পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. বিশ্বরঞ্জন শতপথীর লেখা একটি চিঠি (২৯-৩), যাতে তিনি আগে প্রকাশিত (১৪-২) পশ্চিমবঙ্গে শিশুমৃত্যু সম্বন্ধে স্বাতী ভট্টাচার্যের একটি নিবন্ধের সমালোচনা করেছেন। আশা করব, ডা. শতপথীর এই প্রতিবেদনটি পুরো স্বাস্থ্য দফতরের (চিকিৎসা শিক্ষা দফতর-সহ) বক্তব্য। মুশকিল হচ্ছে, ডা. শতপথী শিশুমৃত্যু সম্বন্ধীয় মূলত তথ্য ও তত্ত্বগত আলোচনার সমালোচনা করেছেন। কিন্তু ওই একই দিনে (১৪-২) প্রকাশিত ডা. কমলেন্দু চক্রবর্তীর ওই একই বিষয়ের উপর সরেজমিন তদন্তপ্রসূত নিবন্ধ সম্বন্ধে নীরব থেকেছেন।
সত্যি, শুধু ঝাঁ চকচকে হাসপাতাল তৈরি করলেই শিশুমৃত্যু কমবে না। কিন্তু পূর্বতন চিকিৎসার জায়গাগুলিকে গোয়ালঘরে পরিণত করে কিছু গালভরা কথার সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিলেও কিন্তু শিশুমৃত্যু কমার আশা কম।
মালদা মেডিক্যাল কলেজকে জেলা হাসপাতাল বলায় স্বাস্থ্য দফতর নাকি ‘হকচকিয়ে’ গেছে। |
কিন্তু সাইন বোর্ড বদলের মাধ্যমে মহকুমা হাসপাতালগুলিকে জেলা হাসপাতালে আর জেলা হাসপাতালগুলিকে মেডিক্যাল কলেজে বদলে যেতে দেখে যে সাধারণ মানুষ নিয়ত ‘হকচকিয়ে’ যাচ্ছেন! প্রতিবেশী রাজ্য থেকে রোগী আসে বলে মালদা হাসপাতাল, থুড়ি, মেডিক্যাল কলেজ ‘সর্বোচ্চ স্তরের রেফারেল’ হাসপাতাল! এমন সংজ্ঞা জীবনে শুনিনি। ডা. শতপথীর কি জানা নেই, কিছু দিন আগে পর্যন্ত এই রাজ্যের সীমান্তবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও পাশের রাজ্যগুলি এমনকী রাষ্ট্র থেকে রোগীরা আসতেন সুচিকিৎসার আশায়? এখন অবশ্য মেডিক্যাল কলেজ থেকে সামান্য ‘সাবডিউরাল হেমাটোমা’র চিকিৎসা করাতে এই রাজ্যের নাগরিককে চলে যেতে হয় পাশের রাজ্যের হাসপাতালে।
দেরিতে হলেও স্বাস্থ্য দফতরের মনে হয়েছে, প্রাথমিক স্তরের হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোর উন্নতি না-ঘটালে মাধ্যমিক বা তৃতীয় স্তরের হাসপাতালগুলির উপর চাপ কমানো যাবে না। কিন্তু পরিকাঠামো ঠিকঠাক হয়ে গেল কী ভাবে? চিকিৎসক-নার্স-চতুর্থ শ্রেণির কমর্চারীর শূন্যপদ পূরণ না-করে, প্রাথমিক স্তরের হাসপাতাল-বাড়িগুলির বিভিন্ন প্রকোষ্ঠ ঠিক ভাবে সংস্কার ও ব্যবহারযোগ্য না-করে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ভেঙে পড়া কর্মচারী আবাসনের কোনও সুব্যবস্থা না-করেই কী জাদুবলে এটা সম্ভব হল? না কি কয়েকটি হাসপাতালকে ঠিকঠাক রেখে অনুসন্ধানকারী দলকে কুমিরছানা দেখানো?
