বিচারে বিলম্ব, মামলায় ঢালাও অর্থ ব্যয় এবং সংসারে অভাব-অনটনের কারণে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করতে চেয়েছিলেন এক অভিযুক্ত মাওবাদী নেতা। সংবিধানে এই ধরনের মৃত্যু বরণের অনুমতি দেওয়ার| সংস্থান না-থাকায় বৃহস্পতিবার তাঁর আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আলিপুর আদালত।
দক্ষিণ শহরতলির বিষ্ণুপুর এলাকায় ২০১০ সালের জুনে সিদ্ধার্থ মণ্ডল-সহ কয়েক জন মাওবাদী নেতা ধরা পড়েন। প্রায় দু’বছর ধরে তাঁদের মামলার বিচার হচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করতে চেয়েছিলেন সিদ্ধার্থবাবু। স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি চেয়ে ওই বিচারাধীন বন্দি জেল থেকে আদালতের কাছে (দশম ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট) একটি চিঠি পাঠান। এ দিন সেই আবেদনেরই শুনানি হয় বিচারক মির রাশিদ আলির এজলাসে।
এ দিন সিদ্ধার্থবাবু, মধুসূদন মণ্ডল, রাধেশ্যাম দাস-সহ পাঁচ অভিযুক্ত মাওবাদী নেতাকে কড়া পুলিশি পাহারায় আদালতে তোলা হয়। লোহার জালে ঘেরা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অভিযুক্তদের মধ্যে সিদ্ধার্থবাবুর কাছে এই ধরনের চিঠি লেখার কারণ জানতে চান বিচারক। সিদ্ধার্থবাবু বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মামলার বিচারই হচ্ছে না। তাই এই চিঠি লিখেছি।” চিঠিতে এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি-র বিরুদ্ধে দমনমূলক চক্রান্তের অভিযোগ এনেছেন ওই বন্দি। তিনি লিখেছেন, তাঁকে মাওবাদী সাজিয়েছে সিআইডি-ই। বাড়িতে তাঁর ৮৫ বছরের বাবা, এবং ৭৫ বছরের মা, স্ত্রী, দুই নাবালক ছেলে অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। দুর্ভোগ থেকে তাঁদের এবং নিজেকে মুক্তি দিতেই তিনি স্বেচ্ছামৃত্যু চান।
অভিযুক্তদের তরফে আইনজীবী শুভাশিস রায় আদালতে জানান, দু’বছর হয়ে গেল, মামলা এগোচ্ছে না। তাই হতাশ হয়েই তাঁর মক্কেল সিদ্ধার্থ মণ্ডল আদালতের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি চেয়েছেন। সরকারি আইনজীবী নবকুমার ঘোষ বলেন, সংবিধান কোনও নাগরিককেই স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার দেয়নি। দেশের আইনেও এ ভাবে মৃত্যুবরণের অনুমতি দেওয়ার সংস্থান নেই।
দু’বছরেও এই মামলা কেন এগোয়নি, তারও ব্যাখ্যা দেন নববাবু। এই নিয়ে অভিযুক্তদের আইনজীবী শুভাশিসবাবুর সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদ হয় তাঁর। নববাবু বলেন, দু’বছরের মধ্যে দেড় বছর কেটে গিয়েছে রাধেশ্যাম দাস নামে এক অভিযুক্তকে নিয়ে। মেদিনীপুর জেলে থাকাকালে কে বা কারা তাঁর মাথায় মেরেছে, তাঁর চিকিৎসা কত দূর হল ইত্যাদি নিয়েই অনেকটা সময় কেটে যায়। বিষয়টির ফয়সালা চেয়ে তাঁর তরফে বারবার আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত প্রতিটি ব্যাপারে জেল সুপারের কাছে রিপোর্ট চায়। সুপার অন্তত পাঁচটি রিপোর্ট পাঠান। তাতেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি তাঁর আইনজীবী।
সরকারি আইনজীবীর প্রশ্ন, এ ভাবে অহেতুক দেরি হলে বিচার শুরু হবে কী করে? সরকার পক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে অবিলম্বে বিচার পর্ব শুরু করারই পক্ষে। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদনটি খরিজ করে দেন। তিনি জানান, আদালত কখনওই স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দিতে পারে না। কারণ এটা দেশের আইনের পরিপন্থী। তবে মামলার যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেই ব্যাপারে সরকার ও অভিযুক্ত উভয় পক্ষকেই তৎপর হতে বলেন তিনি। এ দিন পাঁচ অভিযুক্তের তরফে জামিনের জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। সরকারি আইনজীবী তার বিরোধিতা করেন। বিচারক জামিনের আবেদনও খারিজ করে দেন। |