ওষুধটা হয়তো ভুল নয়। কিন্তু ওষুধের টাকা?
টাকা কোথা থেকে আসবে, তারই নেই ঠিক! তবু পরিবহণ নিগমগুলির হাল ফেরাতে স্বেচ্ছাবসরের দাওয়াইয়ের কথা ফের ঘোষণা করে দিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। জানালেন, ওই স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে খরচ হবে ২০০ কোটি টাকা।
এটাই প্রথম নয়। রাজ্যের সরকারি পরিবহণ নিগমগুলিকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে ছ’মাস আগেও স্বেচ্ছাবসরের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন পরিবহণমন্ত্রী। বিভিন্ন পরিবহণ নিগমের বামপন্থী ইউনিয়নগুলি মন্ত্রীর দাওয়াই মেনে নিলেও প্যাকেজ ঘোষণার দাবি জানিয়েছিল। কোথা থেকে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের টাকা আসবে, তুলেছিল সেই প্রশ্নও। মূলত টাকার সংস্থান না-হওয়ায় সে-বার ওই প্রকল্প কার্যকর হয়নি। সরকারি পরিবহণগুলি আরও রুগ্ণ হয়েছে। অনিয়মিত হয়ে পড়েছে সেখানকার কর্মীদের বেতন।
পরিস্থিতি কী ভাবে বদলানো যায়, তা নিয়ে শুক্রবার নিগমগুলির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পরিবহণমন্ত্রী। নতুন কোনও দাওয়াই তিনি দেন কি না, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল নিগমকর্তাদের। বৈঠকে দেখা গেল, মন্ত্রীর মূল দাওয়াই বলতে স্বেচ্ছাবসরই। কিন্তু স্বেচ্ছাবসরের প্যাকেজ কী হবে? টাকা কোথা থেকে আসবে?
এই ব্যাপারে মন্ত্রীর কাছ থেকে কোনও আশ্বাসই পেলেন না নিগমকর্তারা। ফলে পরিবহণ দফতরের কর্তারা সমস্যা মেটানোর কোনও পথই আপাতত দেখতে পাচ্ছেন না। এক কর্তার কথায়, স্বেচ্ছাবসরের প্যাকেজ কী হবে, তা ঠিক হয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে। কিন্তু মন্ত্রিসভা এখনও মদনবাবুর ওই প্রস্তাবে সিলমোহর দেয়নি।
তা হলে কীসের ভিত্তিতে ফের স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের ‘কুমিরছানা’ দেখাচ্ছেন মদনবাবু?
পরিবহণমন্ত্রী জানান, প্যাকেজ কী হবে, নিগমগুলিই তা ঠিক করবে। কিন্তু টাকার সংস্থান কোথা থেকে হবে, সেই প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি। মন্ত্রীর ঘোষণা, “স্বেচ্ছাবসর দেওয়া যেতে পারে, এমন কর্মীদের তালিকা সাত দিনের মধ্যে তৈরি করতে বলা হয়েছে চার নিগম সিএসটিসি, সিটিসি, এসবিএসটিসি এবং এনবিএসটিসি-কে। ওই চারটি নিগমকে রাজ্য সরকার বছরে ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। তাই নিগমগুলির বছরে ২-৩ কোটি টাকা আয় বৃদ্ধি হলেও কোনও লাভ হবে না। তাই দরকার ৫০ শতাংশ কর্মীর স্বেচ্ছাবসর।”
স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতি আছে কি না, সেই ব্যাপারেও সন্দেহ আছে পরিবহণ দফতরের কর্তাদের। তবে মদনবাবু বলেছেন, “আগে স্বেচ্ছাবসরের তালিকা তৈরি হোক। তার পরে তা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।” মন্ত্রীর দাবি, চারটি নিগম মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার কর্মী রয়েছেন। তার ৫০ শতাংশ কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দিলেই নিগমগুলিকে লাভের মুখ দেখানো যাবে। স্বেচ্ছাবসর ছাড়াও সরকারি নিগমগুলির রুগ্ণতা কাটাতে বিভিন্ন ডিপোয় পড়ে থাকা পুরনো (রাস্তায় নামার অযোগ্য) বাস ‘স্ক্র্যাপ’ হিসেবে বিক্রি করে টাকা তোলার কথাও ভাবছে পরিবহণ দফতর। যে-সব রুটে বাস চালিয়ে লাভ হচ্ছে না, সেখানে বাস কমিয়ে দেওয়া হবে। বেশি বাস চালানো হবে লাভজনক রুটে।
এই সব দাওয়াইয়ের কথাও ছ’মাস আগে জানিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী।
কিন্তু স্বেচ্ছাবসরের মতো সেগুলোও বাস্তবায়িত হয়নি।
সিএসটিসি-র সিটু প্রভাবিত কর্মী সংগঠনের নেতা রমাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “গত জানুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী সব নিগমকে নিয়ে বৈঠক করার পরে বলেছিলেন, প্রতি মাসে ঠিক সময়ে বেতন দেওয়া হবে। যাঁরা কাজ করতে পারছেন না, তাঁদের চাকরি যাবে না। তাঁদের অন্য কাজে যুক্ত করা হবে। নিরপেক্ষ মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করা হবে তাঁদের জন্য। কিন্তু ছ’মাসে এ-সবের কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। কোনও বাস কেনা হয়নি গত এক বছরে।” স্বেচ্ছাবসরের সবিস্তার প্রস্তাব না-দেখে তাঁরা কোনও মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন সিএসটিসি-র তৃণমূল কর্মী সংগঠনের নেতা গৌতম চক্রবর্তীও। |