উত্তর কলকাতা
ফিরছে চোলাই
ঠেকেও শিক্ষা হয়নি
ইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফের দমদমে ফিরেছে চোলাইয়ের ঠেক। তবে এ বার একটু অন্য ভাবে। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, আগের মতো জমিয়ে বসা নয়, পুলিশের হঠাৎ হানার খবরে উধাও হয়ে যায় ঠেকগুলি। পুলিশ চলে গেলেই ফের জমে ওঠে। পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো লুকোচুরি খেলা চলে নেশাড়ু এবং নেশা-সামগ্রীর যোগানদাতাদের। এর ফলে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি হচ্ছে বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, বাঙুর যশোহর রোড ধরে পাতিপুকুর রেলসেতু বরাবর নাগেরবাজারের দিকে একটু এগিয়ে রাতের অন্ধকারে বসে চোলাইয়ের ঠেকগুলি। আবার বাঙুর মোড় থেকে একটু এগিয়ে সর্দার পাড়ার কাছে ঝুপড়িগুলিতে দিনের বেলাতেই মেলে নেশার সামগ্রী। রাত হলে এই ঝুপড়িগুলিই সমাজবিরোধীদের আড্ডাখানা হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীদের বক্তব্য, রাতে এই এলাকার গলি দিয়ে ফিরতে রীতিমতো ভয় করে। মাঝেমধ্যেই মহিলাদের হার ছিনতাইয়ের ঘটনার কথা শোনা যায়। বাসিন্দারা আরও জানান, কিছু দিন ধরে নতুন উপায়ে ছিনতাই শুরু হয়েছিল যশোহর রোডের বেদিয়াপাড়া এলাকায়। রাস্তার উপর ফেলে রাখা হত পিচ্ছিল তরল। ফলে অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে পড়ত মোটরবাইক। আর সেই সুযোগে বাইক-আরোহীর টাকা-পয়সা লুঠ করে পালাত দুষ্কৃতীরা। এ নিয়ে লেকটাউন থানায় বেশ কয়েক বার অভিযোগ দায়ের করা হয়। থানা থেকে মাঝেমধ্যে টহল দেওয়ার ব্যবস্থাও হয়। কিন্তু কিছু দিনের জন্য শৃঙ্খলা ফিরে এলেও অবস্থা আবার যে-কে-সেই।
গত বছর ১৪ ডিসেম্বর মগরাহাটে বিষ চোলাই মদ খেয়ে মৃত্যু হয় শতাধিক মানুষের। এর পরেই চোলাই ঠেক ভাঙার অভিযান শুরু করেছিল পুলিশ। সে সময় দমদম এলাকার অধিকাংশ ঠেক ভাঙা হলেও ফের তা গজিয়ে উঠছে বলে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠেছে, বিষমদ খেয়ে একসঙ্গে এত জনের মৃত্যুর পরও কি হুঁশ ফেরেনি মানুষের? পুলিশ এবং আবগারি দফতরই বা এই ঠেকগুলি তুলতে কতটা সক্রিয়?
অভিযোগ, মগরাহাটের ঘটনার পরে দমদমের কিছু পরিচিত ঠেক অন্যত্র বসেছে। যশোহর রোডের কালিন্দী বাস স্টপের উল্টো দিকে একটি গ্যারাজ-সংলগ্ন এলাকায় আবার দুপুর থেকেই আসর বসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, “দিনের বেলাতেও এই এলাকায় এক দল দুষ্কৃতী মোটরবাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাদের নেশা করার ঠেক এলাকার ঝুপড়িগুলি।”
অভিযোগ, লেকটাউন তেঁতুলতলা, এস কে দেব রোডে মোটরবাইক চেপে পথচলতি মানুষের টাকার ব্যাগ কেড়ে নিয়ে পালানোর ঘটনা ঘটে মাঝেমধ্যেই। সম্প্রতি লেকটাউনের একটি ব্যাঙ্ক থেকে পেনশনের টাকা তুলে এস কে দেব রোড ধরে ফিরছিলেন এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। সেই সময়ে মোটরবাইকে আসা একদল দুষ্কৃতী তাঁর ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেয়।
উত্তর ২৪ পরগনার আবগারি দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট সমর স্বর্ণকার বলেন, “গোটা জেলায় চোলাইয়ের ঠেক ভাঙতে নিয়মিত অভিযান হচ্ছে। দু’একজন অফিসার নিয়ে অভিযানে নামলে অনেক সময় ঠেকের লোকজন পালিয়ে যায়। তাই আমরা বড় দল নিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট থানার আইসি বা ওসি-কে নিয়ে অভিযান করছি। লেকটাউন, যশোহর রোড, পাতিপুকুর এলাকায় বেশ কয়েক বার চোলাইয়ের ঠেক ভাঙার অভিযান হয়েছে। ফের অভিযান চালানো হবে।”
অন্য দিকে, বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, “পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পুলিশি টহলদারি বেড়েছে। পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে, কমিশনারেট হওয়ার পরে অপরাধের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। ভবিষ্যতে শুধু রাতেই নয়, দিনের বেলাতেও পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হবে।”

অলঙ্করণ: অনুপ রায়




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.