সেনাবাহিনীর মধ্যে দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করাই ছিল তাঁর প্রধান লক্ষ্য। একইসঙ্গে সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন তিনি। তাঁর উত্তরাধিকারী সেই লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলেই বিদায় নেওয়ার আগে আশা প্রকাশ করে গেলেন জেনারেল ভি কে সিংহ। আজ নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল বিক্রম সিংহের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে ভি কে সিংহ বলেন, “ফৌজের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যের অনেকটাই উন্নতি হয়েছে এবং আশা করি ভবিষ্যতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।”
সেনা-কর্তাদের ব্যাখ্যায়, নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল বিক্রম সিংহের সামনে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে গেলেন ভি কে। কারণ ভারতীয় সেনার ২৫-তম প্রধান হিসেবে বিক্রম সিংহের সামনে সবথেকে বড় পরীক্ষা হল, যুদ্ধ-পরিস্থিতির জন্য সেনাবাহিনীর অস্ত্রসম্ভারে যে বিরাট ফাঁক তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করা।
এই বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন ভি কে সিংহ। সেই চিঠি কী ভাবে ফাঁস হল, তার তদন্ত যেমন শেষ হয়নি, তেমনই অস্ত্রসম্ভারের ফাঁকফোকরও পূরণ হয়নি। সেনা-কর্তাদের হিসেবে, বাহিনীর আধুনিকীকরণে অন্তত ১০০টি প্রকল্প আটকে রয়েছে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যে সব ফাঁকফোকর রয়েছে, শুধু তা পূরণ করতেই অন্তত ৪১ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। |
নয়া সেনাপ্রধান বিক্রম সিংহের (বাঁ দিকে) হাতে দায়িত্ব তুলে
দিচ্ছেন তাঁর পূর্বসূরি। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: এপি |
একই ভাবে সেনা-জওয়ানদের মধ্যে ‘মূল্যবোধ’ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করেছিলেন ভি কে সিংহ। বারবার বলেছেন, সেনাবাহিনী সবসময় ‘নাম, নমক ও নিশান’-এর জন্য কাজ করে। নানা বিতর্কের মধ্যে তা আপাতত পিছনের সারিতে চলে গেলেও, বিক্রম সিংহকেই সেই মূল্যবোধ ফিরিয়ে চেষ্টা করতে হবে।
নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে কী করতে চান বিক্রম সিংহ? কবিতা পড়লেও ভালবাসলেও, ফোর্ট উইলিয়াম থেকে বিদায় নেওয়ার আগে সতীর্থদের তিনি যে ইঙ্গিত দিয়ে এসেছেন, সেখানে কাব্যের কোনও স্থান নেই। ঘনিষ্ঠ মহলে বিক্রম সিংহ বলেছেন, এখন সেনাবাহিনীর যা হাল, তা থেকে তাকে টেনে তোলাই তাঁর প্রথম ও প্রধান কাজ। আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে সংঘাত সেনাবাহিনীর কাজ নয়। কিন্তু, বাহিনীর আধুনিকীকরণে বিজয়কুমার যে শুদ্ধকরণ-এর পথে হেঁটেছেন, সেই অবস্থা বজায় রাখতে চান না সেই অবস্থা থেকে ‘পরিবর্তন’ চান, তা পরিষ্কার জানাননি তিনি। নতুন সেনাপ্রধান আরও জানিয়েছেন, কোনও কিছুই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না তিনি। বরঞ্চ বিতর্ক থেকে দূরে রেখে সেনাবাহিনীকে তার নিজস্ব গরিমা ফিরিয়ে দেওয়ারই চেষ্টা করতে চান তিনি।
ভি কে সিংহের ২৬ মাসের জমানায় তাঁকে ঘিরে যে পরিমাণ বিতর্ক হয়েছে, তা আর কোনও সেনাপ্রধানকে ঘিরে হয়নি। যদিও আজ ভি কে সিংহ দাবি করেছেন, এমন কিছু বিতর্ক হয়নি। আজ বিদায় নেওয়ার আগে নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে ভি কে সিংহ বলেন, “এই ২৬ মাসে ফৌজকে যুদ্ধের জন্য তৈরি, প্রাসঙ্গিক, দক্ষ ও কার্যকর করে তোলার কাজ শুরু করতে পেরেছি।
ফৌজের মধ্যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তা পূরণ করার দিকে যাতে নজর দেওয়া হয়, তা সুনিশ্চিত করা গিয়েছে। সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রক্রিয়া আরও মসৃণ করার কাজও শুরু হয়েছে।” প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে তাঁর নানা বিষয়ে বিরোধ সত্ত্বেও প্রাক্তন সেনাপ্রধানের দাবি, এ বিষয়ে তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির সব রকম সাহায্য পেয়েছেন। |