একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ, মুদ্রাস্ফীতি, আর্থিক মন্দার আঘাতে দিশেহারা ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে নামার বদলে নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামাল দিতেই ব্যস্ত প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। গত কাল লালকৃষ্ণ আডবাণী নিজের ব্লগে নাম না করে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। আর এ দিন বিজেপি-র মুখপত্রে নাম না করে কড়া সমালোচনা করা হল দলে প্রধানমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার নরেন্দ্র মোদীর। যদিও তা সত্ত্বেও নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে ক্রমশ সক্রিয় হচ্ছেন মোদী।
বিজেপি-র একাংশেরও বক্তব্য, দলীয় মুখপত্রে যতই সমালোচনা করা হোক, দক্ষ প্রশাসক হিসেবে মোদী জাতীয় রাজনীতিতে ক্রমশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন। আজ দিল্লিতে যোজনা কমিশনের বৈঠকে এসে তিনি তা প্রমাণ করেছেন বলেও ওই শিবিরের দাবি। আর্থিক সঙ্কট প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকে এক হাত নিয়ে মোদী আজ বলেন, “গোটা দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক হারে নেমে এলেও গুজরাত কিন্তু ব্যতিক্রম। আর্থিক বৃদ্ধি দুই অঙ্কে ধরে রেখেছে।”
বিজেপি-র মুখপত্রের সম্পাদক প্রভাত ঝা-র লেখায় অবশ্য মোদীর পাশাপাশি কর্নাটক এবং রাজস্থানের দলীয় নেতৃত্বকেও আক্রমণ করা হয়েছে। এবং প্রভাত পরে বলেন, “কোনও ব্যক্তিকে নিশানা করে এই সব কথা বলা হয়নি। একার অবদানে নয়, সকলকে সঙ্গে নিয়েই যে দল চলে, সেই বার্তা দিতেই ওই মন্তব্য করা হয়েছে।”
আজ রাতেই অটলবিহারী বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে দেখা করেন মোদী। আডবাণীর সঙ্গে মোদীর দূরত্ব বেশ কিছু দিন ধরে বেড়ে চলেছে। আডবাণী-মোদী সাক্ষাতের পরে বিজেপি শিবির থেকে দাবি করা হয়, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধের ‘গল্প’ যে ঠিক নয়, তা আজ প্রমাণ হয়ে গেল।
এক দিকে জাতীয় মঞ্চে মোদীর প্রাসঙ্গিকতা বৃদ্ধি পাওয়া, অন্য দিকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে বিরোধ এই পরিস্থিতিতে কর্তৃত্ব ধরে রাখতে মোদীর উপর নিতিন ক্রমশ নির্ভরশীল হচ্ছেন বলে মনে করছেন বিজেপি-র অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, সেই কারণেই মুম্বইয়ে দলের নীতি নির্ধারক কমিটিতে মোদীকে রাখার জন্য সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় জোশীকেও বাদ দিতে দ্বিধা করেননি তিনি। বিজেপি-র এক নেতার কথায়, “শীর্ষ নেতৃত্বের বিরোধিতার মুখে এখন নিতিনের পক্ষে একা কুম্ভ হয়ে সমস্ত আক্রমণ সামলানো সম্ভব নয়। তাই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকেই নিতিন এবং নরেন্দ্র একে অপরের কাছাকাছি আসছেন।” বিজেপি শিবিরের একাংশের দাবি, নিতিন-মোদী জুটি এখন অন্যদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করেই ভোটে যেতে চায় দলের একাংশ। কিন্তু গোধরা পরবর্তী সময়ে মোদীর সংখ্যালঘু-বিরোধী ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তা বিজেপি-র একাধিক শীর্ষ নেতার। |