মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের অন্দরে আগেই ‘বার্তা’ দিয়েছিলেন। এবার ভাঙড় কলেজে শিক্ষিকা নিগ্রহের অভিযোগে এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলামকে শো-কজ করল তৃণমূল। সে সংক্রান্ত চিঠি শুক্রবারই আরাবুলকে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। ভাঙড়ের আর এক দলীয় নেতা জাহাঙ্গির খান চৌধুরীকেও শো-কজ করেছে দল। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি জমি দখল-সহ নানা ‘অনিয়মে’ জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে দলের কাছে। অভিযুক্ত দুই নেতারই অবশ্য দাবি, তাঁরা শো-কজ নিয়ে কিছু জানেন না।
জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “১৫ দিনের মধ্যে দু’জনের কাছ থেকে জবাব চাওয়া হয়েছে।” ওই নেতাই জানান, জেলা তৃণমূল চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহন জাটুয়াই আরাবুলদের শো-কজ করেছেন। জাটুয়া অবশ্য বলেন, “আমি অনেক কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তাই এ ব্যাপারে কিছু করেছি কি না মনে পড়ছে না।”
গত ২৪ এপ্রিল ভাঙড় কলেজে শিক্ষক সংগঠন ‘ওয়েবকুটা’-র নির্বাচনে প্রতিনিধি মনোনয়ন নিয়ে মতপার্থক্যের জেরে এক শিক্ষিকাকে জলের জগ ছুড়ে মারার অভিযোগ ওঠে আরাবুলের বিরুদ্ধে। ঘটনার জেরে শিক্ষাঙ্গনে ‘রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ’ কতটা কাম্য তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে সমাজের নানা স্তরে। জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার দাবি, “সেই পরিস্থিতিতে শিক্ষিকা নিগ্রহ প্রসঙ্গে বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের কাছে ‘উত্তেজক মন্তব্য’ করেন আরাবুল। তাতে রাজ্যে আলোড়ন হয়। ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই আরাবুলকে শো-কজ করা হয়।” তৃণমূল সূত্রের খবর, শুধু ‘শিক্ষিকা নিগ্রহ’ নয়, নানা সময়ে আরাবুলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ জমা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা-সহ জেলা তৃণমূলের বিভিন্ন নেতার কাছে। শিক্ষিকা-নিগ্রহের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুরনো অভিযোগগুলি নিয়েও দলের ভিতরে নাড়াচাড়া হয়েছে। তবে আরাবুলের দাবি, “সবই বাজে কথা।”
অভিযোগ উঠেছে ভাঙড়-১ ব্লকের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি জাহাঙ্গিরের নামেও। মাস আটেক আগে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার তাড়দা, আন্দুল-গড়িয়া ও কাপাসআইট এলাকায় দলীয় পতাকা পুঁতে খাসজমি দখল করে বৈধ পাট্টাদারদের উচ্ছেদ করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। সেই সময় জাহাঙ্গির ব্লক সভাপতি পদে বহাল ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতার হস্তক্ষেপে ওই জমি থেকে তৃণমূলের পতাকা পরে তুলে নেওয়া হয় এবং চাষিদের জমি ফেরত দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পরেই দলের ওই পদ থেকে অপসারিত হন জাহাঙ্গির। তা ছাড়াও, জাহাঙ্গিরের বিরুদ্ধে সুন্দিয়া এলাকায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জোর করে জমি দখল, জমি কেনাবেচা এবং সম্প্রতি দলের নামে চাঁদার বিল তৈরি করে টাকা তোলার একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে তৃণমূল নেতাদের কাছে। জাহাঙ্গির অবশ্য বলছেন, “আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগেরই কোনও ভিত্তি নেই।” |