পড়াশোনার নাম নেই! সারাদিন মাঠে দৌড়োয়। এমন মেয়ের সঙ্গে থাকলে তাঁদের ছেলেমেয়েরাও উচ্ছন্নে যাবে মন্তব্য শুনতে শুনতে বড় হয়েছে তিতির। মাধ্যমিকে এ বার ৫৮৩ নম্বর পেয়ে নিজেকে ‘অলরাউন্ডার’ প্রমাণ করে খুশি বনগাঁর প্রতাপগড়ের তিতির হোড়।
বাবা সপ্তর্ষি হোড়ের কাছে দৌড়ে হাতেখড়ি তিতিরের। এরপর তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বাগদার সিন্দ্রানীতে কোচ গৌর রায়ের কাছে দৌড়ের খুঁটিনাটি শেখা শুরু। এরপরে মহকুমা, জেলা, রাজ্য, জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য এসেছে। সম্প্রতি যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ৬২ তম রাজ্য অ্যাথলেটিক মিটে অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগে ৪০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হয়েছে তিতির। সময় নিয়েছে ৬০ সেকেন্ড ৮ মাইক্রোসেকেন্ড। এর আগে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা অ্যাথলেটিক মিটেও সে ৪০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হয়েছিল। সেখানে সময় নিয়েছিল ৬২ সেকেন্ড ২ মাইক্রোসেকেন্ড। এখন তিতির ব্যস্ত পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলিকে নিয়ে আয়োজিত আসন্ন অ্যাথলেটিক মিটের জন্য। আগামী অগস্টে যা গুয়াহাটিতে আয়োজিত হওয়ার কথা। |
বর্তমানে তিতির কোচ কুন্তল রায়ের কাছে সাইতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সপ্তাহে চার দিন মা গোপাদেবীর সঙ্গে সে সাই-তে যায়। সেখানে সে কাছে পেয়েছে অলিম্পিয়ান দৌড়বিদ সুস্মিতা সিংহরায়কে। তিতিরের কথায়, “সুস্মিতাদির সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে পারাটাই অত্যন্ত গর্বের। চারশো মিটার দৌড় তাঁর প্রিয় ইভেন্ট। আমার স্বপ্ন অলিম্পিক থেকে চারশো মিটারে পদক জেতা।” আদর্শ পি টি ঊষা। ২০০৮-এ কেরলে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্কুল অ্যাথলেটিক মিটে পি টি ঊষার সঙ্গে আলাপও হয়েছিল তিতিরের। বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছিলেন তিনি।
তবে এত কিছু করেও পড়াশোনাকে অবহেলা করেনি বনগাঁ কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এই ছাত্রী। দৌড়ের সঙ্গে সমানতালে চলেছে মাধ্যমিকের প্রস্তুতি। অথচ এক সময় এই তিতিরকেই ‘মাঠের মেয়ে’ তকমা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন এলাকার লোকজন, এমনকী ‘বন্ধু’রাও। সে সব মনে পড়লে গলা ধরে আসে তিতিরের। বলে, “কত বার শুনেছি, আমার নাকি পড়াশোনা নেই। সারাদিন মাঠে দৌড়ে বেড়াই। আমি নাকি ভাল মেয়ে নই। আমার সঙ্গে থাকলে ওরা নাকি বিগড়ে যাবে। তাই পাড়ার অনেকেই আমার সঙ্গে মিশত না। আমার সঙ্গে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তেও চাইত না।” তিতিরের পরিচিত অমিত সরকারের বক্তব্য, “অনেক অভিভাবক ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বাদে অন্য প্রতিভাকে উৎসাহ দিতেই চায় না। অনেক তাচ্ছিল্য সহ্য করেছে মেয়েটা। এ বার ও নিজের জেদে সে সবের উত্তর দিল।”
এ সবের জন্য এক সময় তিতির এতটাই ভেঙে পড়েছিল যে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। তবে জেদ ছিল পরীক্ষায় ভাল ফল সে করবেই। মা গোপাদেবী বলেন, “তিতিরের জেদ ছিল ও ভাল ফল করবেই। মাধ্যমিকে ৮৩% নম্বর পেয়েছে সে! এখন অন্তত অন্য অভিভাবকেরা তাদের ছেলেমেয়েকে ওর থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন না।” তিতিরের সাফল্যে গর্বিত সপ্তর্ষিবাবু বলেন, “আমার মেয়ে এ বার অলরাউন্ডার।” |