ভারত বনধে বিপর্যস্ত হল দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অংশ। বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসম-সহ উত্তর-পূর্বের সব ক’টি রাজ্যই বনধের ফলে কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। ত্রিপুরাতে অবশ্য শাসক বামফ্রন্ট আলাদা করে বনধ ডেকে যথারীতি তা সফল করল। বিহারে রাস্তাঘাট অবরোধের দায়ে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের পুলিশ জোট সরকারেরই দুই নেতা, জেডিইউ সভাপতি শরদ যাদব ও বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ খানকে গ্রেফতার করল। তবে তা কার্যত নেতাদের ‘গ্রেফতারি বরণ’-এর ইচ্ছাকেই পূর্ণ করেছে। নীতীশের ছবিওয়ালা ব্যানার টাঙিয়ে ধানবাদ স্টেশনে তাঁরই সমর্থকরা রুখে দিল রেল চলাচল।
এমনিতে সব রাজ্যের পুলিশেরই এক রা— বনধ নিয়ে বড় কোনও গোলমালের খবর নেই। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বাদ দিলে বনধ শান্তিপূর্ণই ছিল। সব রাজ্যেই নিয়ম মেনে সরকারি দফতর খোলা ছিল। আলো-পাখা চলেছে, বিজলির মিটার বেড়েছে। তবে কোথাওই কর্মীরা ছিল না। প্রবল গরমে পূর্ব, উত্তর-পূর্বের আমজনতা রাস্তায় নামেনি। বনধের সুযোগ নিয়ে কাটিয়েছে আরও একটি ‘ছুটির দিন’। রাস্তায় কোনও যানবাহনই ছিল না। ট্রেন চলাচলও বিঘ্নিত হয়েছে। স্কুল-কলেজে গ্রীষ্মের ছুটি চলছেই। ভাঙচুরের ভয়ে দোকানপাটও অধিকাংশই বন্ধ ছিল। |
বনধ সমর্থক আইনজীবীরা গুয়াহাটি হাইকোর্টে ঢুকতে দিলেন না এক বিচারপতিকে।
বৃহস্পতিবার উমাশঙ্কর রায়চৌধুরীর তোলা ছবি। |
বিহারের সহর্ষ জেলার সদরে দলীয় কর্মীদের নিয়ে গ্রেফতার বরণ করেন জেডিইউ সভাপতি শরদ যাদব। ভাগলপুরে বিজেপি-র হয়ে বনধ সফল করতে নেমে গ্রেফতারি বরণ করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শাহনওয়াজ খান। পরে যথা নিয়মেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পেট্রোলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে বিজেপি প্রথম ১২ ঘন্টার ভারত বনধের ডাক দিলেও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কংগ্রেস-বিরোধী রাজনৈতিক দল একই দিনে স্ব-স্ব রাজ্যে, যেখানে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে, সেখানে বনধের ডাক দেয়। ঝাড়খণ্ডে যেমন বিজেপি ছাড়াও বনধের ডাক দেয় জোট সরকারের অন্য দুই বড় শরিক জেএমএম, আজসু। ওড়িশায় বনধে সামিল হয় শাসক দল বিজু জনতা দলও।
বাম দলগুলি আজ ‘আলাদা’ করে বনধের ডাক দিয়েছিল ত্রিপুরায়। বিজেপি-র ছোঁয়াচ বাঁচাতে ‘আলাদা’ শব্দটির উপর ত্রিপুরার বাম নেতারা বিশেষ জোর দিয়েছেন। অন্যত্র তারা প্রতিবাদ দিবস পালন করে। ত্রিপুরায় বামেদের জোর এতটাই যে, যেকোনও মূল্যে বনধ সফল করতে সিপিএম সমর্থকরা মরীয়া ছিল। গুয়াহাটি হাইকোর্টের আগরতলা সার্কিট বেঞ্চ ভবনের গেটেও পিকেটিং করছিলেন বনধ সমর্থকরা। বিচারপতি ইউ বি সাহা হাইকোর্ট ভবনে ঢুকতে গেলে তাঁর সামনে কিছু লোক শুয়ে পড়ে। তাদের ডিঙিয়ে বিচারপতি আদালত ভবনে ঢুকতে গেলে তাঁর গায়ে হাত দিয়ে জোর করে বাধা দেওয়া হয়। নজিরবিহীন এই ঘটনা নিয়ে গুয়াহাটি হাইকোর্টে একটি বিশদ রিপোর্টও পাঠানো হয়েছে বলে আগরতলা বেঞ্চ সূত্রে জানা গিয়েছে।
কংগ্রেস শাসিত অসম, অরুণাচল, মণিপুরেও বনধ হয়েছে সর্বাত্মক। শাসক দলের মদত না পেলেও এই রাজ্যগুলিতে সরকারের নীরবতা ও নিস্ক্রিয়তা বিরোধী বনধকে পরোক্ষে উৎসাহিত করেছে। অসমে এক কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, ‘‘এমনিতেই পেট্রোলের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ আমাদের উপর ক্ষেপে আছে। এরপরে আমরা যদি বনধ ভাঙতে রাস্তায় নামি তবে বিরোধীরা প্ররোচিত হবে। গোলমাল পাকাবে। সাধারণ মানুষ আরও ক্ষেপে যাবে। এ ক্ষেত্রে চুপ করে থাকাই শ্রেয়।” |