তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মারামারিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তেতে উঠল হুগলির গুপ্তিপাড়ার উত্তর বাঁধাগাছি এলাকা।
গণ্ডগোলের মধ্যে পড়ে বেধড়ক মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক পথচারী। অল্প-বিস্তর প্রহৃত হন কয়েক জন মহিলাও। বিবাদমান দুই গোষ্ঠীর জনা আটেক কর্মী আহত হয়েছেন। দু’পক্ষের তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাঁধাগাছি ২ নম্বর বুথের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃণমূলের বৈঠক চলছিল। অভিযোগ, বৈঠকের মাঝেই তৃণমূলের পৃথক এক গোষ্ঠীর সমর্থকেরা এসে অভিযোগ তোলেন, বৈঠকের কথা তাঁদের জানানোই হয়নি। সেই নিয়েই দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বাধে। ক্রমে তা হাতাহাতিতে পরিণত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তখনকার মতো গোলমাল মিটে গেলেও রাতে ফের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বেশ কিছু বহিরাগত যুবক লাঠি, লোহার রড নিয়ে ওই এলাকায় আসে। অভিযোগ, যাঁরা বৈঠকের মাঝপথে প্রতিবাদ করেছিলেন, তাঁদের উপরে চড়াও হয় ওই যুবকেরা। ফের দু’পক্ষের মারামারি শুরু হয়ে যায়। |
সে সময় বিশ্বনাথ দাস নামে এক সব্জি ব্যবসায়ী কাজ সেরে ওই এলাকা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁর উপরে কিছু লোক চড়াও হয়। বাঁশের আঘাতে তাঁর মাথা ফাটে। বুকে-পেটে এলোপাথাড়ি ঘুসি মারা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি মাটিতে পড়ে থাকেন। সে সময়ে স্থানীয় কয়েক জন মহিলার উপরেও হামলাকারীরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ। বলাগড় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বনাথবাবুকে ভর্তি করা হয়েছে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। আহত তৃণমূল কর্মীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করানো হয়। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন।
শুক্রবার হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে বিশ্বনাথবাবু বলেন, “আমি রাজনীতি করি না। কিন্তু যে ভাবে মার খেতে হল, তাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? বাড়ির মহিলারা প্রতিবাদ করলে হামলাকারীরা তাঁদেরও ছেড়ে কথা বলেনি।” স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ সরকার বলেন, “কিছু দিন আগে গুপ্তিপাড়ায় একটি কলেজের গণ্ডগোলে বহিরাগতেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের উপরে হামলা চালায়। এ দিনও তার পুনরাবৃত্তি হল।”
বেশ কিছু দিন ধরেই বলাগড়ের গুপ্তিপাড়া ১ পঞ্চায়েত এলাকায় দলের স্থানীয় নেতাদের গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল শিবিরের খবর, দুই গোষ্ঠীর এক দিকে রয়েছেন দলীয় বিধায়ক অসীম মাঝি, ব্লক সভাপতি বিশ্বনাথ দাস, কার্যকরী সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায়। অপর গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে মূলত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসীম রায় এবং ব্লকের কার্যকরী সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। বিধায়কের গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত দলের অঞ্চল সভাপতি অরুণ দেবনাথই সভা ডেকেছিলেন বৃহস্পতিবার। অন্য গোষ্ঠীর নেতাদের তাতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। সেই নিয়েই গোলমাল বাঁধে। তৃণমূলেরই একাংশের অভিযোগ, দলের উপরে নেতাদের আদৌ কোনও ‘নিয়ন্ত্রণ’ নেই।
তৃণমূল নেতৃত্ব গোষ্ঠীকোন্দলের কথা সরাসরি স্বীকার করেননি। দলের জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। দল তদন্ত করে দেখবে।” তপনবাবুর বক্তব্য, “বহিরাগত কিছু সিপিএমের লোক এই হামলা চালিয়েছে বলে আমরা জেনেছি। তবে, ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কেউ যুক্ত থাকলে দল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হবে।” বলাগড়ের বিধায়ক অসিম মাঝির অবশ্য স্বীকারোক্তি, “এক দল বহিরাগত যুবক আমাদের দলের কয়েক জন কর্মীর মদতে হামলা চালায়। তবে, এটা কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়।” দলের স্থানীয় নেতা মধু ঘোষ বলেন, “আমাদেরই এলাকায় দলের বৈঠক চলছে আমাদের না জানিয়ে। সেই অভিযোগ করাতেই বাইরে থেকে লোক এনে হামলা চালানো হল।” সিপিএমের স্থানীয় নেতাদের একাংশের বক্তব্য, এই ঘটনা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ঘটেছে। এর সঙ্গে সিপিএমের কোনও সম্পর্কই নেই। |