ব্লগে গডকড়ীকে তুলোধোনা আডবাণীর
নেতৃত্ব-সঙ্কটে বিপন্ন বিজেপিতে আবার উধাও ঐক্যের আবহ
চায়ের কাপ এবং ঠোঁটের মধ্যে সামান্য হলেও একটা ফাঁক কখনও কখনও থেকে যায়।
সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত চাইছেন, নিতিন গডকড়ীই ফের বিজেপি সভাপতি হোন এবং তাঁর নেতৃত্বেই ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে লড়ুক দল। এই লক্ষ্যে মুম্বইয়ে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে সভাপতি এবং রাজ্য সভাপতিদের কাজের মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে গঠনতন্ত্র সংশোধন করার প্রস্তাব গৃহীতও হয়েছে। কিন্তু দলেরই একটা অংশ চান না, গডকড়ী ফের সভাপতি পদে বসুন। ফলে গডকড়ীর পরপর দু’দফায় বিজেপি সভাপতি হওয়ার পথে ঠোঁট আর কাপের মধ্যে এখনও একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে।
এর মধ্যেই আজ নিজের ব্লগে নাম না করে গডকড়ীকে তুলোধনা করলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। ওই লেখাতেই তিনি সুষমা স্বরাজ এবং অরুণ জেটলির নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। আডবাণী লিখেছেন, ‘মানুষ ইউপিএ-র কাজে ক্ষুব্ধ। তাঁরা আমাদের ব্যাপারেও হতাশ’। উত্তরপ্রদেশের ভোটে বিপর্যয়, মায়াবতীর দল থেকে দুর্নীতির অভিযোগে বিতাড়িত বাবুসিংহ কুশওয়াহাকে দলে টানা, ঝাড়খণ্ডে অংশুমান মিশ্রকে রাজ্যসভায় প্রার্থী করা, কর্নাটক সঙ্কট সামলাতে ব্যর্থ হওয়ার মতো প্রসঙ্গ তুলে গডকড়ীর নেতৃত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন আডবাণী। তাঁর আজকের বক্তব্যের ফলে দলের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়ল বলে মনে করছেন অনেকে।
মোহন ভাগবত যে হেতু গডকড়ীকেই ফের বিজেপির সভাপতি করতে চান, তাই গঠনতন্ত্র সংশোধনে সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন অনেকে। সমস্যা বাধাতে পারতেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সঞ্জয় জোশীর গুরুত্ব প্রকাশ্যে কমিয়ে তাঁকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করেছেন গডকড়ী।
কিন্তু তাতেও কতটা লাভ হয়েছে? জাতীয় কর্মসমিতির পরেও দেখা যাচ্ছে, বিজেপি ঐক্যের ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করলেও নেতৃত্বের সঙ্কটে তা ফের উধাও। গডকড়ীর কাজে ক্ষুব্ধ আডবাণী তাঁর বক্তব্য কিছু দিন আগে সঙ্ঘ নেতাদের সামনেই দলের কোর কমিটির বৈঠকে জানিয়েছিলেন। গডকড়ীকেও নিজের ক্ষোভ স্পষ্ট করে দিয়েছেন আডবাণী।
দ্বিতীয় দফায় বিজেপি সভাপতি হওয়ার পথে নিতিনের সামনে মূল বাধা আডবাণীই। যাঁর মতামত এখনও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্ঘ-নেতারা আডবাণীকে জানিয়েছেন, ‘নিতিনের মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে আপনি ভেটো দিলে আমরা কখনওই জোর করব না। সে ক্ষেত্রে অন্য কাউকে সভাপতি করা হবে’। ক্ষুব্ধ আডবাণী ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, বিজেপির কাজকর্মে তিনি এতটাই অসন্তুষ্ট যে, দল থেকে ইস্তফা দিয়ে রাজনৈতিক সন্ন্যাস গ্রহণের কথাও ভাবছেন! কিন্তু সেটা একটা কারণেই করতে পারছেন না, পাছে লোকে বলে, শেষ বয়সে আডবাণী বিজেপির ক্ষতি করছেন। একই কারণে এ বারের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে আক্রমণাত্মক হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সংযত ছিলেন তিনি।
