জেলাশাসকের নির্দেশ নেই। সতর্কীকরণ বোর্ডেও কোথাও লেখা নেই।
তবু যাত্রিবাহী গাড়ি আটকানোয় দুর্ভোগে পড়লেন সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনে বোলপুর-সিউড়ি রাস্তায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জরুরি পরিষেবা ও দু’চাকা গাড়ি বাদ দিয়ে সমস্ত রকমের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। এর ফলে নিত্যযাত্রী থেকে বোলপুর-শান্তিনিকেতনে আসা পর্যটকরা চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েন। পর্যটক ও বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ ভাবে আগে থেকে কোনও ঘোষণা না করে পুলিশ পথ আটকানোয় অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়েছে।
বাসিন্দারা জানান, এ দিন শান্তিনিকেতনে ঢোকার মুখে একটি বেসরকারি লজের কাছে সবরকমের চার চাকা গাড়ি আটকে দেন বোলপুর থানার আইসি কমল বৈরাগ্য। অন্য দিকে, শ্যামবাটী ও পোস্ট অফিস মোড় থেকে শ্রীনিকেতন রাস্তায় সঙ্গীত ভবনের কাছে গাড়ি চলাচল সংক্রান্ত ‘নির্দেশ’ কার্যকর করতে নেমে পড়েন শান্তিনিকেতনের আইসি পার্থসারথি মণ্ডল। |
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে ওই দুই পুলিশকর্তা দাবি করলেও জেলাশাসক বলেন, “যাত্রিবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে কোনও প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা নেই। শুধুমাত্র পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রেই ওই নির্দেশ জারি হয়েছে।” স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে খোদ জেলাশাসক এমন কোনও নির্দেশ দেওয়া হয় নি বলে জানালেও বোলপুরে বৃহস্পতিবার সাধারণ মানুষ থেকে বহুদূর থেকে গাড়ি নিয়ে আসা পর্যটক সারাদিন ধরে যে সমস্যার মুখে পড়লেন, তার দায় কে নেবে?
জাম্বুনির বাসিন্দা শ্যামল দত্ত সপরিবারে বেরিয়েছিলেন একটি চার চাকার গাড়িতে। শান্তিনিকেতন রাস্তায় একটি বেসরকারি লজের সামনে সকাল ১১টা নাগাদ পুলিশ তাঁদের গাড়ি আটকে দেয়। শ্যামলবাবুর ক্ষোভ, “নিয়মিত রোড ট্যাক্স দিয়েও হেনস্থা হতে হচ্ছে। জনতার রাস্তায় কোনও পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পুলিশ গাড়ি আটকে দিচ্ছে।” অসুস্থ রোগী নিয়ে গাড়ি করে বোলপুরে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে আসছিলেন গোয়ালপাড়ার সুদীপ্ত মণ্ডল। তাঁর গাড়িও পুলিশ আটকে দেয়। তাঁর অভিযোগ, “অসুস্থ রোগী নিয়ে যাচ্ছি জানানো সত্ত্বেও আমাদের যেতে দেওয়া হয়নি।” |
কলকাতা থেকে দলবল নিয়ে গাড়ি করে বোলপুরে একটি শু্যটিংয়ের কাজে এসেছিলেন ‘কয়েকটি মেয়ের গল্প’-এর চিত্রগ্রাহক প্রেমেন্দু বিকাশ চাকি। পুলিশের নেওয়া ব্যবস্থায় আটকে পড়েন তাঁরাও। এর ফলে পর্যটক থেকে স্থানীয় বাসিন্দা সবার মধ্যেই এ দিন ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ওই রাস্তার উপর নির্ভরশীল প্রায় ৪০টি গ্রামের বাসিন্দাদের আশঙ্কা, আগামী দিনে ওই রাস্তা দিয়ে বেসরকারি যাত্রীবাহী বাসও আটকে দেওয়া হবে।
২৫ মে জারি করা তাঁর প্রথম নির্দেশে ‘ভুল’ করে যাত্রিবাহী গাড়িও উল্লেখ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। তাঁর দাবি, ওই নির্দেশ আসলে শুধুমাত্র পণ্যবাহী যানবাহনের জন্যই জারি করা হয়েছিল। ২৯ মে সংশোধিত নির্দেশ জারি করা হেয়েছে। এর পরেও ওই নির্দেশকে ঘিরে কেনও বিভ্রান্তি তৈরি হল, সে বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে সদুত্তর মেলেনি।
সব মিলিয়ে এলাকার মানুষ এবং পর্যটকদের মধ্যে ক্ষোভ ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। জেলার পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা অবশ্য বিভ্রান্তি মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই রাস্তায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শুধুমাত্র পণ্যবাহী যান চলাচল বনধ থাকবে।” |