|
|
|
|
|
শাসক তৃণমূলের
সঙ্গেই পরীক্ষায় শুভেন্দুও
আনন্দ মণ্ডল • পাঁশকুড়া |
|
একটায় অধরা লক্ষ্য হাসিলের চ্যালেঞ্জ। অন্যটায় ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াই। হলদিয়া আর পাঁশকুড়ার পুরভোটে জোড়া পরীক্ষায় তৃণমূলের যুবনেতা, সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার বর্ষপূর্তিতে পরীক্ষা তৃণমূল কংগ্রেসেরও।
নন্দীগ্রামের জেলায় শুভেন্দু এবং তাঁর দলের প্রায় নিরঙ্কুশ আধিপত্যের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম থেকে গিয়েছে হলদিয়া পুরসভাই। লক্ষ্মণ শেঠের একদা এই গড়ে ঘাসফুল ফোটাতে তাই বাড়তি তাগিদ শুভেন্দুর। পাঁশকুড়ায় কিন্তু শেষ পাঁচ বছর কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে পুরবোর্ড চালিয়েছে তৃণমূলই। তাদেরই কাজের যাচাই হতে চলেছে এ বারের পুরভোটে। এত দিন ‘বিরোধী’ হিসাবে ক্ষমতা কাড়ার লড়াই চালিয়ে আসা শুভেন্দুকে এ বারই প্রথম ‘শাসক’ হিসাবে পাঁশকুড়ায় লড়তে হচ্ছে ক্ষমতা রক্ষায়। ভোটের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়া লড়াই খানিক কঠিনও করেছে। সেই সঙ্গে ‘অনুন্নয়ন’ ও ‘সন্ত্রাসে’র অভিযোগের, প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতারও মুখোমুখি হতে হচ্ছে শাসকদলের এই যুবনেতাকে। |
|
শেষ বেলায় পাঁশকুড়ায় ভোট-প্রচারে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস |
নন্দীগ্রাম-পর্বের মধ্যে ২০০৭-এর পুর-নির্বাচনে পাঁশকুড়া থেকেই শুভেন্দুর নেতৃত্বে পরিবর্তনের সূচনা। পরের পাঁচ বছরে একে-একে পঞ্চায়েত, লোকসভা, বিধানসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠারও তিনিই কারিগর। নিজে দক্ষিণ কাঁথির বিধায়কের সীমা ছাড়িয়ে তমলুকের সাংসদ হয়েছেন। জেলা ছাড়িয়ে রাজ্যস্তরের নেতা হিসাবে দলেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। কিন্তু হলদিয়া হাসিল হয়নি। নন্দীগ্রামের সূত্রেই তাঁর টক্কর শুরু হয়েছিল হলদিয়ার ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠের সঙ্গে। লোকসভা ভোটে তমলুক কেন্দ্রে সেই লক্ষ্মণকে হারিয়েছিলেন রেকর্ড-ভোটে। নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডের সূত্রে জেলেও যেতে হয়েছে লক্ষ্মণকে। তবু, হলদিয়ার পুর-ক্ষমতা হাসিল না হলে, লক্ষ্মণ-জায়া তমালিকাকে পুরপ্রধান পদ থেকে সরাতে না-পারলে যে একটা ‘দাগ’ থেকে যায়, জানেন শুভেন্দু। তাই পাঁশকুড়া ‘রক্ষা’র সঙ্গে হলদিয়া ‘দখল’ হয়ে উঠেছে তাঁর পাখির চোখ।
এই জোড়া পরীক্ষায় সসম্মানে উতরোতে কাঁথির করকুলির বাড়ি ছেড়ে সকাল-সন্ধ্যা শুভেন্দু দৌড়চ্ছেন পাঁশকুড়া থেকে হলদিয়া। প্রায় প্রতি ওয়ার্ডে গিয়ে সভা করছেন। প্রার্থীদের মঞ্চে এনে পরিচিত করাচ্ছেন জনতার সঙ্গে। নন্দীগ্রামের লড়াইয়ের স্মৃতি যেমন উস্কে দিচ্ছেন, তেমনই ‘শাসক’-নেতা হিসাবে দলনেত্রীর অনুসরণে ঢালাও উন্নয়নেরও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বাবা, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা দলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রেলমন্ত্রী মুকুল রায় বা দলের বিধায়ক-সাংসদদের কেউ কেউ মাঝেমধ্যে এসে সভা করেছেন বটে। কিন্তু দুই পুরসভার ভোটে দলের ‘কাণ্ডারী’ সেই শুভেন্দুই।
কাণ্ডারী যেহেতু, পারাবার দুস্তর হবে না, তা কি হয়! বাম-শিবিরের সঙ্গেই রাজ্যে-কেন্দ্রে এখনও শরিক কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরাও লাগাতার সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে তোপ দাগছেন তৃণমূল শিবিরের দিকে। তার জবাবও দিতে হচ্ছে সেই শুভেন্দুকেই, পাঁচ বছর আগের পাঁশকুড়া-পুরভোটে যিনি নিজে নন্দীগ্রামে ‘সিপিএমের সন্ত্রাস’ নিয়ে সরব হয়ে ভোটেই জবাব দেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। এ বার নিরঞ্জন সিহি, তমালিকা পণ্ডা শেঠের মতো সিপিএমের নেতা-নেত্রী থেকে শুরু করে প্রদীপ ভট্টাচার্য, মানস ভুঁইয়া, দীপা দাশমুন্সি, অধীর চৌধুরীর মতো কংগ্রেস নেতারাও প্রচারে এসে পাঁচ বছর আগের শুভেন্দুর কথার প্রতিধ্বনি করেই ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রায়’ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। ‘বিরোধী’ থেকে ‘শাসক’ হয়ে ওঠার ঝক্কি কি, বুঝছেন শুভেন্দু।
পাঁশকুড়ার ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি-ও আছে ১৫ আসনে। গত বার ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টিতে জিতেছিলেন তৃণমূল ও কংগ্রেস জোটের প্রার্থীরা (৭টিতে তৃণমূল, ৩টিতে কংগ্রেস)। আর বাকি ৭ ওয়ার্ডে বামেরা। জোটের ভাঙনটাকে ‘পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা’ ধরে ‘উৎসাহিত’ হলেও বামফ্রন্ট নেতৃত্ব অবশ্য ‘তেমন’ ভাবে মাঠে নামতে পারেননি। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহি-র অবশ্য দাবি, “অনবরত হুমকি-হামলা লেগেই রয়েছে। মানুষ এই পুরভোটেই জবাব দেবেন।” জোট ভাঙাভাঙি, সন্ত্রাসের অভিযোগ সামলে শুভেন্দু যদিও বলছেন, “জিতছি আমরাই। জনসমর্থন নেই যাদের, তারাই সন্ত্রাসের মায়াকান্না কাঁদছে।” হলদিয়া এবং পাঁশকুড়া ‘বিরোধীশূন্য হবে’এমনই দাবি করছেন বিরোধী থেকে শাসক হয়ে ওঠা দলের এই যুবনেতা। |
|
|
|
|
|