সরকারি পরিবহণ সংস্থার মতো ঢাকঢোল পিটিয়ে নয়, বৃহস্পতিবার প্রায় নিঃশব্দে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের নোটিস দেওয়া হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের অধীনস্থ ওয়েবেল-এ। এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে গেলে এক সপ্তাহের মধ্যে আবেদন করতে হবে বলে জানিয়েছেন ওয়েবেল কর্তৃপক্ষ। যদিও সংস্থার ৩৫০ জন কর্মীর মধ্যে খুব কমই স্বেচ্ছাবসর নিতে আগ্রহী বলে জানাচ্ছেন ওয়েবেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রবীরকুমার দাস নিজেই।
ব্রিটিশ সংস্থা ডিএফআইডি-র টাকায় ওয়েবেলের পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয় ২০০৩ সালে। দ্বিতীয় দফার পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া ২০০৯ সালে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তত দিনে রাজ্যে ‘পরিবর্তনের হাওয়া’ এসে গিয়েছে। ফলে থমকে যায় পুনর্গঠনের কাজ। কারণ, পুনর্গঠনের সঙ্গে কর্মীদের স্বেচ্ছাবসরের বিষয়টিও জড়িত। লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে বিধানসভা ভোটের আগে এই স্পর্শকাতর বিষয় থেকে গা বাঁচিয়ে চলতে চেয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার।
বৃহস্পতিবার দিনের শেষে ওয়েবেল ভবনে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের যে নোটিস দেওয়া হয়েছে, তা অবশ্য পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অঙ্গ নয় বলেই দাবি সংস্থার এমডি-র। প্রবীরবাবু বলেন, “গত বার স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে যাঁরা আগ্রহী ছিলেন, অথচ কোনও কারণে সেই সুযোগ নিতে পারেননি, তাঁদের কথা ভেবেই এই নোটিস দেওয়া হয়েছে। কয়েক জন বয়স্ক কর্মী স্বেচ্ছাবসর নিতে ইচ্ছুক।”
যদিও ওয়েবেলের কর্মীরা এই সাফাই মানতে নারাজ। এই নোটিসকে অশনি-সঙ্কেত হিসেবে দেখে তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার যখন সংস্থার ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলছে, তখন এ ধরনের পদক্ষেপ কর্মীদের মনোবল ভেঙে দেবে। প্রসঙ্গত গত নভেম্বর মাসে ওয়েবেল ভবনে সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিল্প তথা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সে সময় তিনি জানান শুধুই ‘ফেসিলিটেটর’ বা সহায়ক সংস্থা হিসেবে নয়। ওয়েবেলকে তার মূল কাজে ফেরাতে হবে। অর্থাৎ ইলেকট্রনিক্স ও সংশ্লিষ্ট উৎপাদন শিল্পে সংস্থার এত দিনের দক্ষতাকে কাজে লাগানোই হবে নতুন সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
আগের বাম সরকার অবশ্য রাজ্যের কাজ ব্যবসা করা নয়, এই নীতি মেনেই ২০০৩ সালে ২৬টি সংস্থাকে পুনর্গঠনের জন্য চিহ্নিত করেছিল। এই তালিকায় ওয়েবেল-এর ৭টি শাখা সংস্থাও অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে ‘ওয়েবেল কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স’ ও ‘ওয়েবেল কমিউনিকেশন্স’-এর ক্ষেত্রে পুরোপুরি সরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়নি বিশেষজ্ঞ সংস্থা। কারণ টেলিভিশন বা পুশ-বাটন টেলিফোন তৈরির মতো শিল্পের বাজার মরে যায়নি।
তবে সেই পরামর্শ অবশ্য শেষ পর্যন্ত কাজে লাগানো যায়নি। কারণ বাজারের চাহিদার সঙ্গে তাল রেখে উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে পারেনি ওয়েবেল-এর ওই শাখা সংস্থা দু’টি। তথ্যপ্রযুক্তি দফতর সূত্রে খবর ওয়েবেল কনজিউমার ইলেকট্রনিক্সের কারখানা কিনতে চেয়েছিল ভিডিওকন, প্যানোরামা, চিরাগ-সহ বেশ কিছু সংস্থা। প্রবীরবাবু জানান, এই শাখা সংস্থা চাঙ্গা করার নয়া পরিকল্পনা সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। |