|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা
|
চাপান-উতোর |
সেতুবন্ধের অপেক্ষায় |
কৌশিক ঘোষ |
কুঁদঘাটের কাছে দক্ষিণপাড়ায় খাল (ওয়েস্টার্ন চ্যানেল) পারাপারের জন্য সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বছর দু’য়েক আগে। কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের (কেইআইপি) অন্তর্গত সেই কাজ অবশেষে শুরু হয়েছিল গত নভেম্বরে। এই মরসুমে বর্ষার আগেই এই কাজ শেষ করার সিদ্ধান্তও হয়েছিল। অথচ সেই কাজ এখনও বিশ বাঁও জলে। এই সেতু নিয়েই শুরু হয়েছে কেইআইপি এবং এই সংস্থা নিয়োজিত ঠিকাদারি সংস্থার মধ্যে চাপান-উতোর। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ার ফলে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে এই সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে কেইআইপি-র নজরদারি নিয়েও।
কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গত বোর্ডের আমলেই এই সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছিল। তারাই এখানে সেতু নির্মাণের কাজ করছে। কেইআইপি থেকে এই ঠিকাদার সংস্থাকে যে সময় ধার্য করা হয়েছিল তারা সেই সময়ে কাজ করতে পারেনি। এই ব্যাপারে কেইআইপি-র নজরদারির ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হয়। কেইআইপি-র আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।” |
 |
কেইআইপি-র অধীনস্থ সেচ দফতরের যে শাখা রয়েছে তারাই এই সেতু নির্মাণ করছে। কেইআইপি সূত্রের খবর, ২০০৫-’০৬ সালে কেইআইপি কর্তৃপক্ষ এই সংস্থাকেই সেতু নির্মাণের জন্য নিয়োগ করেছিলেন। কেইআইপি-র তথ্য অনুযায়ী, বেগড়, মনিখালি, চড়িয়াল, কেওড়াপুকুর, ইস্টার্ন চ্যানেল এবং ইন্টারসেপ্টিং খাল পারাপারের জন্য মোট ২৭টি সেতু নির্মাণ করার কথা। এখনও পর্যন্ত ২৫টি সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। কুঁদঘাটের দক্ষিণপাড়া ছাড়া পুজালির কাছেও একটি সেতু নির্মাণের কাজ বাকি বলে কেইআইপি-র এক আধিকারিক জানিয়েছেন। এই ২৭টি সেতু নির্মাণের জন্য এই ঠিকাদারি সংস্থাকে প্রায় সাড়ে দশ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন কেইআইপি কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণপাড়ার এই সেতুর জন্য বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা।
এই সেতুটি নির্মাণের ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়?
ঠিকাদারি সংস্থার সিনিয়র ম্যানেজার অঞ্জন চক্রবর্তী জানান, ভূগর্ভস্থ কোনও জলের পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে জল বেরিয়ে মাঝেমধ্যেই ধস নামছে। কিন্তু এই পাইপলাইনটি ঠিক কোথায়, তা এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। এ ছাড়া প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যাও রয়েছে। ফলে এই সেতু তৈরির কাজ পিছিয়ে পড়েছে অনেকটাই। যেখানে এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে একটি সেতু অনেক দিন আগেই ছিল। কিন্তু সেই সেতুটি আরও চওড়া এবং শক্তপোক্ত করতে এই সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বাসিন্দাদের কথা ভেবেই পুরনো সেতুটি ভেঙে দেওয়ার পর নির্মাণের জায়গার পাশেই দু’টি ছোট অস্থায়ী কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
অঞ্জনবাবু বলেন, “এই জায়গায় ভূগর্ভস্থ জলের লাইন এবং টেলিফোনের লাইন গিয়েছে। সেই কারণে এখানে সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই সমস্যা ছিল। অসুবিধার কথা কেইআইপি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। তাঁদের বলা হয়েছিল, আমরা এই জায়গায় সেতুটি তৈরি করতে পারব না। পাশে অন্য কোনও জায়গায় তা করা সম্ভব। কিন্তু কোনও কারণে কেইআইপি কর্তৃপক্ষ আমাদের এখানেই এই প্রকল্প করতে নির্দেশ দেন। সমস্যাগুলির সমাধান করে সেতু নির্মাণ করতে সময় লাগছে।” |
|
এখানকার অসুবিধার কথা জানার পরেও কেইআইপি কর্তৃপক্ষ কেনই বা এই ঠিকাদারি সংস্থাকে সেতু নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন? ঠিক সময়ে কাজ শেষ না হলে তাঁরা কী ব্যবস্থা নেবেন? কেইআইপি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এই সংস্থা এখানে অনেক সেতুই নির্মাণ করে। এখানেও তা তৈরির জন্য এই সংস্থা প্রথমে রাজি হয়। কিন্তু মাঝপথে আচমকা তারা এই সেতুটি নির্মাণ করতে পারবে না বলে জানায়। তখন নতুন করে শুধুমাত্র একটি সেতুর জন্য আবার টেন্ডার ডেকে নতুন সংস্থা নিয়োগ করা সময়সাপেক্ষ। সেই কারণেই এই সংস্থাকে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিগত সমস্যা মিটিয়ে এই কাজ শেষ করতে বলা হয়। বার বার বলা সত্ত্বেও এই সংস্থা ঠিক সময়ে কাজ করতে পারছে না। এই কাজ শেষ না করতে পারলে এই সংস্থার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাজ না হলে নজরদারি করা কার্যত অর্থহীন বলেও কেইআইপি-র এক আধিকারিক জানান।
১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর অমল মিত্র বলেন, “এই ঠিকাদারি সংস্থাকে এই এলাকায় খালের ওপর কয়েকটি সেতু নির্মাণ করতে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু এই সংস্থা এখানে যে কটি সেতু নির্মাণ করেছে তা ত্রুটিপূর্ণ। এ ছাড়া কোনও সেতু নির্মাণ করার ক্ষেত্রে বরাদ্দ সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় নিয়েছে। আমি নিজেও এই সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করতে বলেছিলাম। কিন্তু তা এখনও করা হয়নি।”
পুরসভা সূত্রে খবর, গত দু’বছর আগেই এই সেতুটি নির্মাণের পরিকল্পনা হয়েছিল। কাজ শুরু হলেও তা এগোয়নি। ২০১১-র মাঝামাঝি বর্তমান মেয়রের হস্তক্ষেপে কেইআইপি-র আধিকারিকরা এই ঠিকাদারি সংস্থার সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এর পর সিদ্ধান্ত হয়, ২০১১-র নভেম্বরে কাজ শুরু হয়ে ছ’মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ হয়নি। কলকাতা পুরকর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মে মাসের প্রথম দিকে কেইআইপির আধিকারিক, স্থানীয় কাউন্সলির এবং ঠিকাদারি সংস্থার সঙ্গে কাজে বিলম্ব নিয়ে আলোচনাও করেছেন এবং কাজটি যাতে দ্রুত শেষ হয় সেই ব্যাপারে কেইআইপিকে নির্দেশও দেওয়া হয়। এর আগেও এপ্রিল মাসে অমলবাবুর সঙ্গে কেইআইপি কর্তৃপক্ষের এই প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
 |
|
|