প্রচার-পরিক্রমায় পাঁশকুড়া
‘সন্ত্রাস’ মোকাবিলায় বাম-অস্ত্র মুঠো-ফোন
পাঁচ বছর আগের পুর-নির্বাচনের সময়ে তদানীন্তন ‘বিরোধী’ তৃণমূলের প্রধান প্রচার-অস্ত্র ছিল নন্দীগ্রামে ‘সিপিএমের সন্ত্রাস’। নন্দীগ্রামের হাওয়া পালে লাগিয়েই বাম-দুর্গ পাঁশকুড়ায় ঘাসফুল ফোটে পুর-নির্বাচনে। পূর্ব মেদিনীপুরে সেই শুরু পালাবদলের। বিরোধী থেকে তৃণমূলেরও শাসকে উত্তরণ শুরু।
সন্ত্রাসের ‘ইস্যু’ এ বারও রয়েছে পাঁশকুড়ার ভোটে। সন্ত্রাসের অভিযোগ ঘুরে এসেছে ‘নব্য শাসক’ তৃণমূলের দিকেই। ১০-৭ ব্যবধান ঘুচিয়ে ‘বিরোধীশূন্য’ পুরবোর্ড গড়ার ডাক দিয়ে পোস্টার, ব্যানার, দেওয়াল-লিখন থেকে শুরু করে সভা-সমাবেশের ক্ষেত্রেও দাপট তৃণমূলেরই। ‘বিরোধী’ বাম-শিবির ম্রিয়মাণ। দেওয়াল লিখন, পোস্টার, সভায় পিছিয়ে প্রচারের কৌশলই বদলে ফেলেছে বামেরা। প্রকাশ্যের চেয়ে বেশি অন্তরালে, মোবাইলেই পরিচিতজনের সঙ্গে আলাপ ও ভোট-ভিক্ষা।
সিপিএমের বিরুদ্ধে পরিচিত বিষোদ্গার ফেলে পাঁশকুড়ার নির্বাচনী প্রচারে তৃণমূল প্রার্থীদের গলায় এ বার ‘শাসক’ হিসাবে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। সঙ্গে, গত পাঁচ বছর পুর-এলাকার তাদের ‘কাজে’র প্রচারকেও হাতিয়ার করছে তৃণমূল। ঠিক পাঁচ বছর আগে এমনটাই দেখা যেত বাম-প্রচারে। এ বার বাম-শিবিরই উল্টে ‘তৃণমূলের সন্ত্রাস’ নিয়ে সরব। পুর-নির্বাচনে উন্নয়ন-বিতর্কের পাশে তাই ঘুরেফিরে ঠিক চলে আসছে সন্ত্রাসের ইস্যু। শুধু বদলে গিয়েছে অভিযুক্তের পরিচয়!
তৃণমূলের পথে বামেদের তোলা সন্ত্রাসের অভিযোগের সঙ্গেই রয়েছে অন্য কাঁটাও। শরিক কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়নি তৃণমূলের। ফলে পুরসভার ১৭টি আসনের মধ্যে ১৫টিতেই প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। বিজেপিও রয়েছে ১৫ আসনে। তাদের প্রচারেও উঠে আসছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ। যার মোকাবিলায় কংগ্রেস-বিজেপি’র সঙ্গে ‘সিপিএম-সখ্যতা’র অভিযোগ তুলে চলেছেন তৃণমূল নেতারা।
১৭ ওয়ার্ডের পাঁশকুড়া পুরসভায় ২০০২-এর প্রথম নির্বাচনে জিতে ক্ষমতাসীন হয় বামফ্রন্ট। ২০০৭-এ তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। ফলে, পুরসভার শাসক হিসেবে বাম-তৃণমূল, দুই জোটের কার্যকলাপ দেখারই অভিজ্ঞতা হয়েছে পুরবাসীর। এবং সে অভিজ্ঞতা বড় একটা সুখের নয়। তাই নির্বাচনী প্রচারে দু’-পক্ষই উন্নয়ন-বিতর্কে সতর্কও। পাছে ব্যর্থতার বোঝা আরও ভারী হয়ে চেপে বসে! এখনও গ্রামীণ-এলাকা অধ্যুষিত এই পুরসভার রাস্তা, পানীয় জল, নিকাশি, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য ও বস্তি-উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে অনেক খামতি। বিড়ম্বনায় পড়লে অন্যের উপর দায় চাপিয়েই খানিক মুখরক্ষার চেষ্টা করছে দু’পক্ষ।
তৃণমূল প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও সভা করেছেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী-সহ দলের জেলা নেতারা। পুরসভার প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে সভা করেছে তৃণমূল। প্রতিটি সভায় তৃণমূল নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বে এক বছরে রাজ্য সরকারের ‘সাফল্যে’রও ফিরিস্তি শুনিয়েছেন। অন্য দিকে, বিরোধী বামফ্রন্ট প্রার্থীদের হয়ে প্রতাপপুরে মাত্র একটি কর্মিসভায় ছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। বড় কোনও জনসভাই সে অর্থে করেনি বামেরা। আজ, শুক্রবার অবশ্য পদযাত্রা করতে পারেন বিমান বসু।
তৃণমূল নেতা তথা পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী নন্দকুমার মিশ্রের দাবি, “পাঁচ বছর আমরা পুরবোর্ডে থাকলেও তার মধ্যে চার বছর রাজ্য সরকারে ছিল বামফ্রন্ট। অসহযোগিতা সত্ত্বেও ওই সময়ে রাস্তা, পানীয় জল, পথের বাতি, বস্তি উন্নয়নে প্রচুর কাজ হয়েছে। গত বছর রাজ্যে আমরা ক্ষমতায় আসার পর পুর-এলাকাতেও উন্নয়নের গতি বেড়েছে। পুরসভার উন্নয়নে আমরা কী কী কাজের পরিকল্পনা নিয়েছি তা-ও প্রচারে তুলে ধরা হচ্ছে।” বামেদের তোলা সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে নন্দবাবুর বক্তব্য, “ওরাই এক সময়ে সন্ত্রাস করত। কিন্তু জনসমর্থন হারিয়ে অবস্থা এমন হয়েছে প্রচারের লোকটুকুও পাচ্ছে না।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহির অবশ্য বক্তব্য, “প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়া থেকেই বাধা শুরু করেছিল তৃণমূল। এর পর দেওয়াল লিখন, বাড়ি গিয়ে প্রচারেও বাধা দিচ্ছে ওরা। প্রার্থীদের মারধর করা, প্রচারে বের না হতে হুমকির ঘটনাও ঘটিয়েছে তৃণমূল।” নিরঞ্জনবাবুর দাবি, “গত পাঁচ বছর পুরসভার ক্ষমতা পেয়েও ওরা উন্নয়নের চেয়ে দুর্নীতিই করেছে বেশি। এ নিয়ে পুর-বাসিন্দাদের ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটবে ভোটে।” কিন্তু প্রচার না করলে মানুষের কাছে পৌঁছবেন কী করে? সিপিএমের এক লোকাল কমিটির সম্পাদক রহস্য ভাঙলেন। তাঁর কথায়, “তৃণমূলের আক্রমণ, হুমকির হাত থেকে সাধারণ সমর্থকদের রক্ষার জন্যেই কোনও সভা, মিছিল করা হচ্ছে না। যতটা সম্ভব ভোটারদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও প্রচার হচ্ছে।” সন্ত্রাসের মোকাবিলায় বামেদের হাতিয়ার হল কি না মুঠো-ফোন!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.