মন্দার ছোবলে কাঁপছে গাড়ি শিল্প। এপ্রিলেই মিলেছিল অশনি সঙ্কেত। পরিসংখ্যান বলছে, মে মাসেও দেশের বৃহত্তম গাড়ি সংস্থা মারুতি-সহ বেশ কয়েকটি সংস্থার বিক্রি কমেছে। দেখা যাচ্ছে, কেউ কেউ পেট্রোল গাড়ির বিক্রি কিছুটা বাড়াতে পারলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাজার ধরে রাখতে সংস্থাগুলিকে ভরসা করতে হচ্ছে ডিজেল গাড়ির উপর। অর্থাৎ গত মাসে এই পেট্রোলের দাম এক লাফে সাড়ে সাত টাকা বেড়ে যাওয়ার ধাক্কা ভালই টের পাচ্ছে সংস্থাগুলি।
বাজেটে উৎপাদন শুল্ক বৃদ্ধি ও চড়া সুদের কোপে এমনিতেই কম দামি ছোট গাড়ির বিক্রিতে ভাটা। সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (সিয়াম)-এর হিসেব অনুযায়ী, গত এপ্রিলে আগের বারের চেয়ে যাত্রী-গাড়ির বিক্রি বাড়ে মাত্র ৩.৪%। দশ বছরে সর্বনিম্ন। এর উপর পেট্রোলের সাম্প্রতিক দাম বৃদ্ধিও যে মধ্যবিত্ত গ্রাহকের স্বপ্নে বাদ সেধেছে, তা কিছুটা স্পষ্ট হয় শুক্রবার। সিয়াম আগামী সপ্তাহে সার্বিক গাড়ি বিক্রির খতিয়ান প্রকাশ করবে। তার আগে এ দিনই অনেক সংস্থা তাদের হিসেব দিয়েছে। সেখানে প্রথম সারির বেশ কিছু সংস্থার বিক্রি কমে যাওয়ার ছবিটা সামনে আসায় আশঙ্কার মেঘ দেখছে গাড়ি শিল্প। |
যেমন, মারুতি-সুজুকি। সংস্থার বিক্রি ৪.৩% কমেছে। রফতানি কমেছে ১০%। ফোর্ড মোটর ও জেনারেল মোটরের বিক্রি কমেছে যথাক্রমে ১৪% ও ২৭%। হুন্ডাই মোটরের রফতানি ৪২% বাড়লেও, ভারতে বিক্রি বেড়েছে মাত্র ২.৮%। সংস্থার কর্তা অরবিন্দ সাক্সেনা বলেন, “চাহিদা বাড়ানোর উৎসাহমূলক কোনও নীতি নেই। উপরন্তু পেট্রোলের দাম বাড়ায় আরও ভাটা পড়েছে ক্রেতাদের উৎসাহে।” ফোর্ড কর্তা মাইকেল বোনহ্যাম জানিয়েছেন, চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভবিষ্যতে আরও ডিজেল গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
তবে অডি-র বিক্রি বেড়েছে ১০%। মহীন্দ্রা-র বিক্রি বেড়েছে প্রায় ২৮%। পেট্রোল গাড়ি হলেও মূলত ব্রিও ও সিটি-র উপর ভর করে বিক্রি ৩৪৩% বাড়িয়েছে হোন্ডা সিয়েল কার। বস্তুত, ব্রিও বাজারে এনে ছোট গাড়ির বাজার ধরেছে তারা। জাপানে সুনামির জন্য গত বছরের এপ্রিলে ধাক্কা খেয়েছিল টয়োটা কির্লোস্কার। এ বার তাদের বিক্রি দ্বিগুণ বেড়েছে।
দু’চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে মে-তে প্রতিক্রিয়া মিশ্র। টিভিএস-এর বিক্রি কমলেও হিরো মোটো কর্প বিক্রি বাড়িয়েছে ১১%। হোন্ডা মোটরসাইকেল অ্যান্ড স্কুটার ও সুজুকি মোটরসাইকেলের বিক্রি বৃদ্ধি যথাক্রমে ৫২% ও ২২%।
সিয়ামের ডিজি বিষ্ণু মাথুরের বক্তব্য, যাত্রি-গাড়ি বিক্রি তলানিতে ঠেকলেও ২০০৮-এর মন্দা-পরিস্থিতি আসেনি এখনও। কারণ দু’চাকা ও বাণিজ্যিক গাড়ির বিক্রি বাড়ছে। কিন্তু দেশের এখন যা আর্থিক পরিস্থিতিতে, তাতে কেন্দ্র দ্রুত ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত না নিলে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাঁরা। তিনি বলেন, “সুদ কমানো জরুরি। চাই নগদ জোগানের সহজ পথও। না হলে বিপদ হবে।” আর আপাতত সেই আশা-নিরাশার দোলাচলেই দিন গুনছে গাড়ি শিল্প। |