পেট্রোলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে এনডিএ-র ডাকা বনধে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে কোনও প্রভাব পড়ল না। বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও প্রায় স্বাভাবিক ছিল ট্রেন চলাচল। অনেক জায়গাতেই সকালবেলায় সব্জিবাজারে চেনা ভিড় চোখে পড়ে। অফিসগুলিতেও কর্মী হাজিরা প্রায় স্বাভাবিক ছিল। তবে বন্ধ পালনের জন্য ‘জোরাজুরি’ করা-সহ বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনার জেরে দুই জেলায় ১০৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
এ দিন সকালে ওন্দা থানার রামসাগর ও ছাতনায় রেলপথ অবরোধের চেষ্টা করেন বিজেপি কর্মীরা। ফলে রামসাগরে প্রায় মিনিট দশেক হাওড়াগামী শিরোমনি প্যাসেঞ্জার আটকে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে আবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়। ফের স্বাভাবিক হয় ট্রেন চলাচল। ছাতনায় বিজেপি-র বাঁকুড়া জেলা সহ সভাপতি জীবন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বনধ সমর্থকরা রেল পথ অবরোধ করতে গেলে পুলিশ গিয়ে তাঁদের গ্রেফতার করে। সকালে আদ্রা স্টেশনে বনধ সমর্থকেরা রেল লাইনের উপর পতাকা পুঁতে দেয়। |
আরপিএফ কর্মীরা গিয়ে সেই পতাকা তুলে দেন। আদ্রা ডিভিশনের ডিআরএম অমিতকুমার হালদার বলেন, “সকালে ছাতনা ও রামসাগর স্টেশনে বনধ সমর্থকরা ট্রেন অবরোধ করায় কিছু ক্ষণ ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়।” বেসরকারি বাস না চললেও সরকারি বাস রাস্তায় ছিল। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় কম ছিল বলে মানুষজনের ক্ষোভ। বাঁকুড়ার জুনবেদিয়া বাসস্টপে বিষ্ণুপুর যাওয়ার বাসের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে থাকা গৌতম দাস, সুমন্ত সু বলেন, “প্রায় একঘন্টা অপেক্ষায় থেকেই সরকারি বাস পাইনি। অথচ প্রশাসন জনজীবন স্বাভাবিক থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল।” পুরুলিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, “বনধে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় বাস চালানো হয়নি।”
দুই জেলার জঙ্গলমহলের খাতড়া, রাইপুর, রানিবাঁধ, সারেঙ্গা, বান্দোয়ান, বোরো প্রভৃতি এলাকায় অধিকাংশ দোকানবাজার বন্ধ থাকলেও বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর মহকুমা এলাকায় জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক ছিল। পুরুলিয়া শহরে বন্ধের প্রভাব পড়ে। দোকানবাজার বন্ধ ছিল চেলিয়ামা, রঘুনাথপুর, সাঁওতালডিহি, আদ্রা-সহ রঘুনাথপুর মহকুমার ছ’টি ব্লক এলাকায়। |
তবে রঘুনাথপুর আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। কাশীপুরে গবাদি পশুর সাপ্তাহিক হাটেও বেচাকেনা হয়েছে। বাঁকুড়ার বড়জোড়া, মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটি ও পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর, নিতুড়িয়া, সাঁতুড়ির কলকারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল। সাঁওতালডিহি ও মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও এ দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়নি বলে খবর। নিতুড়িয়ায় ইসিএলের’র পারবেলিয়া ও দুবেশ্বরী কোলিয়ারির উৎপাদনও স্বাভাবিক ছিল। তবে রঘুনাথপুরে ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এ দিন বন্ধ থাকে। বেলিয়াতোড়ে সকালে বনধ সমর্থকেরা পথ অবরোধ করলে পুলিশ গিয়ে তাঁদের গ্রেফতার করে। বাঁকুড়া শহরে জোরকরে দোকানপাট বন্ধ করার অভিযোগে কয়েক জন বিজেপি সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই ইস্যুতে বাঁকুড়ার মাচানতলা মোড়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কুশপুতুল দাহ করে সিপিআই (এমএল) কর্মীরা। তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ। বাঁকুড়া সদর মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে এসইউসি কর্মীরা বিক্ষোভ দেখালে তাঁদেরও গ্রেফতার করে পুলিশ। বাঁকুড়া পুলিশ সুপার মুকেশকুমার বলেন, “জেলা জুড়ে বিক্ষিপ্ত ঘটনায় মোট ৮২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” মানবাজারে বিজেপি সমর্থকেরা বেসরকারি বাস আটকালে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ বাধে। পুলিশের হস্তক্ষেপে তা বেশি দূর গড়ায়নি। পুরুলিয়া জেলার কিছু জায়গায় জোর করে যানবাহন আটকানোর চেষ্টা করা হলে পুলিশ তা আটকে দেয়। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২২ জন বনধ সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
|
বৃহস্পতিবার ছবিগুলি ক্যামেরাবন্দি করেছেন অভিজিৎ সিংহ, উমাকান্ত ধর, প্রদীপ মাহাতো ও সুজিত মাহাতো। |