোট হয় ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণেই।” ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চণ্ডীদাস অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা আশিস মুখোপাধ্যায়ের আবার দাবি, “কে কাকে ভোট দিচ্ছেন, আগে যেমন তা নজরে রাখা হত, এ বারও তেমনই হয়েছে। নজরদারি করা দলটা শুধু পাল্টেছে।” ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ডি-সেক্টর প্রাথমিক স্কুলে ভোট দিয়ে বেরিয়ে এক জনের স্বগতোক্তি, “আগের মতো লম্বা লাইন নেই। মানুষ বোধহয় ভোট দিতে আগ্রহ হারিয়েছেন।” ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সিধো-কানহু ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এক মহিলা ভোটার অবশ্য বললেন, “আগেকার শাসক দল যে ভাবে ভোট করত, এ বার তেমন হচ্ছে না। মানুষ শান্তিতে ভোট দিচ্ছেন।”
রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য ভোটারদের অভিযোগ নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে পরস্পরকে দুষতে ব্যস্ত। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা দুর্গাপুরের বিদায়ী মেয়র রথীন রায়ের দাবি, “দুর্গাপুরে অন্য বারের থেকে কম হারে ভোট পড়েছে। এ থেকে পরিষ্কার, অন্য বার মানুষ যে ভাবে ভোটদানে যোগ দিতেন, এ বার সে সুযোগ পাননি।” পক্ষান্তরে, তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “বাম আমলে বিরোধী মনোভাবাপন্নেরা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারতেন না। গত বিধানসভা ভোটে মানুষ প্রথম সেই সুযোগ পান। এ বারও সে ভাবেই ভোট হয়েছে দুর্গাপুরে। কোথাও কোনও ভোটারকে তৃণমূলের কেউ বাধা দেয়নি।”
তরজা চলছেই। কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে পরিবর্তন কোথায়, প্রশ্ন তুলে দিল দুর্গাপুর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.