মানসিকতার ‘পরিবর্তন’ না-ঘটায় বিজেপি-র ডাকা বন্ধ পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব ফেলল। কিন্তু পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ-কর্মসূচিতে কার পিছনে কার মদত, সেই তরজায় ব্যস্ত থাকল রাজ্য রাজনীতি!
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বিজেপি-র আড়ালে বন্ধ সফল করতে রাস্তায় নেমেছিল আসলে সিপিএম-ই। আবার জোট সরকারের শরিক কংগ্রেসের অভিযোগ, প্রত্যাশিত কঠোর ব্যবস্থা না-নিয়ে বন্ধে পরোক্ষ মদত দিয়েছে রাজ্য সরকারই। যার জন্য অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। ধর্মঘটকারী বিজেপি-র পাল্টা বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী-সহ সরকারের তরফে এমন সব ‘হুমকি ও প্ররোচনা’ এসেছে, যার ‘প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য’।
এই চাপানউতোরের মাঝেই পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে নিজেদের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। তবে বিজেপি-র বন্ধ মানুষ ‘স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সমর্থন’ করায়, তাঁরা যে ‘খুশি’, তা গোপন করেননি সিটুর রাজ্য সভাপতি তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী! |
মহাকরণে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “সিপিএম-বিজেপি একসঙ্গে বনধ করেছে। একই অঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন রূপ!” একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “জোর করে কেন বাস ভাঙচুর, আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে বনধ করা হবে? এ সব কত দিন চলবে? আমরাও বনধ করেছি। কিন্তু কখনও এই ভাবে জবরদস্তি করিনি।” সিপিএমের বিরুদ্ধে মাওবাদীদের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রাখার অভিযোগ ফের সামনে এনে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “৩৪ বছরে একটা জায়গাতেও কোনও কাজ হয়নি। এখন দুষ্টুমি আর কুৎসা ছাড়া অন্য কোনও কাজ নেই!” বনধ-অবরোধের রাজনীতি রাজ্যের মানুষ আর সহ্য করবেন না বলেও ফের ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, “সিপিএমের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। তাই হিংসুটেপনা করছে!”
বিজেপি-র বন্ধ কার্যকর করতে সিপিএমের দায়িত্ব নেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু কটাক্ষ করেছেন, “উনি এটা বললে আরও ভাল হত যে, জৌনপুরে যে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটাও সিপিএম করিয়েছে!” এনডিএ এবং বামেদের যে পৃথক কর্মসূচি ছিল, সেই কথাই ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন বিমানবাবু। তবে তাঁরই দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামলবাবু প্রশ্নের জবাবে বলে দিয়েছেন, “বিজেপি-র ডাকা এই বন্ধের আমরা বিরোধিতা করেছিলাম। আমরা পেট্রোলের দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করছি। কিন্তু বিজেপি-র ডাকা বন্ধ সফল হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মানুষ এই বন্ধ সমর্থন করেছেন। আমরা খুশি।”
প্রসঙ্গত, পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এ দিন রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ থেকে মৌলালির রামলীলা ময়দান পর্যন্ত কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের মিছিলে ছিলেন বিমানবাবু, ক্ষিতি গোস্বামী, মঞ্জুকুমার মজুমদার, হাফিজ আলম সৈরানি, মনোজ ভট্টাচার্য, চাঁদ মহম্মদ-সহ বাম নেতৃত্ব।
বন্ধে সিপিএমের মদতের অভিযোগ প্রত্যাশিত ভাবেই উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি-ও। দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়ের কথায়, “এই অসত্য কথাটা বলা মুখ্যমন্ত্রীর বাধ্যবাধকতা। কারণ এটা না-বললে ওঁকে স্বীকার করতে হত, এ রাজ্যে বিজেপি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসাবে উঠে আসছে।” বন্ধ বা ভাঙচুর মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর ‘কড়া’ হওয়ার ঘোষণাকে কটাক্ষ করে তথাগতবাবু এ-ও বলেছেন, “যে দল বিরোধী থাকা অবস্থায় বিধানসভায় ভাঙচুর করেছিল, তারা এখন শাসক হয়ে ভাঙচুরের জন্য অন্য রাজনৈতিক দলের কাছে টাকা চাইবে?”
মুখ্যমন্ত্রী ভবিষ্যতে আরও ‘কড়া’ হওয়ার ইঙ্গিত দিলেও এ দিন রাজ্য প্রশাসন কঠোর হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেনি বলে অভিযোগ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র আব্দুল মান্নান। তাঁর বক্তব্য, “সকাল থেকে পুলিশের সামনে বন্ধ সমর্থকেরা সরকারি বাসে ভাঙচুর করেছে, বেসরকারি গাড়ির কাঁচ ভেঙেছে। বহু জায়গায় সাধারণ মানুষ ট্রেন অবরোধকারীদের হটিয়ে দিয়েছে। আর পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় থেকেছে। ফলে মানুষের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে, রাজ্য সরকার কি পরোক্ষ ভাবে বন্ধকে সমর্থন করছে?” পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, “পুলিশ রাস্তার কয়েকটি নির্দিষ্ট জায়গায় ছিল। প্রত্যেক লোকের পিছনে তো পুলিশ দেওয়া সম্ভব নয়! তবে রাস্তায় লোক ছিল বলেই পুলিশ কঠোর হয়নি।” |