সিংহভাগ শহরবাসী যেখানে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বর্জন করেছেন, সেখানে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী ফের তা চালু করানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গোপন সূত্রে সেই খবর পেয়ে সোমবার অভিযানে নামে শিলিগুড়ি পুরসভা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। কিন্তু, বিধান মার্কেটে অভিযানে নেমেই ব্যবসায়ীদের একাংশের বাধা মুখে পড়তে হয় পুরসভা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্মীদের। ওই সময়ে অভিযানকারীদের দিকে পচা শাক-সব্জি, টম্যাটো ছুঁড়ে মারা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পরে পুরসভার তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “সরকারি কাজে বাধা দেওয়া গুরুতর অপরাধ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের তরফে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। পরে অভিযানের সময় যাতে পুলিশ থাকে সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলা হবে।” প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ রুখতে অভিযানে বাধা দেওয়ার ঘটনার নিন্দা করেছেন বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি। সংগঠনের সভাপতি বাদল গুহ বলেন, “প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বিধান মার্কেটে হবে না। এটা আমরাও বারবার বলেছি। যাঁরা অভিযানে বাধা দিয়েছেন, তাদের সতর্ক করা হবে। ফের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ চালুর চেষ্টার জন্য ভবিষ্যতে বিধান মার্কেটের ব্যবসায়ীদের যাতে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে না-হয়, সে দিকে সকলকেই খেয়াল রাখতে হবে।” শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত করতে বছর দু’য়েক আগেই উদ্যোগী হয়েছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। তাতে সফলও হন তাঁরা। রাজ্যের মধ্যে শিলিগুড়ি শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর হিসাবে ঘোষণা করা হয়। শহরের সেই সুনাম নষ্ট করতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সচেষ্ট হলে তা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলে মেয়র সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। পুরসভা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের কর্মী, আধিকারিকদের উপর টম্যাটো, পচা ফল, সব্জি ছুড়ে মারার ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন পরিবেশ প্রেমী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্মকর্তারাও। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “রাজ্যের মধ্যে একমাত্র শিলিগুড়ি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর বলে সুনাম অর্জন করেছে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য তা নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। পুরসভা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কেই ওই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ নিলে তাদেরও ফাইন করা উচিত।” উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর ব্যবসায়ী সংগঠন ফেডারেশন অব চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ,নর্থ বেঙ্গল (ফোসিন)-এর তরফে এ দিনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “পুরসভার তরফে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সময় দিয়ে তার পরেই ক্যারিব্যাগ বন্ধ করা হয়েছে। ফের তা ফেরাতে কেউ চেষ্টা করলে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।” বিধান মার্কেটের যে ব্যবসায়ীরা এ দিন পুরসভা এবং পর্ষদের কর্মীদের বাধা দেন বলে অভিযোগ তাঁদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন টেবিল টেনিস তারকা মান্তু ঘোষ। তিনি বলেন, “প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। সকলকে সেটা বুঝতে হবে। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর হিসাবে শিলিগুড়ির মুকুটে যে পালক যুক্ত হয়েছে তা খুলে ফেলতে কেউ চেষ্টা করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” |