উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
পানিহাটি
তৃষিত প্রতীক্ষায়
তৃষ্ণা মিটছে না এই গরমেও। নেতাদের ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি আরও এক বার বিফলে। প্রতীক্ষার আরও এক বছর পেরিয়ে গেল। পানিহাটি পুর এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের জলশোধন প্রকল্পের প্রস্তাব হয়েছিল কয়েক বছর আগে। ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০১০-এ অনুমোদন পেয়েছিল এই প্রকল্প। ২০১১-র ২৫শে ফেব্রুয়ারি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। অবশেষে ঠিক এক বছর পেরিয়ে এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে কাজ। পানিহাটির নিজস্ব জল প্রকল্প বাসিন্দাদের কাছে আজ নতুন খবর নয়। বরং এই গরমে চাতক পাখির মতো বাসিন্দারা তাকিয়ে আছেন বোল্ডার, বড় বড় পাইপ আর ভারী ভারী যন্ত্রপাতির আনাগোনার দিকে।
কেন এত দেরি হল কাজ শুরু করতে? পুরসভার জল দফতর সূত্রের খবর, বড় প্রকল্প এটি। টেন্ডার ডাকার কাজ-সহ সমস্ত কাজই হয়েছে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর। ফলে এত দেরি। যদিও পানিহাটির পুরপ্রধান সিপিএমের চারণ চক্রবর্তীর আশ্বাস, “এক বার যখন শুরু হয়েছে, নিশ্চয়ই আটকাবে না। এর সময়সীমা দেড় বছর। কাজ করছে কেএমডিএ। বর্তমানে মাথাপিছু প্রায় ৪৬ লিটার জলের যোগান দেওয়া হয়। কাজ শেষ হলে তা বেড়ে হবে ১৩৫ লিটার। ২৪ ঘণ্টা পানীয় জলের যোগান পাবেন মানুষ।”
৩৫টি ওয়ার্ড নিয়ে পানিহাটি পুরসভার আয়তন ১৯.৩৮ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ। গোটা পানিহাটি পুর এলাকার পানীয় জলের যোগান মেটে মাটির নীচ থেকে পাম্পের সাহায্যে তোলা জল এবং বরাহনগর-কামারহাটি জল প্রকল্পের থেকে পাওয়া সামান্য জলে। এই মুহূর্তে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৯৬টি পাম্প। অথচ কাজ করছে ৭৪টি। বাকিগুলো বসে গিয়েছে। নামছে মাটির নীচের জলস্তর। তীব্র গরমে পানীয় জলের ভয়াবহ সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে বলে মানছে পুরসভা।
হুগলি নদী থেকে জল নিয়ে জেএনএনইউআরএম-এর এই প্রকল্পের আনুমানিক খরচ ২৪৬ কোটি ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ে দিচ্ছে ৩৫ শতাংশ করে। কেএমডিএ-র ২৫ শতাংশ টাকা। বাকি পাঁচ শতাংশ পানিহাটি পুরসভার। কেন কাজ শুরু হতে এত সময় লাগল?
প্রকল্পের জন্য হুগলি নদী থেকে জল তুলে শোধনাগারে পৌঁছনোর জন্য ৯০০ মিমি ব্যসের প্রায় ২৬০০ মিটার লম্বা পাইপ বসানো হবে। তৈরি হবে ইনটেক জেটি। এই কাজে মহোৎসবতলা ঘাটের কাছে পুরসভার ‘অববাহিকা’ বাড়িটি ও সংলগ্ন প্রায় পাঁচ কাঠা জমি ব্যবহার করা হবে। আট নম্বর রেল গেটের পাশের একটি আবাসনের প্রায় ১১ বিঘা জমিতে তৈরি হচ্ছে জল পরিশোধনাগারটি। তেঁতুলতলার কাছে সাড়ে তিন বিঘা জায়গায় তৈরি হবে ২ এমবি পরিশোধিত জলধারণ ক্ষমতার একটি ভূগর্ভস্থ জলাধার। ওই জল পানিহাটির ৩৫টি ওয়ার্ডে বিতরণ করতে তৈরি হবে ১৩টি ওভারহেড রিজার্ভার। ১০০ মিমি থেকে ৫০০ মিমি ব্যসের মোট ১১২ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে জল পৌঁছে যাবে বাড়ি বাড়ি।
এই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে কাজ। জল শোধনাগারের কাজ চলছে পুরোদমে। ইনটেক জেটি, তিনটি ওভারহেড রিজার্ভারের টেন্ডার ডাকা হয়েছে। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলছেন, “টাকার জন্য কোনও ভাবেই কাজ আটকাবে না। মানুষের কাছে পরিশোধিত পানীয় জল পরিষেবা পৌঁছে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। জেএনএনইউআরএম-এর শর্ত অনুসারে মিটার বসিয়ে জল কর আদায় হবে কমার্শিয়াল কানেকশন থেকে। সাধারণ মানুষের উপর কোনও চাপ সৃষ্টি করতে চাই না। তাই ন্যূনতম ফেরুলের (তিন চতুর্থাংশ) ক্ষেত্রে কর নেওয়া হবে না।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.