প্রেক্ষাগৃহের বেশিরভাগ চেয়ারই ভাঙা। ভেঙে পড়েছে মঞ্চের সামনের পাটাতন। এমন কী নেই কোনও ড্রপ সিনও। এমনই অবস্থা সিউড়ির রবীন্দ্র সদনের। এই অবস্থাতেই জেলা সদর সিউড়ির একমাত্র মঞ্চ ‘রবীন্দ্র সদন’ ব্যবহার করতে হচ্ছে সাংস্কৃতিকর্মী, নাট্যকর্মীদের।
প্রেক্ষাগৃহের হাল ফেরানোর জন্য ২০১০-১১ আর্থিক বছরে রাজ্যসভার সিপিএম সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি ১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছিলেন। সাংস্কৃতিক কর্মীদের অভিযোগ, সেই টাকা পড়ে রয়েছে জেলাশাসকের তহবিলে। অথচ শুরু হয়নি সংস্কারের কাজ। এর ফলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এমন কী সরকারি-বেসরকারি সভা-সমিতির কাজও বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রশাসন এ বিষয়ে কোনও তৎপরতা দেখাচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষজনেরও। |
সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষজনের দাবি, দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া ও রামপুরহাটে সাংস্কৃতিক বিনোদনের জন্য উচ্চমানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ সদর সিউড়িতে তা নেই। এমন কী সিউড়িতে রবীন্দ্র সদন ছাড়া নাটক বা অন্য কোনও বড় মাপের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করার তেমন কোনও জায়গা নেই। এটা সাংস্কৃতিক কর্মী ও গোষ্ঠীদের দাবি, দিন দিন রবীন্দ্র সদনের অবস্থার উন্নতির বদলে অবনতিই হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গত রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক এই রাজ্যের সমস্ত রবীন্দ্র সদন ও রবীন্দ্র ভবন সংস্কারের জন্য উদ্যোগী হয়েছিল। সেই মর্মে প্রতি জেলার জেলাশাসক ও জেলা পরিষদের সভাধিপতিদের জানানোও হয়েছিল। সাংস্কৃতিক কর্মীদের অভিযোগ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায় এবং তৎকালীন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন সংস্কারের জন্য এজেন্সি নির্বাচন করতেই দীর্ঘ সময় পার করে দিয়েছেন। তাঁদের আরও অভিযোগ, জেলা পরিষদের এই ঢিলেমিতে রবীন্দ্র সদন সংস্কার খাতে বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। এ ছাড়া, ২০১০-১১ আর্থিক বছরে সিপিএম সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি যে ১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছিলেন, সেই টাকাও কোনও কাজে লাগানো হয়নি।
এজেন্সি নিয়োগে ‘ব্যর্থতা’ প্রসঙ্গে অন্নপূর্ণাদেবীর দাবি, “আমরা অনেক চেষ্টা করেও ভাল এজেন্সি পাইনি।” এ দিকে জেলাশাসক জগদীশ প্রসাদ মিনার দাবি, “ওই প্রেক্ষাগৃহ সংস্কারের জন্য জেলা পূর্ত দফতরকে গত ডিসেম্বর মাসে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।” পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সলিল মুখোপাধ্যায় বলেন, “রবীন্দ্র সদন সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সবে মাত্র এস্টিমেট তৈরি করা হয়েছে।” কিন্তু নাট্য ও সংস্কৃতি কর্মীদের প্রশ্ন, জেলা সদরের এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাগৃহের হাল কবে ফিরবে? প্রশাসনই বা বিষয়টি নিয়ে কেনও এত ঢিমেতালে এগোচ্ছে?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে ২০০১ সালেও রবীন্দ্র সদন সংস্কারের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। ওই সময় জেলাশাসক ছিলেন সঞ্জয়কৃষ্ণ থাড়। তাঁর চেষ্টায় এবং রাজ্যসভার সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায় ও স্থানীয় সাংসদ রামচন্দ্র ডোমের সাংসদ কোটা থেকে ৮২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওই প্রেক্ষাগৃহ সংস্কার করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন প্রবীণ নাট্যকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীদের অভিযোগ, সংস্কারের পর নানা টালবাহানায় পরবর্তী তিন বছর ওই প্রেক্ষাগৃহ বনধ ছিল। তাঁদের ক্ষোভ, রবীন্দ্র সদনের ওই সংস্কারে নাট্যকর্মীদের পরামর্শ বা মতামত কোনও কিছুই নেওয়া হয়নি। ওই প্রবীণ সংস্কৃতিকর্মীদের দাবি, এ বারের সংস্কারে সাংস্কৃতিককর্মী, বিশেষত নাট্যকর্মীদের পরামর্শ নেওয়া হোক। কারণ ওই প্রেক্ষাগৃহে কী কী প্রয়োজন সে বিষয়ে যাঁরা তা ব্যবহার করেন তাঁরাই সব থেকে ভাল বলতে পারবেন। সিউড়ির প্রবীণ নাট্যকর্মী ও নির্দেশক রজ সাহা, বাবুন চক্রবর্তীদের দাবি, “প্রয়োজনে কলকাতা থেকে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এসে রবীন্দ্র সদন সংস্কারে মতামত নেওয়া হোক।” জেলাশাসক জগদীশ প্রসাদ মিনা তাঁদের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। জেলা সদর সিউড়ির ঐতিহ্যশালী রবীন্দ্র সদন কবে একটি পূর্ণাঙ্গ পেশাদার এবং সবদিক থেকে আধুনিক মঞ্চ হিসেবে গড়ে উঠবে সে প্রত্যাশায় দিন গুনছেন জেলার সংস্কৃতিপ্রেমীরা। |