সরকারি হাসপাতালগুলিতে ভিড় দেখে তাদের উপর মানুষের আস্থার বহর পরিমাপ কি স্বাস্থ্য অধিকর্তা জেনেবুঝে বলেছেন? মফস্সলের এই গরিব-ভুখা মানুষগুলো চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে না-গিয়ে কোথায় যাবে বলুন তো? হাতুড়ে ডাক্তারের খরচা দেওয়ার ক্ষমতাও আর নেই। সে জন্যই তো সাধারণ মানুষের স্বার্থে এই সব সরকারি হাসপাতালগুলিকে উন্নত করা প্রয়োজন। ব্যবসায়িক স্বার্থে গজিয়ে ওঠা বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য। তা না করে সরকারি হাসপাতালগুলিকে ঝাঁ চকচকে পি পি পি-র হাতে তুলে দিয়ে কী বার্তা দিতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর? ঝাঁ চকচকে পরিষেবা না অধিকতর ন্যূনতম বৈজ্ঞানিক পরিষেবা? কিন্তু তার মানে কী? এন আই সি ইউ (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট কেয়ার ইউনিট), এন বি এস ইউ (নিউ বর্ন স্টেবিলাইজেশন ইউনিট) , এস এন সি ইউ (সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট) বা এন বি সি সি (নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট)-এর সংখ্যা বাড়িয়ে চলা? সে তো ওই ঝাঁ চকচকে হাসপাতালের মতোই ব্যাপার হল। মাননীয় স্বাস্থ্য অধিকর্তা, আপনি কি দয়া করে এই রাজ্যের লেবার রুমগুলির পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক আলোর বন্দোবস্ত করবেন? খালি গালভরা কিছু নাম দিয়ে অসুস্থ শিশুর চিকিৎসা করা যাবে? কারা চালাবেন সেগুলি? ‘সদ্যোজাতদের আলাদা রাখার উদ্যোগ’ কে নিতে বলল? এটা তো জানা কথা, মোট শিশুমৃত্যুর শতকরা ৪০ ভাগ ঘটে জন্মের প্রথম সাত দিনের মধ্যে। তাই নবজাতকের যত্ন নেওয়ার যে সাধারণ নির্দেশিকা আছে, সেগুলি যথাযথ পালন করেই শিশুমৃত্যু রোধে অনেক দূর এগোনো যেত!
স্বাস্থ্য অধিকর্তার স্মরণে থাকতে পারে, ১৯৯০-২০০২ সাল জুড়ে পশ্চিমবঙ্গে ইউনিসেফ, এন এন এফ এবং স্বাস্থ্য দফতরের যৌথ উদ্যোগে সারা রাজ্য জুড়ে ‘নবজাতকের জরুরি প্রাথমিক প্রয়োজনীয় যত্ন’-এর প্রশিক্ষণ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিটি হাসপাতালে গিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দরকার ছিল সামান্য কিছু কমদামি উপকরণ, সামান্য সাধারণ জ্ঞান আর অনেকখানি সদিচ্ছা। কী হয়েছিল সেই প্রশিক্ষণের?
স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চিকিৎসা বা টীকাকরণ ছাড়া তো স্বাস্থ্য দফতরের হাতে আর কিছু নেই। তাই পরিকল্পিত প্রচেষ্টা করতে গেলে, সর্বাগ্রে যেটা প্রয়োজন, স্বাস্থ্যের অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সঙ্গে একত্রে পরিকল্পনার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া আর চাপে পড়ে অসম্ভব জেনেও সাইন বোর্ড-সর্বস্ব কোনও পরিকল্পনা না-নেওয়া।
সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, কলকাতা
|
খবরে প্রকাশ, শ্রম মন্ত্রকের দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী শ্রমমন্ত্রীকে কারণ দর্শাতে বলেছেন। ২০১০-এর জুলাই মাসে বিভিন্ন জেলায় শ্রম দফতরের ‘লেবার ওয়েলফেয়ার ফেসিলিটেশন সেন্টার’-এ নিয়োগের জন্য কম্পিউটার জানা করণিকের শূন্য পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আবেদনকারীদের জেলা শাসকের দফতরে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। দু’বছর পেরিয়ে গেল, নতুন সরকারের বর্ষপূর্তিও হল। আজ পর্যন্ত পরীক্ষার ডাক আসেনি।
অরিন্দম ঘোষ। অরবিন্দ নগর, বাঁকুড়া |