বদলায়নি হাওড়া স্টেশনের ছবি
কাজ করেনি হেল্পলাইন, ঠুঁটো সহায়তা কেন্দ্রও
প্রায় এক বছর আগে কালকা মেল দুর্ঘটনার দৃশ্যই যেন বৃহস্পতিবার ফিরে এল হাওড়া স্টেশনে।
জৌনপুরের কাছে আপ দুন এক্সপ্রেসের শেষের ৬টি কামরা লাইনচ্যুত হয় দুপুরে। সেই খবর হাওড়ায় পৌঁছতেই স্টেশনের পুরনো কমপ্লেক্সের অনুসন্ধান অফিসের সামনে রেলের তরফে ‘মে আই হেল্প ইউ’ নামে একটি অস্থায়ী যাত্রী-সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়। কয়েকটি হেল্প লাইন নম্বরও চালু করা হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দুপুরেই ওই কেন্দ্রের সামনে ভিড় করেন যাত্রীদের আত্মীয়েরা। কিন্তু রাত পর্যন্ত ওই কেন্দ্র অথবা হেল্প লাইন থেকে কোনও সাহায্য পাননি বলেই ওঁদের অভিযোগ। এমনকী, দুপুরে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলের যে চারটি হেল্পলাইন নম্বর ঘোষণা করেন, তার মধ্যে একটি ছাড়া বাকি তিনটির সঙ্গে হেল্পলাইনের কোনও সম্পর্কই নেই। ওই তিনটি নম্বরে ফোন করলে দু’টি নম্বর কাজ করেনি। আর একটি নম্বর পৌঁছেছিল একটি কারখানায়।
এই অব্যবস্থা কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক কর্তার দায়সারা উত্তর, “ঘটনাস্থলটি অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকায়। সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও খুব দুর্বল। তাই তথ্য আসতে দেরি হচ্ছে।”
স্বজনের খোঁজে। হাওড়া স্টেশনের যাত্রী সহায়তা কেন্দ্র। ছবি: রণজিৎ নন্দী
এ দিন দুপুরে ঘটনার খবর পেয়েই ভবানীপুরের কর্মস্থল থেকে হাওড়া স্টেশনে চলে আসেন শিবপুরের রামকৃষ্ণপুর লেনের বাসিন্দা দীনেশ মুখোপাধ্যায়। তাঁর বাবা, মা ও ভাই হরিদ্বার বেড়াতে যাচ্ছিলেন। ট্রেনের এস-৯ কামরার যাত্রী ছিলেন। তিনি বলেন, “রেলের কোনও হেল্প লাইনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তাই এখানে চলে এলাম। সকালে মোগলসরাই থেকে বাবা ফোন করেছিল। তার পরে আর কিছু জানি না।” কিন্তু স্টেশনের যাত্রী সহায়তা কেন্দ্রও তাঁকে বিমুখ করেছে। কারণ, রাত পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে নিহত ও আহতদের কোনও তালিকা পাওয়া যায়নি। হেল্প লাইনের নম্বরও প্রয়োজনের সময় কাজ করেনি।
রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাবা-মা-ভাইয়ের কোনও খোঁজ না পেয়ে স্টেশনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দীনেশবাবু। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে রেল কর্মীরা তাঁকে তুলে নিয়ে যান। প্রাথমিক শুশ্রূষার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একই অবস্থা ভোপালের সঞ্জীব রায়ের। সঞ্জীববাবুর মেয়ে পামেলা দিন কয়েক আগে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে চাকরি পেয়েছেন। ভোপাল থেকে কলকাতায় এসে নতুন চাকরিতে যোগ দিয়েই অফিসের কাজে দেরাদুন যাচ্ছিলেন। সঞ্জীববাবুও কলকাতায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। বিকেলে যাত্রী সহায়তা কেন্দ্রের সামনে হতাহতের তালিকার কথা তুলতেই রেল কর্মীরা একটি বোর্ডের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ওখানে তালিকা টাঙানো রয়েছে। কিন্তু তাতে মৃত বা আহত বোঝা যাবে কী করে? ক্ষুব্ধ সঞ্জীববাবু বলেন, “আমার মেয়েটা এস-৫ কামরার যাত্রী। দুর্ঘটনার পরে ফোন করে বলল, পা আর মাথায় লেগেছে। তার পরে আর যোগাযোগ করতে পারছি না। কেমন আছে, কী ভাবে জানব বলুন তো?”
বাঁকড়া পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা শেখ জাভেদের জামাইবাবু শেখ আজিম এবং পাঁচ ভাগ্নে-ভাগ্নি দেরাদুন যাচ্ছিলেন। যাত্রী সহায়তা কেন্দ্রে কিছু জানতে না পেরে স্টেশনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাগলের মতো ছুটে বেড়াচ্ছিলেন জাভেদ। শেষমেশ রেলের এক কর্তাকে দেখতে পেয়ে জানতে চাইলেন, ‘‘ওখানে যাওয়ার কোনও ট্রেন আছে?” রেল কর্তা বললেন, “রাতের দুন এক্সপ্রেসের সঙ্গে অতিরিক্ত তিনটি কামরা লাগানো হবে। তাতেই আপনি যেতে পারবেন।” জাভেদের মতো আরও কয়েক জনকে নিয়ে এ দিন রাত ৮ টা ৫৫ মিনিটে ওই ট্রেন হাওড়া থেকে ছেড়ে যায়।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.