দুনে লাইন পরীক্ষা হয়নি, হাম্পিতে সিগন্যাল-বিধি ভঙ্গ
নিয়মের প্রথম পাঠ অগ্রাহ্য করায় রেল বিপর্যয়
রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানের আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হল!
মে মাসেই রেলের সব আঞ্চলিক কর্তাকে চিঠি দিয়ে সুরক্ষা সংক্রান্ত স্বাভাবিক ও প্রাথমিক নিয়মবিধি পালন করা হচ্ছে কি না, তা যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় মিত্তল। তাঁর আশঙ্কা ছিল, রেলের স্বাভাবিক সুরক্ষা বিধি সব জায়গায় যথাযথ ভাবে মানা হচ্ছে না। তাই বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যখন-তখন।
মিত্তলের সেই আশঙ্কা যে অমূলক নয়, ন’দিনের মধ্যে দু’টি বড় রেল দুর্ঘটনাই তার প্রমাণ। l ২২ মে অন্ধ্রপ্রদেশের পেনাকুন্ডায় দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির পিছনে ধাক্কা মারে হাম্পি এক্সপ্রেস। l ৩১ মে জৌনপুরে বেলাইন হয়ে উল্টে যায় দুন এক্সপ্রেস। রেলের প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে, দু’টি ক্ষেত্রেই রেলের সুরক্ষাজনিত প্রাথমিক নিয়মবিধি না-মানাই দুর্ঘটনার মূল কারণ।
কী ভাবে ভাঙা হচ্ছে সুরক্ষার প্রাথমিক নিয়ম?
রেলকর্তাদের একাংশ বলছেন, হাম্পি এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় রেলের সিগন্যাল দেওয়ার নিয়ম (৩.৩৮ রুল) মানেননি পেনাকুন্ডার স্টেশনমাস্টার ও সহকারী স্টেশনমাস্টার। নিয়ম মানেননি হাম্পি এক্সপ্রেসের চালক, সহকারী চালকও। ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়েছে ওই চার জনকে। আর দুন এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মানা হয়নি রেলের লাইন মেরামতি ও নজরদারির নিয়ম। তার জন্য দায়ী অফিসার ও কর্মীদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। সেফটি কমিশনারের তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরেই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জৌনপুরে সারানো হচ্ছে রেললাইন। পাশেই পড়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত
দুন এক্সপ্রেসের কামরা। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই
রেলের প্রাথমিক তদন্ত বলছে, গরমে লাইন বেঁকে যাওয়ায় লাইনচ্যুত হয়েছে দেরাদুনগামী দুন এক্সপ্রেস। গ্রীষ্মে লাইন বেঁকে যায় বলেই গাংম্যানদের দিয়ে নিয়মিত লাইন পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু ওই শাখার ‘পাথওয়ে ইনস্পেক্টর’ বা পিডব্লিউআই-এর অধীন গ্যাংম্যানেরা লাইন পরীক্ষা করেননি। ঠিকঠাক পরীক্ষা (‘সামার প্যাট্রলিং’) হলে গরমে লাইন বেঁকে যাওয়ার ব্যাপারটা ধরা পড়ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা (রেলের পরিভাষায় ‘ডি-স্ট্রেসিং’) নেওয়া যেত। সেটা হয়নি বলেই বেঁকে যাওয়া লাইনে ছুটতে গিয়ে উল্টে যায় দুন এক্সপ্রেস।
ঠিকঠাক লাইন পরীক্ষা হচ্ছে না কেন?
এক রেলকর্তা জানান, রেলের সুরক্ষা সংক্রান্ত লক্ষাধিক পদ খালি। তার অনেক পদই গ্যাংম্যানের। ওই কর্মীরা মূলত হেঁটেই লাইন পরীক্ষা করেন। এখন গ্যাংম্যানের অভাবে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে লাইন পরীক্ষা করানো হচ্ছে। ফলে ওই কাজে ফাঁক থেকে যাচ্ছে অনেক। যেমন,
‘ব্যালাস্টিং প্যাকিং’ অর্থাৎ লাইনে ঠিকমতো পাথর ফেলার কাজ হয়নি। l ঠিকমতো তেল বা গ্রিজ দেওয়া হয়নি প্যান্ড্রোল ক্লিপে।
সুইচ এক্সপানশন জয়েন্ট (ফিশপ্লেট) ঠিকমতো বসানো হয়নি। তাই গরমে লাইন বেড়ে গিয়ে বেঁকে গিয়েছিল।
কোনও ট্রেন যাওয়ার আগে লাইন পরীক্ষা করাটা প্রাথমিক নিয়ম। সেই নিয়মটাই মানা হয়নি। দুন এক্সপ্রেসের সহকারী চালক বাঁক ঘোরার সময়েই লাইনের ফাটল দেখতে পেয়েছিলেন।
নিয়ম মানা হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে দুন এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা আরও একটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। রেলের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ কতটা হচ্ছে? ট্রেনের কামরা যদি আধুনিক ‘এলএইচবি প্রযুক্তি’তে তৈরি হত, তা হলে দুন এক্সপ্রেসের ওল্টানো কামরাগুলি দুমড়ে যেত না বলে রেলকর্তাদের অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
কামরা যদি ওই প্রযুক্তিতে তৈরি হয়, সে-ক্ষেত্রে ১৬০ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন ছুটতে ছুটতে দুর্ঘটনা ঘটলেও তা ওল্টায় না, ভাঙে না। এবং একটি কামরা অন্যটির মধ্যে ঢুকে যায় না। জার্মানির ওই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এখন এই ধরনের কামরা তৈরি হচ্ছে কাপুরথালা কোচ কারখানায়। ইতিমধ্যে রাজধানী, শতাব্দী, দুরন্ত এক্সপ্রেস তো বটেই, আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনে ওই কামরা লাগানো হয়েছে। রেল বোর্ডের অন্যতম সদস্য (ইঞ্জিনিয়ারিং) এপি মিশ্র বলেন, “দুন এক্সপ্রেসের কামরাগুলো সাবেক কালের। এলএইচবি কামরা হলে দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি কম হত।”
পুরনো কামরা পাল্টানো হচ্ছে না কেন?
রেল সূত্রের খবর, এখন সারা দেশে বিভিন্ন ট্রেনে প্রায় ১০০০টি এলএইচবি কামরা আছে। সব ট্রেনে সাবেক কালের কামরা পাল্টাতে আরও ৪০ হাজার এলএইচবি কামরা প্রয়োজন। এই ধরনের প্রতিটি কামরার দাম প্রায় আড়াই কোটি টাকা। কিন্তু রেলের ভাঁড়ার শূন্য। তাই ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই রেলের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.