|
|
|
|
ভোটের পালে টানছেন সহানুভূতির হাওয়া |
জগন্মোহনের জেলে আশঙ্কায় কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রাজ্যের ১৮টি বিধানসভা কেন্দ্র ও একটি লোকসভা আসনে উপনির্বাচন ১২ জুন। আর তার আগের দিন পর্যন্ত জেল হাজতেই থাকতে হবে জগন্মোহন রেড্ডিকে। তার পরেও জামিন পাবেন কি না সেটা নির্ভর করছে ১১ জুনের শুনানির উপর। অর্থাৎ অন্ধ্রপ্রদেশের এই উপনিবার্চনে প্রচারে বেরোতে পারবেন না ওয়াইএসআর কংগ্রেসের নেতা জগন্মোহন। তাঁদের অভিযোগ, কংগ্রেস রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই সিবিআইকে দিয়ে এ সব করাচ্ছে।
কংগ্রেস শিবিরে আশঙ্কা, জগনের গ্রেফতারে তাঁর প্রতি সমর্থনের হাওয়া বেড়ে গেলে আখেরে ক্ষতি কংগ্রেসেরই। ফলে অন্ধ্রের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথনির্দেশে আজকের ঘটনা তাই আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
হিসেব বহির্ভূত সম্পত্তি মামলায় অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস রাজশেখর রেড্ডির পুত্রকে ১১ জুন পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। জগন্মোহনকে হেফাজতে চেয়ে সিবিআইয়ের আইনজীবী অশোক ভান আজ জানান, টানা ৩ দিন জেরা করেও তাঁরা সন্তুষ্ট নন। তাঁর বিরুদ্ধে হাওয়ালা কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সেই সংক্রান্ত কিছু নথিও আছে সিবিআইয়ের কাছে। তাই তাঁকে আরও জেরা করা জরুরি। যদিও জগন্মোহনের আইনজীবীর বক্তব্য, এই তরুণ রাজনীতিককে ভোটপ্রচার থেকে বিরত রাখতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সিবিআই।
প্রতারণা ও ষড়যন্ত্র-সহ ফৌজদারি দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি দমন আইনের একাধিক ধারায় আজ জগনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। |
 |
আদালত থেকে জেলের পথে। সোমবার। ছবি: এ পি। |
তাদের আইনজীবী জানান, জগন্মোহনের ব্যবসায় মোট ১,২৩৪ কোটি টাকার এমন সব বিনিয়োগ হয়েছে, যার উৎস নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আরও তথ্য জানতে মরিশাস ও লুক্সেমবুর্গে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া রাজশেখর জমানায় মাত্র চার বছরে জগনের ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকার ওপর বেড়েছে। রাজশেখর জমানায় বাবার প্রভাব খাটিয়ে বহু সংস্থাকে সস্তায় জমি পাইয়ে দিয়েছেন জগন। পরিবর্তে তাঁরা জগনের সংস্থায় বিনিয়োগ করেছেন। বেনামে বিদেশেও জগন্মোহনের ব্যবসা রয়েছে বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ।
রাজশেখর মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই রাজ্যে বিরোধী দলনেতা চন্দ্রবাবু নায়ডু বারবার সিবিআই তদন্তের দাবি করেছিলেন জগন্মোহনের রাতারাতি ‘ধনকুবের’ হয়ে ওঠা নিয়ে। তখন রাজশেখরের পাশে দাঁড়িয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু জগন্মোহন দল ছাড়ার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু করে কংগ্রেস। এক টিডিপি নেতার আবেদনের ভিত্তিতে জগনের বিরুদ্ধে আদালত সম্প্রতি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই তদন্তের সূত্রেই কাল জগন্মোহনকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।
