পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দল নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে সামনে রেখে শিলিগুড়ি লাগোয়া গ্রামাঞ্চলে প্রচারে নেমে পড়ল দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার বিকালে শিলিগুড়ির কাছে বাগডোগরায় জনসভায় যোগ দেন সূর্যকান্তবাবু। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না-করে নানা প্রসঙ্গে আক্রমণ ও কটাক্ষ করেন। সূর্যকান্তবাবুর অভিযোগ, “এক বছরে সব কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করলেও আসলে সমস্যা কি তা উনি (মুখ্যমন্ত্রী) বোঝেন না। হাজার হাজার মানুষের কাছে পাট্টা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। গত এক বছরে ৬৭ জন সিপিএম কর্মী খুন হয়েছেন। দলের ৪০ হাজার কর্মী-সমর্থক ঘর ছাড়া হয়ে আছেন। যারা ঘরে ফিরেছেন তাঁদের জরিমানা দিতে হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন অফিস ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।” ওই সভায় প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও পাহাড়-জঙ্গল মহলের মূল সমস্যার সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ করে রাজ্য সরকারের কাজকর্মের কঠোর সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেস-তৃণমূলের বিবাদ, তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে খুনের ঘটনার উল্লেখ করেও সমালোচনা করেছেন। তাঁর কথায়, “শুধু বামফ্রন্টের উপরে আক্রমণ থেমে নেই। কংগ্রেসের উপরে আক্রমণ হচ্ছে। তৃণমূলে-তৃণমূলে লড়াই হচ্ছে। ভাঙড়, ক্যানিং, বীরভূমে তৃণমূল কর্মীরা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুন হয়েছে। রাজ্য জুড়ে একটা নৈরাজ্য পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে। ওই নৈরাজ্যের আগুনে শুধু বামফ্রন্টের কর্মীদের ক্ষতি হবে না। সবার ক্ষতি হবে। |
এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।” সম্প্রতি বাগডোগরায় কংগ্রেস ও তৃণমূল আলাদা আলাদা করে জনসভা করে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছে। কংগ্রেসের সভায় দীপা দাশমুন্সি, অধীর চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বামফ্রন্টের সঙ্গে তৃণমূলকেও আক্রমণ করেন। যুব নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে এসে জনসভা করে তৃণমূল। ওই সভা দুটিকে টেক্কা দিতে সকাল থেকেই তৎপর ছিলেন বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। শিলিগুড়ি শহর তো বটেই ফাঁসিদেওয়া, নকশালবাড়ি, মাটিগাড়া থেকে সমর্থকদের নিয়ে গিয়ে মাঠ ভরান বাম নেতারা। এ দিন সূর্যকান্ত মিশ্র সভার মাঠে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সূর্যকান্তবাবু বলেন, “যা ভিড় হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে মাঠ অনেক ছোট। আন্দোলন যত তীব্র হবে লোক বেশি হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ৫০টির উপরে চিঠি দিয়েছি। তিনি উত্তর দেননি। সে সব আমরা মানুষের মধ্যে বিলি করছি। আমাদের না দিক, মানুষকে জবাব দিতে হবে। এর পরে আরও বড় মাঠে আমাদের সভা করতে হবে।” মুখ্যমন্ত্রীর নাম না-করে বিরোধী দলনেতার কটাক্ষ, “ওঁর বার বার পালিয়ে যাওয়ার অভ্যেস রয়েছে। এক বার বিজেপি, এক বার কংগ্রেস করেন। অন্তত পাঁচ বার হয়েছে এরকম হয়েছে। সব মন্ত্রিত্বের লোভে। জাহাজ ডুবতে পারে বলে বুঝে যেমন ধেড়ে ইঁদুরেরা আগে পালায়, তেমন পালালে চলবে না। আমরা বলছি আপনি পাঁচ বছর থাকুন, পালিয়ে যাবেন না।” তিনি অভিযোগ করেন, গণতন্ত্রের জায়গায় রাজ্যে দলতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। স্কুল পরিচালন সমিতি, সমবায় সমিতি জোর করে দখল করে তৃণমূলের লোক বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ১০০ দিনের কটাক্ষ করে বলেন, “রাজ্য সরকার ১০০ দিন কাজ, ২০০ দিনের কাজ নিয়ে বই বের করেছেন। সেগুলো গরু রচনার মতো। এক কথা।” দার্জিলিং পাহাড়ের নানা সমস্যার উল্লেখের পরে গোর্খা লিগ সভাপতি মদন তামাংয়ের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান বিরোধী দলনেতা। |