মুম্বই বৈঠকে আডবাণী জানান, দেশজুড়ে কংগ্রেস বিরোধিতার হাওয়া তৈরি হলেও বিজেপি তার সুযোগ নিতে পারছে না। বিজেপি কর্মীদের এত হতাশ তিনি কোনও দিন দেখেননি। কিছু দিন আগে দলের কোর কমিটির বৈঠকে মোহন ভাগবত নিজে না থাকলেও ছিলেন সুরেশ সোনি, ভাইয়াজি জোশী, দত্তাত্রেয় হোসাবোলে। সেখানে আডবাণী বলেছিলেন, ১৯৮৪ সালে বিজেপি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। গুজরাত ও অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে মাত্র দু’জন সাংসদ জিতেছিলেন। অটলবিহারী বাজপেয়ী গ্বালিয়র থেকে হেরে গিয়েছিলেন। তবু সে দিন বিজেপি কর্মীরা হতাশ হননি। কর্মীরা তখন বলতেন, ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যুর জন্য এই হাল। আর আজ যখন বিজেপি ন’টি রাজ্যে ক্ষমতায়, লোকসভা ও রাজ্যসভায় দলের এত সাংসদ, তখন কর্মীরা চূড়ান্ত হতাশাগ্রস্ত! এর জন্য দায়ী নেতৃত্বের ভুল।
সুষমা-রাজনাথ সিংহ-মুরলীমনোহর জোশীর মতো নেতাও গডকড়ীর ব্যাপারে ক্ষুব্ধ। জোশী পুরনো ঝগড়া ভুলে গত এক মাসে তিন বার আডবাণীর বাড়িতে গিয়ে দেখা করেছেন। সভাপতি বদলের প্রক্রিয়ায় তিনিও যথেষ্ট সক্রিয়। সঞ্জয় জোশীর কারণে গডকড়ীর বিরোধিতা শুরু করেছিলেন মোদী। নিতিন মোদীকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তা সামলেছেন। কিন্তু মোদী জানেন, জোশী এখনও সঙ্ঘের যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ। তাই সাবধানে পা ফেলতে চাইছেন তিনি।
জেটলি অবশ্য গডকড়ীর পাশেই। কর্মসমিতির বৈঠকেও নিতিনকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। দলের একাংশ চায়, নিতিনকে সভাপতি করে জেটলির নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হোক। কিন্তু এই প্রস্তাবে সুষমা তো বটেই, মোদীও রাজি হবেন না। আবার মোদী যত জাতীয় রাজনীতির মুখ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন, তত ক্ষুব্ধ হচ্ছেন নীতীশ কুমার। এনডিএ-তে না থাকলেও নবীন পট্টনায়ক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মুখ্যমন্ত্রীরাও চান না, এমন কেউ বিজেপির প্রার্থী হোন, যাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেস সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ এনে ভোটের মেরুকরণ করতে পারবে। দলের একাংশ ইতিমধ্যেই এ নিয়ে সঙ্ঘের উপর চাপ দিচ্ছেন। আর এক মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা আবার মোদীর পক্ষে।
অভ্যন্তরীণ এই কলহ-ই বিজেপির ঐক্য প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আডবাণী-গডকড়ী সম্পর্ককে দ্রুত স্বাভাবিক করতে চাইছে আরএসএস। দু’জনের সম্পর্ক ঠিক করতে সক্রিয় সুধীন্দ্র কুলকার্নিও।
সব মিলিয়ে নেতৃত্বের সঙ্কটে বিপন্ন বিজেপি। অতীতে দলের কর্মসমিতির বৈঠকে শুধু বাজপেয়ী, আডবাণী ও দলের সভাপতি থাকতেন। এখন দলের সভাপতি ছাড়াও অনেকে থাকছেন। এই বহুত্ববাদ যত না ঐক্যের বার্তা, তার থেকে বেশি দুর্বল নেতৃত্বের সঙ্কটের ছবি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.