স্বেচ্ছাবসর থেকে কর্মসংস্কৃতির উন্নতি রাজ্যের রুগ্ণ সরকারি পরিবহণকে চাঙ্গা করতে বছরখানেক ধরে বিবিধ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হচ্ছে। মন্ত্রীর দাবি: রাস্তায় এখন সরকারি বাস বেশি চলছে, বেড়েছে টিকিট বিক্রির আয়। কিন্তু সেই দাবি আমজনতার বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না। এখনও বেশ কিছু রুটে সরকারি বাসের জন্য যাত্রীদের যেমন হা-পিত্যেশ করতে হচ্ছে, তেমন ফের অনিয়মিত হয়ে পড়েছে পরিবহণ-কর্মীদের বেতনও।
এই পরিস্থিতিতে সরকারি মহলের একাংশ মেনে নিচ্ছেন যে, সরকারি পরিবহণকে এখনও রোগশয্যা থেকে দাঁড় করানো যায়নি। বস্তুত সেই কারণেই মুশকিল আসানের পথ খুঁজতে আজ, শুক্রবার পরিবহণ নিগমগুলির কর্তাদের নিয়ে মহাকরণে আবার বৈঠকে বসছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র।
এক দিকে জ্বালানি ও যন্ত্রাংশের দাম দিন দিন বাড়লেও বাসভাড়া বাড়েনি। অন্য দিকে অতিরিক্ত কর্মীর বোঝা। দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে রাজ্যের পাঁচটি পরিবহণ নিগমের নাভিশ্বাস উঠেছে। তাদের কর্মীদের বেতন জোগাতেই ফি বছর রাজ্যের কোষাগার থেকে ভর্তুকি বাবদ বেরিয়ে যায় প্রায় পাঁচশো কোটি টাকা। বাম আমলের শেষাশেষি সরকার-নিয়োজিত উপদেষ্টা সংস্থা এই ‘খয়রাতি’ বন্ধের সুপারিশ করে বলেছিল, নিগমগুলোকে স্বাবলম্বী করতে স্বেচ্ছাবসরের মাধ্যমে ‘কর্মী-মেদ’ কমানো জরুরি। কিন্তু ইউনিয়নের বিরোধিতার আশঙ্কায় বাম সরকার সে পথে এক পা-ও এগোতে পারেনি।
ফলে লোকসানে ন্যূব্জ সরকারি পরিবহণের ঘাড় থেকে বাড়তি লোকের বোঝাও তখন নামানো যায়নি। এ দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে সমস্যার সুরাহায় যে ক’টি পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করে, সেই তালিকাতেও অন্যতম ছিল স্বেচ্ছাবসর দিয়ে বাসপিছু কর্মীহ্রাসের পরিকল্পনা। তবে এ বার পরিস্থিতি ছিল অনেকটা অনুকূল। কারণ, ওই উদ্যোগে অধিকাংশ কর্মীর সমর্থন ছিল। এমনকী, বাম প্রভাবিত ইউনিয়নও বিরোধিতা করেনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও দশ মাস আগে ঘোষিত পরিকল্পনাটি কার্যকর হয়নি এখনও। কেন?
মদনবাবুর ব্যাখ্যা, “নিগমগুলো নিজেরা বিচার-বিবেচনা করছে। আশা করি, শিগগিরই একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।”
পরিবহণ-কর্তাদের একাংশের মতে, সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে এই ‘বিলম্ব’ পরিস্থিতিকে আরও সঙিন করে তুলছে। বিভিন্ন নিগমে কর্মীরা মার্চের বেতন পেয়েছেন এপ্রিলের শেষে। এপ্রিলের বেতন হয়েছে বহস্পতিবার, অর্থাৎ মে’র শেষ দিনে। আর মে মাসের মাইনে কবে মিলবে, তা অনিশ্চিত। যদিও মন্ত্রীর দাবি, “আমরা আসার আগে থেকেই বেতন অনিয়মিত হচ্ছিল। এখন বরং কিছুটা উন্নতি হয়েছে। চেষ্টা হচ্ছে, যাতে ১০ তারিখের মধ্যে মাইনে দেওয়া যায়।”
দফতর সূত্রের খবর: ২০১০-১১ অর্থবর্ষে সিএসটিসি-র বেতন বাবদ বরাদ্দ হয়েছিল ১১৯ কোটি টাকা। ২০১১-১২য় তা কমে হয়েছে ১০৭ কোটি। অথচ সেই তুলনায় কর্মী-সংখ্যা কমেনি, বাড়েনি আয়ও। কাজেই সরকারি পরিবহণ বেহালই হয়ে আছে।
এবং সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও হাল না-ফেরায় এ বার আন্দোলনে নামতে চলেছে বাম কর্মী ইউনিয়ন। প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী তথা সিপিএম প্রভাবিত সড়ক পরিবহণ শ্রমিক সংগঠনের নেতা অনাদি সাহু বলেন, “এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব পরিবহণের প্রভূত উন্নতি এবং আয়বৃদ্ধির দাবি করছেন। অন্য দিকে শ্রমিকদের অনিশ্চয়তা ক্রমে বাড়ছে। প্রতিবাদে আমরা সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলনে নামছি।”
|
মমতা-হত্যার চক্রান্তের কথা জানে না কেন্দ্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে মার্কসবাদী, মাওবাদী, আইএসআই, উত্তর কোরিয়া, ভেনেজুয়েলা ও হাঙ্গেরি মিলে খুনের চক্রান্ত করছে বলে কোনও তথ্য নেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম এ কথা জানিয়েছেন। সম্প্রতি একটি মার্কিন সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খুনের চক্রান্তের কথা বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, মার্কসবাদী শত্রুরা মাওবাদীদের সঙ্গে তাঁকে খুনের চক্রান্ত করছে। এতে আইএসআই-ও জড়িত। চক্রান্তকারীদের আর্থিক মদত দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া, ভেনেজুয়েলা ও হাঙ্গেরির মতো কমিউনিস্ট শাসিত দেশগুলি। তাঁর ‘প্রাণদণ্ড’ ঘোষণা করে ফেসবুক, ই-মেলে প্রচার চলছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। আজ চিদম্বরমকে প্রশ্ন করা হয়, কোনও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাই মমতাকে এই বিষয়ে সতর্ক করেছিল কি না। চিদম্বরম বলেন, “এই বিষয়ে কিছু জানা নেই।” সিপিএম অবশ্য ফের এই অভিযোগ ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। পলিটব্যুরো নেতা সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে উনি এমন সব রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন, যাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছু হতে পারে না।” |