কলেজ থেকেই ভোটে হাজির ‘তাজা’ মুখেরা
মা, এতটুকু মেয়ে কাউন্সিলর হবে না কি!
তৃণমূলের প্রার্থী দেখে মুখ ফস্কে বেরিয়েই গিয়েছিল পাড়ার এক কাকিমার। হবে না-ই বা কেন? ‘প্রার্থী’ বলতেই যাঁরা করজোড়ে পোড় খাওয়া মুখ দেখতে অভ্যস্ত, ছটফটে অষ্টাদশীকে দেখে তাঁরা অবাক! ঈষৎ কুণ্ঠিত কণ্ঠে ‘একটু দেখবেন’, ‘আমায় ভোট দেবেন’ শুনে বিগলিতও কেউ-কেউ!
মহানন্দা পল্লিতে বাড়ি বাড়ি প্রচার চলছিল। পরনে সাদা-সবুজ শাড়ি, গলায় তৃণমূলের উত্তরীয় জনাকয় সঙ্গী নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে ঘুরছিলেন সদ্য কলেজে ঢোকা গৌরী বিশ্বাস। দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। দরজায় এসে দাঁড়াতেই ভিতরে ডেকে নিচ্ছিলেন মহিলারা। তাঁদেরই এক জন শ্যামলী বিশ্বাস বলেই ফেললেন, “ভাবতেই পারছি না, এইটুকু মেয়ে প্রার্থী হতে পারে!” তফসিলি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত দুর্গাপুরে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানেই গৌরীকে প্রার্থী করে ‘চমক’ দিয়েছে তৃণমূল। বাড়ির কেউ রাজনীতির ধারে-কাছে নেই। স্থানীয় সেন মার্কেটের উল্টো দিকে রিকশার যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকান চালান বাবা গোপাল বিশ্বাস। দাদা সুরজ আছেন বেসরকারি সংস্থায়। মা সুনীতা ঘর সামলান।
গৌরী বিশ্বাস।
ছবি: বিশ্বনাথ মশান
পবিত্র বিশ্বাস।
ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
তবে? তিনি হঠাৎ প্রার্থী? কলেজে অনেকের মতোই একটু-আধটু টিএমসিপি করেন গৌরী। বলার মতো কিছু নয়। কিন্তু প্রার্থী খুঁজতে নেমে তাঁকেই মনে ধরেছে নেতাদের। আর তাঁদের সৌজন্যে পুরভোটে প্রার্থী হয়েই রাজনীতিতে হাতেখড়ি হচ্ছে গৌরীর। তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “ওখানে দলের তরুণ প্রজন্ম এমনই এক জনকে চেয়েছিল। তাদের কথাতেই গৌরীকে প্রার্থী করা হয়েছে।” গৌরীর বাবা বলেন, “মানুষের জন্য কাজ করবে বলেই মেয়েকে না করিনি।”
কুপার্স ক্যাম্পের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বিএ তৃতীয় বর্ষের পবিত্র বিশ্বাসকে দাঁড় করিয়ে সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে-ও বলছেন, “মানুষের কাছে সহজে পৌঁছতে পারে তরুণেরা। তাই প্রার্থী করা হয়েছে। তবে যোগ্যতাও থাকা চাই।” পবিত্রের ডাকনাম গোপাল। সেই নামেই এলাকার লোক তাঁকে চেনেন। গরিব এলাকা। বাসিন্দাদের কেউ নির্মাণকর্মী, কেউ রিকশাচালক, কেউ বিড়িশ্রমিক। পবিত্রর বাবাও একটি পাওয়ার লুমে কাজ করেন। অনেকে কষ্টে চাকদহ কলেজে পড়া চালিয়ে গিয়েছেন পবিত্র। আর করেছেন এসএফআই।
কিছু দিন আগেও ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাওয়া সেই গোপাল হাতজোড় করে ভোট চাইতে এলে অতএব ফিরিয়ে দিতে পারছেন না প্রায় কেউই। বরং গরমের হলকা থেকে বাঁচতে জল এগিয়ে দিচ্ছেন কেউ, কেউ বলছেন ঘরের ভিতরে চলে আসতে। পবিত্রের মতে, “এলাকার মানুষ জানেন, আমি কেমন ছেলে। তাঁরাও চান, আমার মতো তরুণেরাই পুরসভা পরিচালনা করুক।” তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর এক জন, কংগ্রেসের সঞ্জয়কুমার সাহা বয়সে বেশ বড় হলেও তৃণমূলের সুব্রত হালদারও যথেষ্ট ‘তরুণ’। রানাঘাট কলেজ থেকে বিএ পাশ করেছেন মোটে তিন বছর আগে। রানাঘাট ফ্রেন্ডস ক্লাবে ক্রিকেট খেলেন। কাজেই তারুণ্যের ‘টক্কর’ অবধারিত। ‘তাজা হাওয়া’ পাল্লা দিচ্ছে গৌরীর ওয়ার্ডেও। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী, সিপিএমের পম্পা বাগদি সবে গত বছর রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজ থেকে কলা বিভাগে স্নাতক হয়েছেন। কংগ্রেসের প্রার্থী, এক সন্তানের জননী সীমা আঁকুড়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন বছর পাঁচেক আগে। তবে গৌরী বেশ আত্মবিশ্বাসী। বলছেন, “বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভাল সাড়া পাচ্ছি। মনে হয়, জিতব।” সত্যি বলতে, সেই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছেন গৌরীর মা সুনীতা বিশ্বাস। তাঁর কথায়, “ও যে একটা বড় কিছু করার সুযোগ পেয়েছে, তাতে আমি খুশি। জিতলে যেন সেই সুযোগটাই ও কাজে লাগায়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.