তিন দশক আগে তৈরি হয়েছিল জলের ট্যাঙ্ক। সেই তিন দশকে জনসংখ্যাও বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু সেই তার নিরিখে জল সরবরাহের পরিমাণ কিংবা পরিকাঠামোর মান, কোনওটাই বাড়েনি। ফলে এই প্রচণ্ড গরমে জল সরবরাহ নিয়ে প্রতিদিন সমস্যা লেগে রয়েছে বরাবাজারে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বরাবাজারে নলবাহিত জল সরবরাহ নিয়মিত হয় না। প্রতিদিন দু’বেলার পরিবর্তে একবেলা জল মেলে। তাও পর্যাপ্ত নয়। স্থানীয় বাসিন্দা কাঞ্চন রায়, বুলু মোদক, অনিমা সিংহদের ক্ষোভ, “বাড়ির কাজ ফেলে জলের জন্য লাইন দিই। কিন্তু মাত্র কয়েকজন জল নেওয়ার পরই দেখি জলের গতি কমে গিয়ে জল পড়া বন্ধ হয়ে গেল! আমাদের প্রায়দিন এ ভাবেই খালি জলের পাত্র নিয়ে ফিরে আসতে হয়।” তাঁদের আরও দাবি, “মাঝে মধ্যে কাদা মেশানো নোংরা জলও আসে। বাড়িতে গিয়ে ওই জল ফুটিয়ে খেতে হয়। প্রতিবাদ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।” বরাবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, সিপিএমের নারায়ণ মাঝি জানালেন, পঞ্চায়েত আগে ওই জল সরবরাহ ব্যবস্থার দেখভালের দায়িত্বে ছিল। বিগত কয়েক বছর ধরে পঞ্চায়েত সমিতি ওই দায়িত্ব নিয়েছে। পুরুলিয়ার বিভিন্ন ব্লক এলাকার মতো বরাবাজারেও জল সরবরাহ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সামলান ঠিকাদার সংস্থা।
তিন দশক আগে বরাবাজারে নলবাহিত জল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। ট্যাঙ্কের জল ধারণ ক্ষমতা ২০০০০ গ্যালন। ধডাঙ্গা গ্রামের কাছে নেংসাই নদী থেকে পাম্পের সাহায্যে জল তোলা হয়। শোধন করে এলাকায় সরবরাহ করা হয়। নারায়ণবাবু বলেন, “প্রায় ২০০টি সংযোগ রয়েছে। প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দা সেই জল পান।” তাঁর দাবি, সাড়ে তিন দশক আগে বাজার এলাকায় জনসংখ্যা কম ছিল। এখন জনসংখ্যা আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। |
ফলে জল সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। বার বার আবেদন জানালেও সেই পরিকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়ে প্রশাসন উদ্যোগ নেয়নি। জলের পরিমাণ তো বাড়েনি, উল্টে জল সরবরাহের পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দুশো। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এলাকায় জলের ঠিক মতো গতি বেশিক্ষণ থাকে না।
জয়নগর পাড়ার বাসিন্দাদের একাংশের মতে, আগে সিএডিসি অফিসের সামনে থাকা গভীর নলকূপের জল পাম্পের সাহায্যে তোলা হত। বাসিন্দারা সেখান থেকেও জল সংগ্রহ করতেন। ফলে নলবাহিত জল সংগ্রহকারীদের সংখ্যা কিছু কম হত। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে সেই ব্যবস্থাও বন্ধ। ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে। নারায়ণবাবুর দাবি, “বিল বাকি থাকায় বিদ্যুৎ দফতর পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছে। তাই ওই পাম্পটি বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।” পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সিপিএমের প্রণব নিয়োগী বলেন, “নলবাহিত জল শোধন করেই সরবরাহ করা হয়।” তবে বরাবাজার বাজারে জনসংখ্যার অনুপাতে ট্যাঙ্কের আয়তন যথেষ্ট নয় তা তিনি মেনে নিয়েছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, “বিভিন্ন পাড়ায় নলকূপের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কয়েক বছর আগে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের পুরুলিয়া অফিসে আবেদন জানিয়েছি-- হয় ওই জল ট্যাঙ্কের আয়তন বাড়ানো হোক অথবা তৈরি করা হোক নতুন আরেকটি ট্যাঙ্ক। এ ছাড়া জেলা পরিষদেও এ ধরনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। জল সরবরাহের জন্য বিভিন্ন দফতরের কর্তাদের নিয়ে জেলাতে একটি কমিটি রয়েছে। পরিকল্পনাটি নিয়ে ওখানেও আলোচনা হয়েছিল।”
পুরুলিয়া জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (গ্রামীণ জল সরবরাহ) নিত্যানন্দ আচার্য বলেন, “বরাবাজারের ওই খালে জল থাকে না। গরমে জলের স্তর আরও নীচে নেমে যায়।” তাঁর দাবি, “ওই ট্যাঙ্কের আয়তন বাড়ানো অথবা নতুন আরেকটি ট্যাঙ্ক নির্মাণ করার প্রস্তাব এসেছে বলে জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।” |