এই প্রথম ‘কর্মনাশা’ বনধে সাড়া দিল না উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল বন্দর। পুরোদমে চলল সীমান্ত-বাণিজ্য।
বনধ বা ধর্মঘটে সীমান্ত-বাণিজ্য যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার বিরুদ্ধে পেট্রাপোলের ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট মহলগুলির ক্ষোভ জমছিল দীর্ঘদিন ধরেই। কাজ করে এই বনধের বিরোধিতার রাস্তায় তাঁদের প্রথম হাঁটতে দেখা যায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। দেশজোড়া শিল্প ধর্মঘটের দিনে। তবে, সে দিন বন্দরে কাজ হয়েছিল আংশিক। গণ্ডগোলের আশঙ্কা ছিল অনেকের। কিন্তু বৃহস্পতিবার যাবতীয় শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিজেপি-র ডাকা বনধে কাজ করলেন সীমান্ত-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত লোকজন। আমদানি-রফতানি চলল নির্বিঘ্নেই। বনধের দিনে এমন কাজ ‘দৃষ্টান্ত’ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সকলে।
বন্দরের শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত ২০০ ট্রাক পণ্য রফতানি হয়েছে। আমদানি হয়েছে ৫০ ট্রাক পণ্য। যা অন্যান্য দিনের মতোই। দফতরের সহকারী কমিশনার (কার্গো) পদ্মশীল জুমলে বলেন, “২৮ ফেব্রুয়ারি বনধের দিনে বাণিজ্যের কাজ হলেও তা স্বাভাবিক ছিল না। কিছু সমস্যা তৈরি হয়। তবে, এ দিন পরিস্থিতি পুরো স্বাভাবিক ছিল। এটা বাণিজ্যের পক্ষে ভাল লক্ষণ।” সীমান্ত-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ‘পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “এই প্রথম বন্দরে বনধের কোনও প্রভাব পড়ল না। স্বাভাবিক ভাবেই বাণিজ্যের কাজ হয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতেও বনধে বন্দরের কাজকর্ম স্বাভাবিক ভাবেই চলবে।” |
পেট্রাপোলে কাজ স্বাভাবিক। বৃহস্পতিবার ছবিগুলি তুলেছেন পার্থসারথি নন্দী। |
বস্তুত, ওই সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন মহলে বন্দর এলাকাকে বনধের আওতার বাইরে রাখার দাবি জানাচ্ছিল। অতীতে বহু বার দেখা গিয়েছে, কোনও রাজনৈতিক দল বনধ ডাকলেই বনধ হয়ে যেত সীমান্ত-বাণিজ্য। বনধ সমর্থনকারীরা পেট্রাপোল ট্রাক-টার্মিনাসের গুদামের গেটে দলীয় পতাকা লাগিয়ে, মিছিল বা অবস্থান করে ব্যবসা বন্ধ করে দিত বলে অভিযোগ। ফলে, পচনশীল পণ্য, বিশেষ করে মাছের ট্রাক আটকে যেত। ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হত। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, শিল্প ধর্মঘটের দিনে এই অচলাবস্থা কাটাতে উদ্যোগী হয় ‘পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’। দুপুরের দিকে চালু হয় বাণিজ্যের কাজ। সে কথা স্মরণ করে এ দিন কার্তিকবাবু বলেন, “ওই দিন আমরা বনধ সমর্থকদের একটা বার্তা দিতে চেয়েছিলাম। বনধে বাণিজ্য বন্ধ থাকলে দেশের আর্থিক ক্ষতি। ওই দিনের চেষ্টার ফল আজ পাওয়া গেল।”
ওই অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, বিজেপির পক্ষ থেকে বনধ সমর্থন করতে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা মানেনি। বিজেপি-র উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপস মিত্র অবশ্য বলেন, “পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য চলে। তাই আমরা বন্দরের কাজ বন্ধ করতে চাইনি।” বনধে সীমান্ত-বাণিজ্য বনধের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছে আইএনটিউসি। তবে, সিটুর জেলা কমিটির সদস্য শম্ভু রায়চৌধুরী বলেন, “স্বাভাবিক ভাবে আমরা বন্দরে বন্ধ করতে চাই না। কিন্তু অনেক সময়ে শ্রমিকদের স্বার্থে করতে হয়। বনধ আন্দোলনের শেষ অস্ত্র। আমরা পেট্রোলের দামবৃদ্ধির বিরুদ্ধে হলেও এই বনধককে সমর্থন করিনি।” বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ভবিষ্যতেও যাতে বনধে সীমান্ত-বাণিজ্য স্বাভাবিক ভাবে চলে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। |