উপনির্বাচনের মুখে এই গ্রেফতার নিয়ে জগন্মোহন, তাঁর মা বিজয়লক্ষ্মী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা সনিয়া গাঁধী-সহ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলছেন। রাজনৈতিক ভাবেও কংগ্রেসের দিকে আঙুল উঠছে। হায়দরাবাদ-সহ অন্ধ্র জুড়ে যে ভাবে জগন্মোহনের সমর্থকরা প্রতিবাদ ধর্নায় নেমে পড়েছেন, তাতে কংগ্রেস কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছে। বিজয়লক্ষ্মী আজ এই অভিযোগও করেন যে, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাজশেখরের মৃত্যু ছিল ষড়যন্ত্র। স্বামীকে মারার পর এখন তাঁর ছেলেকে বন্দি রাখার চেষ্টা হচ্ছে। বিজেপি-র অভিযোগ, আর্থিক অনিয়মে জগন্মোহনের সঙ্গী ছিলেন, এমন ৬ জন এখনও রাজ্যে মন্ত্রী। সিবিআই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় এটা পরিষ্কার যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই কংগ্রেস এ সব করাচ্ছে।
চাপের মুখে অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী কিরণকুমার রেড্ডিকে আজ সাংবাদিক বৈঠক করে বলতে হয়েছে, “সিবিআই তদন্তের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও সম্পর্ক নেই। জগন্মোহনের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে সিবিআই।” জগন্মোহন ও তাঁর প্রয়াত পিতার মর্যাদা রাজনৈতিক ভাবে লঘু করতে কিরণকুমার এ-ও বলেন যে, “রাজশেখর রাজনৈতিক উচ্চতা পেয়েছিলেন সনিয়া ও রাজীব গাঁধীর জন্যই। তাঁরাই সংগঠনের দায়িত্ব দিয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলেন তাঁকে। কেউই দলের উর্ধ্বে নন। তা ছাড়া, রাজশেখরের কপ্টার দুর্ঘটনার তদন্ত করেছিল রাজ্য সরকার। তাঁর পরিবার চাইলে সরকার ফের তদন্ত করতে পারে। রাজনৈতিক ভাবে সহানভূতি কুড়ানোর জন্য তাঁর পরিবার যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা ঠিক নয়।”
সিবিআই তদন্ত থেকে দূরত্ব রাখতে চাইছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও। তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, জগন্মোহনের গ্রেফতারে কংগ্রেসের ভাল রকম ক্ষতি হতে পারে ভোটে। এমনিতেই প্রাক-নির্বাচনী সমীক্ষাগুলি জগন্মোহনকে এগিয়ে রেখেছে। তিনি যে মানুষের সহানুভূতি পাচ্ছেন তা-ও ইতিমধ্যে স্পষ্ট। তবে কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, জগন্মোহন দীর্ঘদিন জেলে থাকলে দীর্ঘমেয়াদে লাভ হতে পারে। প্রথমত, কংগ্রেস ছেড়ে তখন আর কেউ তাঁর শিবিরে ভিড়বেন না। দ্বিতীয়ত, জগন্মোহনও তাঁর দলকে সংগঠিত করার সুযোগ পাবে না।
যদিও জগন-ঘনিষ্ঠরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদেও কংগ্রেসের কোনও সুবিধা হবে না। রাজশেখরের রক্ত রয়েছে যাঁর দেহে, তিনি কি এতই বোকা! কংগ্রেসের এই খেলা বাচ্চা ছেলেও বুঝতে পারবে। আর তাই মা বিজয়লক্ষ্মীকে পুরোদস্তুর রাজনীতির ময়দানে নিয়ে এসেছেন জগন্মোহন। রাজশেখরের মৃত্যুর পর তাঁর জন্মভিটে পুলিভেন্ডুলা আসন থেকে বিধায়ক হন স্ত্রী বিজয়লক্ষ্মী। জগনের সঙ্গে তিনিও কংগ্রেস ছাড়েন। পরে ফের পুলিভেন্ডুলায় উপনির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জিতেছেন বিজয়লক্ষ্মী। গত কাল জগন্মোহন গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তাঁর মা প্রথমে হায়দরাবাদে পরে নিজের বাড়ির সামনে ধর্নায় বসেছেন। জগন্মোহনের বোন শর্মিলাও সরব গত কালের গ্রেফতারি নিয়ে। কংগ্রেসের এক সাংসদের কথায়, আসলে রাজশেখরের ছেলের জনপ্রিয়তা তাঁর বাবার কারণেই। তাঁর রাজনৈতিক ঐতিহ্যকে পুঁজি করেই যদি গোটা পরিবার পুরোদস্তুর রাজনীতিতে নেমে পড়ে, তবে কংগ্রেসের বিপদ বাড়বে বই কমবে না।
তবে এ সবই দাবি, পাল্টা দাবি। রাজশেখর পরিবারের রাজনৈতিক দাপট কতটা অটুট রয়েছে অন্ধ্রে, ১২ জুন তার লিটমাস পরীক্ষা। |
|
|
 |
|
|