‘আতঙ্কের রাজনীতি’র বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবারের বনধে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি বাস ভাঙচুর এবং আগুন লাগানোয় ‘ক্ষুব্ধ’ মুখ্যমন্ত্রী এ বার ওই সমস্ত ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে আর্থিক ক্ষতিপূরণজনিত আইনি পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
এ দিন ডায়মন্ড হারবার ও সাগর সফরে আসার পথে আনন্দবাজারকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কোথাও কিছু ঘটে গেলে অন্য কথা। কিন্তু পরিকল্পনা করে বনধ ডেকে তার পর রাস্তায় নেমে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, সরকারি যানবাহনে, বাসে আগুন লাগানো আমি মেনে নেব না!” মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “পরিকল্পিত এই ধরনের হামলায় সরকারের যে আর্থিক ক্ষতি হবে, সংশ্লিষ্ট দলকে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আমি দ্রুত বিধানসভায় বিল এনে সেটা আইন করতে চাই।” কলকাতায় ফিরে আইনজ্ঞদের পরামর্শও নিতে চান মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ফলে বিল পাশ করাতে মুখ্যমন্ত্রীর অসুবিধা হবে না। তাঁর মতে, এর ফলে জনসমর্থনও তিনি পাবেন, আবার সিপিএম-ও এর জোরালো বিরোধিতা করতে পারবে না। |
এ দিন ডায়মন্ড হারবারের হাসপাতাল মাঠে মমতা বলেন, “চিরকাল এ ভাবে চলবে না। আরও কড়া আইনি ব্যবস্থা নেব। আইন কিন্তু আইনের পথে চলবে! সুতরাং সাবধান হোন!” বাম-জমানায় বিধানসভায় তাঁর উপস্থিতিতে তৃণমূলের ভাঙচুরের ঘটনার উদাহরণ দিয়ে মমতা বলেন, “আমি তো গিয়েছিলাম বিরোধী দলনেতার সঙ্গে দেখা করতে। আমার সঙ্গে প্রশাসন যে ব্যবহার করেছিল, তাতে ক্রুদ্ধ হয়ে সহকর্মীরা একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন। তার পর তাঁদের বিরুদ্ধে শুধু স্বাধিকারভঙ্গের নোটিসই নয়, বেতনও কাটা হয়েছিল!”
এমনিতে যানবাহন বা অন্য কিছুর দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতি হলে বিমার টাকা থেকে ক্ষতিপূরণ মেলে। কিন্তু বিশেষত বনধের ক্ষেত্রে বিমা সংস্থাগুলির একাংশ টালবাহানা করে। বলে, চালক ‘নিজ দায়িত্বে’ গাড়ি বার করেছেন। ফলে অধিকাংশ বেসরকারি গাড়ির মালিক পথে বেরোতে চান না। বনধও ‘সফল’ হয়। মুখ্যমন্ত্রী সেই রেওয়াজই ভাঙতে চান বলে মনে করা হচ্ছে। |
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “এমনিতেই বাস কম। তার উপর যদি সেগুলোতেও ভাঙচুর করা হয়, তা হলে নিত্যযাত্রীদের জীবন-জীবিকা তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে যারা এ সব করে, তাদেরও উচিত ক্ষতিপূরণ দেওয়া। সেই মতোই আইন করা হবে।” কিছু দিন আগে উত্তর কলকাতার একটি বাস ডিপোয় প্রায় ২৫টি বাস ভাঙচুর হয়েছিল। সেগুলি এখনও সারিয়ে তোলা যায়নি বলে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এ সব অপরাধ প্রাথমিক ভাবে জামিন-অযোগ্য। কিন্তু অপরাধীরা তো জামিন পেয়েই যায়। ফলে তারা সেটা গায়ে মাখে না। এটা বন্ধ করতে হবে!”
বিল আনা হলে এ যাবৎ রাজ্যে যত ভাঙচুর হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণের বিষয়টি তাতে যোগ করার দাবি তুলেও বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বিলটি সমর্থনের কথাই বলেছেন। ফলে জনতাকে ‘সদিচ্ছার বার্তা’ ও সিপিএম -কে ‘পাশে-পাওয়া’ মুখ্যমন্ত্রীর একই ঢিলে দুই পাখি হল। মন্দ কী! |