বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে খাওয়া জোটেনি। চোখের পাতা এক করতে পারছেন না কেউ। শুক্রবার দুপুরে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছনোর পরেও আতঙ্ক কাটেনি দুর্ঘটনাগ্রস্ত আপ দুন এক্সপ্রেসের যাত্রীদের।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জৌনপুরের কাছে লাইনচ্যুত হয় ওই ট্রেনের ১১টি কামরা। তার মধ্যে ছিল এস-১ কামরাটিও। ওই কামরায় ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ২৭ জন যাত্রী। এঁরা একসঙ্গে একটি পর্যটন সংস্থার সঙ্গে হরিদ্বার বেড়াতে যাচ্ছিলেন। শুক্রবার তাঁরা হাওড়ায় ফিরলেন। দুর্ঘটনার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা ভেবে এ দিনও কেঁদে ফেলছেন ওঁদের অনেকেই।
হাওড়ায় ফিরে এমনিতে উদ্ধারকার্য ও চিকিৎসার ব্যাপারে রেলের প্রশংসাই করেছেন ওই যাত্রীরা। তবে তাঁদের সকলেরই অভিযোগ, ঘটনার পর রেল তাঁদের খাওয়াদাওয়ার কোনও ব্যবস্থা করেনি। জৌনপুর থেকে একটা গাড়ি করে বারাণসী পৌঁছনোর পর ডাউন দুন এক্সপ্রেসে তাঁরা কোনও খাবার পাননি। ফলে প্রায় ২৪ ঘণ্টা অভুক্তই থাকতে হয়েছে। হাওড়ায় পৌঁছনোর পরে তাঁদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে রেল। |
আহত যাত্রী। —নিজস্ব চিত্র |
বারুইপুরের বাসিন্দা সরস্বতী নস্কর জানালেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনার সময় অধিকাংশ যাত্রীরই খাওয়া-দাওয়া হয়ে গিয়েছিল। কেউ শুয়ে পড়েছিলেন, কেউ গল্প করছিলেন, কেউ বা তাস খেলছিলেন। খাওয়ার পর তিনি নিজে শুয়েছিলেন উপরের বার্থে। আচমকাই তীব্র ঝাঁকুনি, তার পর বিকট শব্দ। তারপরেই সব লন্ডভন্ড হয়ে গেল। কে কোথায় ছিটকে পড়লেন, কার মালপত্র কোথায় গিয়ে পড়ল, তা কেউ জানে না।
সত্তরোর্ধ্ব প্রমীলা সর্দার বলেন, “আমার বুকে এখনও খুব ব্যথা। কে যেন আমার বুকের উপর আছড়ে পড়েছিল।” সরস্বতী বলেন, “আমার বুকেও কীসের যেন আঘাত লাগল। মনে হল ছিটকে গিয়ে জানলার উপর পড়েছি। দেখলাম গোটা কামরা ধুলোয় অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। সবাই চিৎকার করছে। আমিও প্রাণপণে চিৎকার করে বললাম, বাঁচাও। তার পর কী হয়েছে, মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরল, টের পেলাম জনা কয়েক লোক আমাকে টেনে তুলছেন।” যাদব অধিকারী নামে আর এক যাত্রীর কথায়, “কামরা থেকে কোনও রকমে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি, আরও ভয়ঙ্কর দৃশ্য। উল্টে যাওয়া কামরাগুলির অধিকাংশ চাকাই নেই। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ট্রেনের ভাঙা যন্ত্রাংশ। সে যেন এক ধ্বংসস্তূপ।” সে সময় সবার আগে উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন স্থানীয় গ্রামবাসীরাই। সরস্বতীকেও তাঁরাই টেনে বের করেছিলেন।
ওই কামরার আর এক যাত্রী সুরেশ চক্রবর্তী জানান, গ্রামবাসীরা শুধু যাত্রীদেরই উদ্ধার করেননি, যাত্রীদের ব্যাগ এমনকী চটি-জুতোও উদ্ধার করে দিয়েছেন। সরকারি সাহায্যও দ্রুত এসে পৌঁছেছিল। মেডিকেল ভ্যান ও টিম এসে আহত যাত্রীদের পরিচর্যা শুরু করেছিল। প্রথম দিকে পানীয় জলের সমস্যা হয়েছিল। যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছিল, সেখানে প্রবল গরম। “তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছিল। পরে এক কিলোমিটার দূরে একটা পাম্পহাউস থেকে জলের ব্যবস্থা করে রেল।” |