আপনার মুখোমুখি |
|
ভেবেচিন্তে এগোতে সময় লাগবে
গত ২৮ মে শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে আনন্দবাজারের পাঠকদের
মুখোমুখি হয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। নানা দাবি-দাওয়া,
প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন কিশোর সাহা।
অনুষ্ঠানের বাছাই প্রশ্নোত্তরের প্রথম পর্ব আজ প্রকাশিত হল। |
|
মালবাজার থেকে সন্ধ্যার পরে শিলিগুড়ি কিংবা জলপাইগুড়ির বাস নেই। কিছু করতে পারেন? সেবকের করোনেশন সেতুর হাল খারাপ। বর্ষায় সমস্যা বাড়ে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেবকে পাহাড় এড়িয়ে রেলসেতু বরাবর ‘ব্রিজ’ করার ব্যাপারটা কত দূর এগিয়েছে?
নীতা সাহা। বেসরকারি স্কুল অধ্যক্ষা, মালবাজার। |
• সন্ধ্যার পরে বাস চালালে যাত্রী হবে কি না, দেখা দরকার। এনবিএসটিসি-র কোষাগারের বেহাল দশা করে গিয়েছে আগের সরকার। ‘হ্যাঁ, বাস চালাব’ গোছের প্রতিশ্রুতি দিতে পারছি না। এনবিএসটিসি-র এমডি-কে বলব খোঁজ নিতে। তার পরে ব্যবস্থা নেব। দ্বিতীয়ত, সেবকে বিকল্প সেতুটা হোক তা আমরাও চাই। এটা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সমীক্ষা করা হচ্ছে বলে শুনেছি। বিশদ প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরির কাজ এগোচ্ছে কি না, খোঁজ নেব।
|
মালবাজারে নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। একটি ছোট কমিউনিটি হল আছে। সেটাতে সব অনুষ্ঠান করা যায় না। এই অবস্থায়, শহরে একটি খোলা মঞ্চ হলে মানুষ উপকৃত হবেন। তা ছাড়া, মালবাজারে মহিলা কলেজ নেই। যে কলেজ রয়েছে, সেখানে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়নি।
কৃষ্ণা সেন। শিক্ষিকা, মালবাজার। |
• মালবাজারের মতো এলাকায় ভাল কমিউনিটি হল নেই, এটা দুর্ভাগ্য। আপনি পুরসভাকে বলুন, তারা যাতে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে প্রস্তাব পাঠায়। পুরসভাকে লিখিত প্রস্তাব দিন আপনারা। তার একটি প্রতিলিপি আমাকে দেবেন। আমি পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে কথা বলব। ডুয়ার্সে একটি হিন্দি মাধ্যমের কলেজ তৈরি করার কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে মালবাজারে মহিলা কলেজ করার পরিকল্পনা নেই। পরিমল মিত্র কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ যাতে চালু হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগী হব।
|
তিস্তা সেতুর বেহাল অবস্থা। তা নিয়ে কিছু ভাবছেন? আর জলপাইগুড়ি শহরে সিটি-বাস চালু করা যায় কি?
শীলা দত্ত ঘটক। কলেজ শিক্ষিকা, জলপাইগুড়ি। |
• তিস্তা শুধু নয়, জলঢাকা নদীর সেতুরও বেহাল দশা। সেতু দু’টি ‘ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়া’র অধীন। তারা ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর করবেন বলে নতুন করে সংস্কারের কাজে হাত দিতে চাইছেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সচিবদের একটি প্রতিনিধি দল সেতু পরিদর্শন করে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি নিয়ে চিঠি দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়েছি। আর ‘সিটি বাস’ চালানোর জন্য শহরের রাস্তা চওড়া হওয়া দরকার। বিষয়টি পুরসভাকে দেখতে হবে। আপনারা পুরসভাকে বলুন। পরে পুরসভার মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রস্তাব আসুক রাজ্য সরকারের কাছে।
|
মুখ্যমন্ত্রী আমবাড়িতে রেলগেট তৈরি করার কথা বলেছিলেন। জায়গাটি বন্ধ হয়ে রয়েছে। ফলে, বাসিন্দাদের তিস্তা ব্যারেজের রাস্তা দিয়ে যাতায়াতে নানা অসুবিধে হচ্ছে। বিশ্বজিৎ দাস। সম্পাদক, ফোসিন, শিলিগুড়ি। |
• একটি দুর্ঘটনায় ওই লেভেল ক্রসিংয়ে এক জনের মৃত্যু হয়। তার পর থেকে ওই জায়গা দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দেন স্থানীয়রা। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে গজলডোবা, সাহুডাঙিতে লেবেল ক্রসিং এবং বেলাকোবায় আন্ডারপাসের কথা জানিয়েছি। সেক্ষেত্রে সেখানে ৩ জন কর্মী নিয়োগ করতে হবে। প্রচুর টাকার দরকার। তার একটি অংশ রাজ্য বহন করবে। বাকিটা রেল। আমাদের কোনও অসুবিধে নেই। |
|
ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক। |
বিদ্যুৎ, ফোনের জন্য রাস্তার গাছ কেটে ফেলতে হয়। তার মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে গেলে সে সমস্যা দূর হবে। কিছু করা যায় কি? শিলিগুড়িতে জলস্তর নামছে। নতুন অ্যাপার্টমেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে অনুমতি না নিয়ে গভীর নলকূপ বসিয়ে প্রচুর জল তোলা হচ্ছে। এটা বন্ধ করলে ভবিষ্যতে জলসঙ্কট থেকে রক্ষা পাবে শিলিগুড়ি।
সুজিত রাহা। পরিবেশপ্রেমী, শিলিগুড়ি। |
• বিদ্যুৎ-সহ সমস্ত তার মাটির নীচে দিয়ে নিয়ে যেতে পারলে তার থেকে ভাল কিছু হয় না। ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থাও হওয়া উচিত। প্রচুর টাকার প্রয়োজন। মাননীয় মন্ত্রী মণীশ গুপ্তের সঙ্গে কথা বলব। কোনও পরিকল্পনা করা যায় কি না তা ভাবা হবে। খুব তাড়াতাড়ি কিছু হবে না। পাশাপাশি গভীর নলকূপ করার ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে এই আইন আছে। আমাদের দুর্ভাগ্য গত পুর-বোর্ড আইন মানা হচ্ছে কি না তা খেয়াল করেনি। এই পুরসভাও ‘অন্য নানা কাজে ব্যস্ত’ থাকায় হয়তো খেয়াল রাখতে পারছে না। তবুও জল সংরক্ষণের বিষয় নিয়ে পুরসভার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।
|
হাসপাতালে কার্ডিওলজিস্ট নেই। চার সার্জনের ২ জন রয়েছেন। মেডিসিনে ৪ জনের মধ্যে ২ জন। হাসপাতালে অন্তর্বিভাগে শয্যার সংখ্যা কম। গত সরকারের সময় একটি নতুন ভবনের কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে শুনেছি। এ ভাবে হাসপাতাল চলবে?
শ্বেতা সরখেল। সংস্কৃতিকর্মী, জলপাইগুড়ি। |
• ঘটনাচক্রে, আমি রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান। হাসপাতালে প্রচুর দুর্নীতি হয়েছে। ৯০ হাজার টাকায় জেনারেটর ভাড়া করে রাখা হয়েছে। একটি অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য ৩ চালক এবং ১ জন খালাসি রাখা হয়েছে। তারা সুপারের বাড়িতে কাজ করছে। বিষয়টি আমি দেখছি। উত্তরবঙ্গে সমস্ত হাসপাতালে আসন, নার্স, টেকনিসিয়ান নিয়ে সমস্যা রয়েছে। আমার দফতর থেকে ৩৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়। হাসপাতালের উন্নতির চেষ্টা হচ্ছে। চিকিৎসক আনার চেষ্টা হচ্ছে। জলপাইগুড়ি হাসপাতালে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস হবে। শিলিগুড়ির দুই মাইলে হবে আরেকটি ক্যাম্পাস।
|
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে সাফাই কর্মী থেকে চিকিৎসকদের অনেকেই ঠিক সময়ে হাসপাতালে আসেন না। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকেন না। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীর কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানাই। পাশাপাশি নার্সিংহোমগুলির একাংশ লুঠ করছে। স্বাস্থ্যকর্তারা রহস্যজনকভাবে নীরব। নার্সিংহোমগুলির উপরে নজরদারি ব্যবস্থা চালু করা দরকার।
শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসক, শিলিগুড়ি। |
• দুটি ব্যপারেই আমি একমত। স্বাস্থ্য দফতর থেকে নানা সময়ে পরিদর্শন করা হয়। তাতে খুবই খারাপ অভিজ্ঞতা হয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কাছে এখনও যথেষ্ট কর্মী নেই। পুরসভায় স্বাস্থ্যের এক জন মেয়র পারিষদ রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলব। আর শৃঙ্খলার জন্য প্রচুর চেষ্টা করছি। মেডিক্যাল কলেজে বিভিন্ন জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। প্রচুর কোয়ার্টার ভাড়া দেওয়া হয়েছে। কড়া হাতে সে সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। টানা নজরদারি চলবে।
|
ডুয়ার্সে হিন্দু স্কুল হচ্ছে। কিন্তু, সাদ্রী সহ নানা ভাষাভাষীর মাতৃভাষা যাতে বিপন্ন না-হয়, সে জন্য সরকার উদ্যোগী হতে পারে না?
গৌতম গুহ রায়। ব্যাঙ্ককর্মী, জলপাইগুড়ি। |
• মানুষ কত দিন ধরে দাবি করছে। অথচ এত দিন তো হিন্দি স্কুল-কলেজ হয়নি। এত দিন ধরে তা নিয়ে সরব হননি কেন? আমরা এক বছরের মধ্যে তা তৈরির কাজ শুরু করেছি। আগে সেটা হোক। পাশাপাশি, মাতৃভাষার বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা না-বলে কিছু বলতে পারব না। |
(আগামী কাল শেষ পর্ব) |
|