পেট্রোলের বর্ধিত দাম
আংশিক নয়, পুরো প্রত্যাহারের দাবিতে চাপ মমতা-বিজেপি’র
রিবর্তিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে পেট্রোলের দাম দু-এক দিনের মধ্যে কিছুটা কমানোর ব্যাপারে তেল বিপণন সংস্থা ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক ইঙ্গিত দিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তাতেও মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন থামাতে নারাজ বিরোধীরা। ‘চাপ’ বজায় রেখে যেতে চাইছে তৃণমূল এবং ডিএমকে-র মতো ইউপিএ শরিকেরাও।
বিজেপি এবং এনডিএ-শাসিত রাজ্যগুলিতে পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারের ভারত বন্ধে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যহত হয়েছে। বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর দাবি, তাঁদের ডাকা বন্ধ ‘স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে’ সফল করেছেন মানুষ। আর ‘সফল বন্ধে’ রক্তের স্বাদ পেয়ে বিজেপির এ-ও দাবি যে, পেট্রোলের বর্ধিত দাম পুরোটাই প্রত্যাহার করতে হবে। আর্থিক কারণে সরকার যে তা করবে না বা তেল বিপণন সংস্থাগুলির পক্ষে যে তা সম্ভব নয়, তা বিজেপি নেতৃত্বের কাছেও স্পষ্ট। আর সেটাই এখন বিজেপি-র রাজনৈতিক ‘অস্ত্র’। তাতে শাণ দিয়ে দেশ জুড়ে কংগ্রেস বিরোধিতার বাতাবরণ আরও জোরদার করতে চাইছে বিজেপি।
বিজেপি-র মতো কেন্দ্রীয় সরকারের শরিক তৃণমূলেরও দাবি, পেট্রোলের বর্ধিত দাম পুরোটাই প্রত্যাহার করতে হবে। তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টই বলেছেন, ‘মূল্যহীন মূল্যহ্রাসে’ তাঁদের সায় নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের শরিক হয়েও পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন মমতা। সেই প্রসঙ্গ টেনে এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় একটি অনুষ্ঠানে মমতা বলেছেন, “কোন মুখ্যমন্ত্রী এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে মিছিল করেছেন? আমার বুকের পাটা আছে!” তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্যে ইঙ্গিত স্পষ্ট যে, বর্ধিত দাম আংশিক কমানোর ‘কৃতিত্ব’ নিতে না-চেয়ে তিনি বরং পুরো প্রত্যাহারের জন্য কংগ্রেসের উপরে ‘চাপ’ বজায় রাখতে চান।
পেট্রোলের দাম এক ধাক্কায় সাড়ে ৭ টাকা বাড়ানোর পরে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী জয়পাল রেড্ডি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, ‘রাজনৈতিক কারণে’ বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে একই সঙ্গে জয়পাল বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, অর্থনৈতিক কারণে কয়েক দিনের মধ্যে পেট্রোলের দাম কিছুটা কমবে। একই ইঙ্গিত দিয়েছিল তেল সংস্থাগুলি। তার পরে এ দিন তেল সংস্থাগুলি নিজেদের মধ্যে বৈঠকও করে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা তেলের দামের ওঠা-পড়া ও অন্যান্য অর্থনৈতিক বিষয়-আশয়ের ভিত্তিতে ঘরোয়া খুচরো দাম নির্ধারণের জন্য তেল সংস্থাগুলির কর্তাদের প্রতি ১৫ দিন অন্তর বৈঠক করার কথা। সেই অনুযায়ী তাঁরা আজ, শুক্রবার ফের বৈঠকে বসবেন। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকের পরে পেট্রোলের দাম দেড় টাকা বা দু’টাকার মতো কমানোর ঘোষণা হতে পারে।
তবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, পেট্রোলের দাম বাড়ানোর পরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে, তা পুরোটাই কমানো যেতে পারে। আসলে সরকার এমন ভাবে দাম বাড়িয়েছিল যে, তার পরে রাজনৈতিক প্রতিরোধের মুখে কিছুটা কমানোর ‘সুযোগ’ থাকে। যাতে উভয় দিকই রক্ষা হয়। কিন্তু বিরোধীরা এখন সরকারের সেই ‘কৌশল’ ভেস্তে দিতে চাইছে। শুধু এনডিএ নয়, বামেরাও এখন সেই অবস্থান নিচ্ছেন। যদিও বিজেপি-র সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য এনডিএ-র ডাকা বন্ধের দিনেই পৃথক কর্মসূচি নিয়েছিল বামেরা। তারা পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ দিবস পালন করেছে। তবে ত্রিপুরায় বন্ধ পালিত হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশাতেও বাম দলগুলির রাজ্য নেতৃত্ব বন্ধের ডাক দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক সূত্রের ব্যাখ্যা, আসলে বিজেপি-র সঙ্গে প্রকাশ্যে দূরত্ব রাখলেও এনডিএ-র বনধ সফল হওয়ায় বামেরা ‘খুশি’। কারণ কংগ্রেস-বিরোধিতার হাওয়া জোরদার হোক, তা তাঁরাও চাইছেন। দিল্লি গেটের সামনে এ দিন প্রকাশ কারাট, এ বি বর্ধনেরা বিক্ষোভে অংশ নিয়ে গ্রেফতার বরণ করেন। আর দলের পলিটব্যুরো নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, যে যুক্তিতে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, তা একেবারেই ভাঁওতা।
তবে কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদের কথায়, “বন্ধ করে বা বিক্ষোভ করে যদি পেট্রোলের দাম কমানো যেত, তা হলে সরকারও তাতে সামিল হত! আন্তর্জাতিক অর্থ সঙ্কটের পরিস্থিতিতে সরকার বাধ্য হয়েই তেলের দাম বাড়িয়েছে। নইলে কোন সরকার দেশের মানুষের উপরে ইচ্ছা করে বোঝা বাড়াতে চায়!” কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝছেন, বিরোধী এবং শরিকদের প্রতিবাদ একাই মোকাবিলা করতে হবে তাঁদের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.