রাজ্যে বেহাল শিল্পায়নের চিত্র বোঝাতে গিয়ে এ বার বিদ্যুৎ পরিস্থিতিকে হাতিয়ার করলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রাজ্যে নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি না-হলে আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ‘প্রচণ্ড অসুবিধায়’ পড়তে পারেন বলে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করলেন তিনি। প্রবল গরমেও এ বার বিদ্যুৎ ঘাটতি তেমন না-হওয়া যে আসলে রাজ্যের শিল্প ক্ষেত্রের বিরূপ দশারই পরিচায়ক, বোঝাতে চাইলেন সেই কথাও।
বুদ্ধবাবুর নেতৃত্বে বিগত বামফ্রন্ট সরকারের মূল মন্ত্রই ছিল শিল্পায়ন। কিন্তু শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে গোলমাল এবং বিরোধীদের আন্দোলনের জেরে শেষ পর্যন্ত তাঁর সরকারকে ক্ষমতা হারাতে হয়েছিল। বিরোধী ভূমিকায় গিয়ে বুদ্ধবাবু অবশ্য আগাগোড়া রাজ্যে শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে সওয়াল করে চলেছেন। ব্যারাকপুরে বৃহস্পতিবার এক জনসভায় সেই সূত্রেই বিদ্যুৎ পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনেছেন তিনি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “প্রবল গরম পড়লেও এ বার বিদ্যুতের ঘাটতি তেমন হয়নি। কারণ, কল-কারখানায় বিদ্যুতের চাহিদা কমে গিয়েছে।” প্রসঙ্গত, শিল্পে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকার জন্যই যে এ বার গ্রীষ্মে লোডশেডিং-এর দাপট তুলনামূলক ভাবে কম, সেই সংক্রান্ত সবিস্তার প্রতিবেদন এর আগে প্রকাশিত হয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকায়। |
শিল্পায়ন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কড়া সমালোচনা করে বুদ্ধবাবু এ দিন বলেছেন, “বেশ কিছু কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শিল্প যা ছিল, তা এখান থেকে চলে যাচ্ছে। যা আছে, তা-ও দাঁড়িয়ে গিয়েছে।” সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবুর কথায়, “উনি (মমতা) বলছেন, এ রাজ্যে শিল্পে হাজার কোটি টাকার লগ্নি এসেছে। কোথায় সে সব? বলছেন, ৩ লক্ষ বেকারের চাকরি হয়েছে। কোথায় সে চাকরি? একটাও নতুন কারখানা হয়নি। চাকরিটা হবে কোথায়?” ইনফোসিস রাজ্যে থাকবে কিনা, তা নিয়েও ফের ‘সংশয়’ প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
তাঁর বক্তব্যে এসেছে কৃষি ক্ষেত্রে সঙ্কটের প্রসঙ্গও। ধান বিক্রি করতে না-পেরে কৃষককে যে ভাবে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে, তার জের ভবিষ্যতে আরও টের পেতে হবে বলে আশঙ্কা তাঁর। ঘটনাচক্রে, বুদ্ধবাবুর সুরেই এ দিন নলহাটিতে পুরভোটের প্রচারে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেছেন, “রাজ্য সরকার সহায়ক মূল্যে ধান কিনতে না-পারায় কৃষকেরা আত্মহত্যা করছেন। অথচ মুখ্যমন্ত্রী তা স্বীকার করছেন না। উল্টে তিনি দাবি করছেন, রাজ্যে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি।”
নানা বিষয় টেনে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে এ দিন বিঁধেছেন বুদ্ধবাবু। বাদ পড়েনি কেকেআর-কে ইডেনে সংবর্ধনা-প্রসঙ্গও। ‘ক্রিকেট-প্রেমী’ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “ক্রিকেট ভালবাসি। একটু-আধটু দেখি। ক্রিকেটের নামে ইডেনে যা হল, তা দেখে সে দিন মাথা নিচু হয়ে গিয়েছে। মুম্বইয়ের এক চিত্র তারকা নাচছেন আর গোটা মন্ত্রিসভা হাততালি দিচ্ছে!” রাজ্য সরকারকে বুদ্ধবাবুর কটাক্ষ, “পরিবহণ কর্মীদের মাইনে দিতে পারছে না! আর যেখানে সেখানে জলসা করে বেড়াচ্ছে!” |