তিন বছর আগের ঘূর্ণিঝড় আয়লার তাণ্ডবের পরে বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র তৈরির জন্য বিশ্বব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার। দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের ঘূর্ণিঝড়-প্রবণ এলাকাগুলিতে এই ধরনের আশ্রয় কেন্দ্র তৈরির জন্য রাজ্যের পাঠানো প্রস্তাব ঢেলে সাজতে বলল বিশ্বব্যাঙ্ক।
বড় এলাকা জুড়ে কম সংখ্যায় আশ্রয় কেন্দ্র গড়তে চেয়েছিল রাজ্য। বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে তাদের প্রস্তাব ছিল, তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা বিভিন্ন গ্রামের বিপন্ন বাসিন্দাদের জন্য বড় আকারের একটি করে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে সাহায্য করুক বিশ্বব্যাঙ্ক। কিন্তু বিশ্বব্যাঙ্ক বলেছে, অত বড় এলাকার জন্য একটি মাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই করলে হবে না। তার পরিবর্তে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বরং এক থেকে দেড় কিলোমিটার ব্যাসার্ধের এলাকা ধরে আরও বেশি সংখ্যায় ছোট ছোট আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করুক। তা হলে বাসিন্দারা নিজের গ্রামের কাছাকাছি বিকল্প আশ্রয় পেয়ে যাবেন। দূরের আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটতে হবে না। |
বিশ্বব্যাঙ্কের এই সুপারিশের ভিত্তিতে পুরো প্রকল্পটি নতুন করে তৈরি করছে রাজ্য সরকার। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান বৃহস্পতিবার মহাকরণে বলেন, এখন বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় ২৫০টি বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করবে রাজ্য। আশ্রয় কেন্দ্রগুলি কোথায় কোথায় হবে, তার জায়গা ঠিক করতে সমীক্ষা চলছে। চলছে মাটি পরীক্ষার কাজও। প্রায় ৬২০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ৭৫ শতাংশ টাকা দেওয়ার কথা বিশ্বব্যাঙ্কের। বাকি ২৫ শতাংশ টাকা দিতে হবে রাজ্যকে।
২০০৯ সালের ২৫ মে-র ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আয়লার অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শে এবং বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় আয়লা-বিধ্বস্ত তিন জেলায় নতুন আশ্রয় কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য সরকার। বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে পাঠানো রাজ্যের প্রথম প্রস্তাবে দু’হাজারের মতো দুর্গত মানুষকে আশ্রয় দেওয়া যায়, এমন ১৩৭টি আশ্রয় কেন্দ্র তৈরির কথা বলা হয়েছিল। আর প্রতিটিতে ১২৫০ জনের মতো বিপন্ন মানুষকে আশ্রয় দেওয়া যায়, এমন আশ্রয় কেন্দ্র তৈরির কথা ছিল ১৩টি। তার মধ্যে দক্ষিণ, উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে যথাক্রমে ৭৫, ৪৫ এবং ৩০টি আশ্রয় কেন্দ্র গড়ার কথা ছিল।
গোড়ায় ১৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র তৈরির যে-সব জমি চিহ্নিত হয়েছিল, নতুন পরিকল্পনায় সেই জায়গাতেই সেগুলি ছোট আকারে গড়ে তোলা হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর। বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জানান, আশ্রয় কেন্দ্রগুলির বেশির ভাগই তৈরি হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোনও বিদ্যালয়ের উদ্বৃত্ত জমিতে। দুর্যোগের সময় বাদ দিয়ে বিদ্যালয়গুলি পড়াশোনার কাজে আশ্রয় কেন্দ্রের বাড়ি ব্যবহার করতে পারবে।
এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় হলে বিপন্ন মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিলের টাকায় ওই তিনটি জেলায় ইতিমধ্যে মোট ৫০টি বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র তৈরির কাজ চলছে।
তার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে উত্তর ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের মোট ১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র তৈরির কাজ
আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন জাভেদ। |