সদ্য শেষ হওয়া অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধি নেমে এল ৬.৫ শতাংশে। যা প্রায় এক দশকে সবচেয়ে নীচে। জানুয়ারি-মার্চে তা আরও কম, ৫.৩%। বছরে উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধি কমে ২.৫%, শেষ তিন মাসে সরাসরি কমেছে উৎপাদন। পরিকাঠামো শিল্পেও উৎপাদন বৃদ্ধি এপ্রিলে তলানিতে নেমে ২.২%।
অর্থনীতির এই মলিন, অথচ বাস্তব ছবিই ফুটে উঠেছে বৃহস্পতিবার সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অর্গানাইজেশন প্রকাশিত মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধির এই পরিসংখ্যানে। বৃদ্ধির পূর্বাভাসও ছিল সামান্যই বেশি, ৬.৯%। শিল্পমহল এই ঢিমেতালে বৃদ্ধিতে ছেদ টানতে কেন্দ্রের কাছে ‘অবিলম্বে সাহসী পদক্ষেপ’ দাবি করেছে। ‘হতাশ’ অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখ্যপাধ্যায় বৃদ্ধির হারকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলতে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘোষিত হয়েছে ব্যয়সঙ্কোচ কর্মসূচিও।
এ দিকে, বণিকসভা সিআইআইয়ের ডিরেক্টর ডেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে আর দেরি না করে অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনে সাহসী পদক্ষেপ করতে বলেছেন। বিশ্ব মন্দার আঁচ থেকে বাঁচতে ব্যবস্থা নিতে বলেছে ফিকি। লগ্নি বাড়াতে আর্থিক সংস্কারের উপর জোর দিয়েছে অ্যাসোচ্যাম। |
উৎরাই |
আর্থিক বৃদ্ধি কমে
পরিকাঠামোয় বৃদ্ধি কমে
সেনসেক্স কমলো
টাকা ছুঁল রেকর্ড তলানি
(শেষে ১৬ পয়সা বাড়ল টাকা) |
৬.৫%
২.২%
৯৪ পয়েন্ট
৫৬.৫২
১ ডলার= ৫৬.০৮ টাকা |
|
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অর্থমন্ত্রীর আশ্বাস ও ব্যয়সঙ্কোচ কর্মসূচিই এ দিন ধরাশায়ী হওয়ার কবল থেকে বাঁচিয়েছে শেয়ার বাজারকে। বৃদ্ধির পরিংখ্যান প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পতনের ধাক্কা এসে পড়ে বাজারে। সেনসেক্স ১৪০ পয়েন্ট পড়ে নেমে যায় ১৬,১৬৯ পয়েন্টে। তার জেরেই ডলারে টাকার দামও ফের পতনে নজির গড়ে নেমে যায় ৫৬.৫২-তে। পরে অবশ্য ঘুরে দাঁড়ায় টাকা। মুনাফা ঘরে তোলার জন্য রফতানিকারীদের ডলার বিক্রির জেরে তা দিনের শেষে বেড়ে যায় ১৬ পয়সা। ফলে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৫৬.০৮ টাকা। সেনসেক্সও দিনের শেষে পড়ে মাত্র ৯৪ পয়েন্ট। মে মাস জুড়ে অবশ্য ডলারে টাকা পড়েছে ৬.৩৪%। ছ’মাসে যা সবচেয়ে বেশি।
গত ২০১১-’১২ অর্থবর্ষে ৬.৫% আর্থিক বৃদ্ধি ২০০২-’০৩ সালের ৪ শতাংশের পর সবচেয়ে কম। আগের দু’টি অর্থবর্ষ ২০০৯-’১০ ও ২০১০-’১১-এ বৃদ্ধির হার ছিল ৮.৪%। এমনকী বিশ্ব-মন্দা যে বছর ভারতের অর্থনীতির উপর দীর্ঘ ছায়া ফেলেছিল, সেই ২০০৮-’০৯ সালেও বৃদ্ধি ছিল ৬.৭%। গত অর্থবর্ষে কৃষি উৎপাদনও বেড়েছে মাত্র ২.৮% (আগের বছরের হার ৭%)। সরাসরি ০.৯% সঙ্কুচিত হয়েছে খনন ক্ষেত্রে উৎপাদন। অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসের ছবি আরও ঘোরালো। আর্থিক বৃদ্ধি ৯.২% থেকে নেমে এসেছে ৫.৩ শতাংশে। উৎপাদন শিল্প সরাসরি সঙ্কুচিত হয়েছে ০.৩%। (আগের বারের বৃদ্ধি ৭.৩%)। কৃষি উৎপাদন বেড়েছে ১.৭% (আগের বছরের বৃদ্ধি ৭.৫%)। পাশাপাশি, এপ্রিলে ৮টি পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি মাত্র ২.২%। যা সার্বিক ভাবে শিল্প বৃদ্ধির উপর ছাপ ফেলবে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। |